২০০৩ সাল থেকে ২০২৪ টানা ২১ বছর এক বার পৌরসভা আর তিন দফায় সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অপ্রতিরোধ্য ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভী কে পরাজিত করতে শাসক দলের নেতাদের রক্তচক্ষু কে উপেক্ষা করে ভোটারগণ নির্ভয়ে স্বচ্ছ ভোটে নির্বাচিত করেছেন।
গেলো কুঁড়ি বছর মেয়র আইভীকে নানাভাবে হুমকি ধমকির উপর দিয়েই এগিয়ে চলেছেন নির্ভয়ে ।
নিজ দলের প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমান বারংবার হুমকি, ন্যাক্কারজনক কর্মকান্ড ছাড়াও হুমকি ধমকি দিয়ে নাজেহাল করেছেন । চালিয়েছেন হামলা। দিয়েছেন হুমকি মামলা। শামীম ওসমান নিজে ছাড়াও তার পুত্রও নানা আপত্তিকর মন্তব্য করে সমালোচিত হয়েছে । কোন অবস্থাতেই টলাতে না পেরে শামীম ওসমানের বি টিম হিসেবে নারায়ণগঞ্জে পরিচিত হেফাজত ইসলামীর স্থানীয় কয়েকজন বিতর্কিত নেতা মেয়র আইভীকে উৎখাতের হুমকিও দিয়েছে বারংবার ।
সেই ধারাবাহিকতায় এবার মহানগর বিএনপির নেতারা মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভীর বাড়ির ইট খুলে নেয়ার হুমকি দিয়ে ফের ওই বিতর্কিত পলাতক গডফাদারের সূরে হুমকি দিচ্ছে বলে নগরবাসীর মাঝে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে ।
তথ্য সূত্র আরো জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে পরেও তাদের মেয়র ডা. আইভীর বাড়ির ইট খুলে ফেলার হুমকি পেয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের মুখে। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা শামীম ওসমানের পর এবার মহানগর বিএনপি নেতা আবু আল ইউসুফ খান টিপু একই হুমকি দিয়েছেন। এর ফলে আবারো মেয়র আইভীকে নিয়ে আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে শহরে।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা থাকাকালে ২০১৫ সালের ২ মে শহরের চাষাঢ়া শহীদ মিনারে নতুন গ্যাস সংযোগের উদ্বোধন অনুষ্ঠান উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় নাসিক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী ও তাঁর সহযোগীদের বাড়ির ইট খুলে ফেলার হুমকি দেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। তিনি বলেছেন, ‘যদি আমি চোখের পলক ফেলি আমার কর্মীদের দিকে তাকিয়ে যে কষ্ট পাচ্ছি। তোমাদের বাড়ির ইট থাকবে না। পাঁচ মিনিটের মধ্যে সকল শক্তিকে মোকাবিলা করে বাড়ির ইট খুলে রাখার ক্ষমতা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রাখে।’
ওই অনুষ্ঠানে সুশীল সমাজের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এই নেতা বলেন, যাদের আঁতে ঘা লেগেছিল, আমাকে যারা ২০ কোটি টাকা অফার করেছিল শুধু চুপ করে থাকার জন্য, যারা নারায়ণগঞ্জে মা-বোনের সম্ভ্রম বিক্রি করত, যারা মা বোনের সম্ভ্রম বিক্রি করে টাকার পাহাড় গড়েছিল। এ রকম ঢাকার কিছু কিছু সুশীল সমাজের লোক, যারা মুখোশ পড়ে থাকেন, যারা কিছু কিছু বড় বড় পত্রিকার মালিকের বউ, যারা টক শো এসে মুখের মেকআপ দিয়ে সুন্দর সুন্দর কথা বলতে চেষ্টা করেন জননেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে, সেই টক শো ওয়ালারা সেদিন এনজিওর ভূমিকায় ছিলেন এবং নারায়ণগঞ্জের পতিতালয় যাতে না ওঠে সেই জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের ১০ দিনের মাথায় ১৫ আগস্ট মহানগর বিএনপি অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর বাড়ির ইট খুলে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু। নাসিক মেয়র আইভীর নাম উল্লেখ করে বিএনপি নেতা টিপু বলেন, ‘সব পালিয়ে গিয়েছে, আর আপনি দেওভোগে এখনো বসে আছেন। আমরা যদি নির্দেশ দেই তাহলে আপনার ওই হোয়াইট হাউজের (নগরীর দেওভোগে সাদা রঙের আইভীর পৈতৃক বাড়ি) একটি ইটও থাকবে না। অতএব আপনি সাবধান হয়ে যান। আপনি আর এক পাও আগাবেন না।’
মেয়র আইভী বিএনপির কার্যালয় দখল করেছেন, এমন অভিযোগ তুলে বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘আপনি বিএনপির অফিস দখল করেছেন। কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। নারায়ণগঞ্জে সিটি করপোরেশনের নামে অনেক দুর্নীতি করেছেন। আমরা চাই না বাংলাদেশের সুষ্ঠু ধারার নির্বাচনের আগে কোনো সন্ত্রাসী, খুনি হাসিনার প্রেতাত্মা এ দেশে থাকুক।’
গত ফেব্রুয়ারিতে চারুকলা ইন্সটিটিউটে গানবাজানোর ঘটনায় ব্যাপকভাবে ভাংচুর লুটপাট ও চুরির ঘটনায় দফায় দফায় নারায়ণগঞ্জ হেফাজতের কয়েকজন নেতা মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভীকে উৎখাতের হুমকিও দেয়। রক্তের বন্যা বইয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করে রাজনৈতিক মহল।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের মুখে মেয়র আইভীর বাড়ির ইট খুলে ফেলার হুমকির পর মুখ খুলেছেন বামপন্থী নেতারা। গত শুক্রবার (১৬ আগস্ট) সাংস্কৃতিক জোটের এক অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা ও সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি বলেছেন, ‘বিএনপির একজন বলেছেন একজনের বাড়ির ইট খুলে আনবেন। ইট খুলে আনার হুমকি আপনি দিবেন কেন? যদি কেউ অপরাধী, দুর্নীতির সাথে যুক্ত হয়ে থাকে তাহলে দুর্নীতি দমন কমিশনকে অভিযোগ করুন। বাড়ির ইট খুলে নেয়ার অধিকার আপনাদের কে দিল? বর্তমান সরকারকে বিতর্কিত করতে যাবেন না। আপনাদের অনেকে শামীম ওসমান, সেলিম ওসমানের সাথে ছিলেন। আপনাদের অনেকে শামীম ওসমানের কাছ থেকে ২-৪ কোটি এনেছেন। আবার সংবাদমাধ্যমে তা বলেছেনও। আমরা এটি সংবাদের মাধ্যমে জেনেছি।’









Discussion about this post