২০০৫ সালে নারায়ণগঞ্জ ডিবি পুলিশের হাতে আটক সিদ্ধিরগঞ্জের চাঁন মিয়াকে তুলে এনে নির্মম নির্যাতন করে দুই হাত দুই পা ভেঙ্গে মাথায় তীব্র আঘাত করে চাঁন মিয়ার লাশ নারায়ণগঞ্জ খানপুর হাসপাতাল (তৎকালনীর নাম নারায়ণগঞ্জ ২শ শয্যা) হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ফেলে পালিয়ে যায় ডিবি পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা ।
ওই সময় পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন সিগবাত উল্লাহ । চাঞ্চল্যকর ওই চাঁন মিয়া হত্যাকান্ডের ঘটনায় এসপি এএসপি, সিদ্ধিরগঞ্জ, সদর ও ডিবি পুলিশের তিনজন ওসি এবং কয়েকজন দারোগার শাস্তি হিসেবে কেউ কেউ বদলী আবার কেউ কেউ সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ হেডকোয়ার্টার।
এরপরেও থামে নাই আইনৃংখলাবাহিনীর অত্যাচারের মাত্র । নাারয়ণগঞ্জের সাত খুন, সোনারগাঁ থানার ছাদে মার্ডারসহ অসংখ্য কর্মকান্ডে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে বিভিন্ন বাহিনীর বিরুদ্ধে । এতো সংস্কার এতো আন্দোলনের পরও সংশোধন হচ্ছে না কোন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার অসাধুরা ।
এতো কিছুর পর এবার নারায়ণগঞ্জের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের হেফাজতে সৈয়দুল করিম (৫৫) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তিনি কক্সবাজারের বাসিন্দা। তার বাবার নাম নুরুল কবির।
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) সকালে নারায়ণগঞ্জ শহরের ৩০০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দাবি, আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে করিম অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এর পূর্বে সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ে একটি ডাবল ডেকার যাত্রীবাহী বাসের নিচতলায় অভিযান চালান মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। এতে নেতৃত্ব দেন অধিদপ্তরের পরিদর্শক জয়নাল আবেদিন। পরে মাদক পাচারকারী সন্দেহে সৈয়দুল করিম আটক করা হয়। এসময় সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. মামুন ও মো. রুবেলসহ একজন কনস্টেবল ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আটকের পর হাত বেঁধে সৈয়দুল করিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় মারধরের একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে প্রথমে সাইনবোর্ডের প্রো-একটিভ হাসপাতালে এবং পরবর্তী সময়ে শহরের খানপুর এলাকার ৩০০ শয্যা হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
জরুরি বিভাগের চিকিৎসক অপু কুমার সাহা বলেন, সৈয়দুল করিমকে সকাল সোয়া ৮টার দিকে হাসপাতালে আনা হয়। পরে ইসিজিসহ বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা যায়, হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।
তবে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক জয়নাল আবেদিন।
তিনি বলেন, মাদক পাচারের গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গ্রীনলাইন ডাবল ডেকার যাত্রীবাহী বাসে অভিযান চালিয়ে সৈয়দুল করিমকে আটক করা হয়। এসময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে প্রথমে সাইনবোর্ড প্রো-একটিভ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে শহরের খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে সেখানে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরিদর্শক জয়নাল আবেদিন বলেন, ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কুমিল্লা ও কক্সবাজারে চারটি মামলা রয়েছে। তাকে কোনো মারধর করা হয়নি।
পরিদর্শক জয়নাল আবেদিন নিজেদের পক্ষে সাফাই সাক্ষি দেয়ার এমন খবরে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ লিংক সড়কের খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম এলাকার একজন বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “নূরু সিআইডির বহুতল ভাড়া করা বাড়িতে নারায়ণগঞ্জ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যালয় । এই কার্যালয়ের বারান্দা থেকে প্রায়ই কান্না ও চিৎকার শোন যায়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যালয়ের এই বারান্দায় প্রতিদিনই টর্চার করে আটককৃতদের স্বজনদের ডেকে এনে রফাদফা ও মামলা দেয় এই কার্যালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। এমন মারপিট ও চিৎকার কান্নার চিত্র নিচ থেকে কেউ মোবাইল ফোনে ধারণ করলে এলাকার অনেককেই হুমকি ধমকি দিয়ে হয়রানীও করে এই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীরা । এই অফিস যেন আরেক টর্চার সেল।”









Discussion about this post