২০০৯ সালের ৫ জানুয়ারী আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পূর্ব থেকেই নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী গডফাদার শামীম ওসমানের শ্বশুর বাড়ির লোকজনের আস্ফালন ছিলো চোখে পরার মত। একই সাথে শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটু ছিলো দন্ডমূর্তের কর্তা।
শামীম ওসমান কিংবা ওসমান পরিবারের কারো বিরুদ্ধে কথা বলা ছিলো অত্যন্ত কঠিন ঠিক তার চাইতেও আরো ১০ গুণ কঠিন ছিলো শামীম ওসমানের শ্বশুর বাড়ির কারো বিরুদ্ধে কোন কথা বলা ।
শীতল বাসে টিকেট কেটে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ আসার পরে একজন যাত্রী বলেন, ‘শামীম ওসমানের শ্বশুর জামায়াত ইসলামীর সদস্য আর শামীম ওসমান আওয়ামী লীগ। কালীর বাজারের ওষুধ মার্কেটের কয়েকজন জামায়াতের রাজনীতি করে জজ সাহেবের বাড়িতে বোমা হামলার মামলার আসামী হলে শামীম ওসমানের শ্বশুর ওই ওষুধ ব্যবসায়ীদের মামলা থেকে রক্ষা করতে ব্যাপক তদ্বির করে।’
শীতল বাসে যাত্রীদের মাঝে এমন আলোচনা সমালোচনার এক পর্যায়ে শামীম ওসমান ওই জামায়াতের পক্ষে এমন কাজ করা ঠিক করে নাই বলে মন্তব্য করার কারনে ওই যাত্রীকে চাষাড়া রাইফেল ক্লাবের গেইটে বাস থামিয়ে বাসের ড্রাইভার টেনে হিচরে নামিয়ে আটকে রাখে রাইফেল ক্লাবের একটি কক্ষে ।
এরপর শুরু হয় অবর্ণনীয় টর্চার। ওই যাত্রীর পরিবারের লোকজন কে ডেকে এনে মুচলেকাসহ রেখে ছেড়ে দেয়া হয়। এভাবেই টিটু ও কাজলের টর্চার সেল হিসেবে দীর্ঘদিন রাইফেল ক্লার ব্যবহৃত হতো। যার কারণে এই টিটুর বিরুদ্ধে কেউ টু শব্দ করার সাহস করতো না কেউ।
সেই দুর্দান্ত প্রভাবশালী টিটুর আর্থিক কেলেঙ্কারি খুঁজে বের করতে শীঘ্রই তদন্ত কমিটি গঠন করবে নারায়ণগঞ্জ ক্লাব।
সম্প্রতি ক্লাবের একটি এজিএম চলাকালে উপস্থিত সদস্যরা টিটুর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সন্দেহ প্রকাশ করে অনেকে জানান, নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের নতুন ১০ তলা বিশিষ্ট বহুতল ভবন নির্মাণে কোটি কোটি টাকা লোপাট করেছে টিটু। তাই ক্লাব মেম্বারদের কথা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির নেতারা এর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তদন্ত কমিটি করছে বলে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকে পলাতক আছেন টিটু। এর আগে, গত ১৯ আগস্ট বিকেলে ছাত্রজনতার আন্দোলন দমন করতে শামীম ওসমান তার বাহীনি নিয়ে অস্ত্রসহ যেই মহড়া দেন সেখানে শটগান হাতে দৌড়াতে দৌড়াতে গুলি ছুড়তে দেখা যায় টিটুকে। টিটু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক পরিচালক এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার চেয়ারম্যান। ক্রীড়া সংস্থায় থাকাকালেও তিনি ব্যাপক দুর্নীতি অনিয়ম করেছে বলে জানা গেছে।
আমলাপাড়ার সুজিত সাহার মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার মদের ব্যবসাও করতেন এই টিটু।
ক্লাবের বেশ কয়েকজন মেম্বার এ বিষয়ে বলেন, উকিলপাড়া এলাকার নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের উত্তর দিকে নতুন বিশালাকৃতির যেই ভবনটি তৈরি হচ্ছে। সেই ভবনটি ১০ তলা বিশিষ্টি হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলে ঠিকাদারের সাথে ৪৫ কোটি টাকার চুক্তি করেছিল শামীম ওসমানের শ্যালক ও ক্লাবের সাবেক সভাপতি তানভীর আহম্মেদ টিটু।
তবে এরই মধ্যে তিনি ৭১ কোটি টাকা ঠিকাদারকে পরিশোধ করে ফেলেছেন। যদিও ভবনের কাজ মাত্র ৫ তলা পর্যন্তই হয়েছে। তাই ঠিকাদারের সাথে কথা বলে এখানে কোনো আর্থিক অনিয়ম হয়েছে কিনা তা খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিটি গঠন হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছে ক্লাব মেম্বাররা।
একই সাথে ক্লাবের নাম ব্যবহার করে শত শত কোটি টাকার বিদেশী মদ আমদানি করে সুজিত সাহার মাধ্যমে কাস্টমসের নানে কি পরিমাণ লুটপাট হয়েছে তাও খতিয়ে দেখতে প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে।
জানা গেছে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার আগেও নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি সেক্টরের মতো এই ক্লাবেও ওসমান পরিবারের ব্যাপক প্রভাব ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় সাবেক সাংসদ শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহম্মেদ টিটু এই ক্লাবে নিজের একক আধিপত্য স্থাপন করেছিলেন। বলতে গেলে পুরো ক্লাবই নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। এ নিয়ে সদস্যদের একটি বড় অংশ তার উপর নারাজ থাকলেও কেউ মুখ খুলতে সাহস পেত না। তবে মাঝে মাঝে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের আর্থিক অনিয়ম, নির্বাচন না হওয়া, লিকারের ব্যবসাসহ নানা বিষয় উল্লেখ করে বিভিন্ন পত্রিকা অফিসে খোলা চিঠি প্রেরণ করা হতো।
ফোনে হুমকি আসতে পারে এমন আশংকায় ক্লাবের এক সদস্য তআর নাম ব্যবহার না করার অনুরোধে বলেন, ৫ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে যেই লুটপাট ও আগুন দেয়ার ঘটনা হইসে, সেটার জন্য ওসমান পরিবার দায়ী। কারণ তারা এই ক্লাবরে এমনভাবে ব্যবহার করেছে যে মানুষ মনে করেছে এটা তাগো সম্পদ। তাই বিক্ষুব্ধ মানুষ এখানে আক্রমণ চালাইছে। আর ডাকাতরা সেই সুযোগে লুটপাট করছে।
আর এখন যারা পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছেন তারাও ওসমান পরিবারের ভয়ে টটস্থ থাকতেন।
এজিএমএ অনেকে টিটুর দুর্নীতির বিষয়ে কথা বলছে। বলছে সে ভবন নির্মাণের কোটি কোটি টাকা নিয়ে বিদেশ চলে গেছে। টিটু ও তার চাটুকার সহ সভাপতি রানা রামু সাহার লুটপাট করতেই কমিটি হইছিলো।
অর্থাৎ গডফাদার শামীম ওসমানের শালক টিটুর নেতৃত্বে আরো ত্রিরত্ন সুজিত সাহা, রামু সাহা ও এসএম রানার সকল ধরনের অপরাধ খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি।
সিদ্ধান্ত নেয়া হইসে যে, তদন্ত কমিটি তার দোষ খুঁজে পেলে তার বিরুদ্ধে মামলা হবে।









Discussion about this post