বিগত সরকারকারের শাসনামলে রাজনৈতিক দলের নেতা ও ব্যবসায়ীদের ঘৃন্য কর্মকান্ডের ফিরিস্তি গণমাধ্যমে উঠে আসছে নানাভাবে । নারায়ণগঞ্জের জেলার ৫ টি নির্বাচনী আসনের মধ্যে রূপগঞ্জে গাজী গোলাম দস্তগীরের নানা কেংলেংকারী, আড়াইহাজার উপজেলায প্রভাবশালী হুইপ ও এমপি নজরুল ইসলাম বাবু তার স্ত্রী ডাঃ ইভা ছাড়াও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আউটসোর্স ড্রাইভারের কর্মকান্ডও আতংকে রাখতো এলাকাবাসীকে, আর শামীম ওসমান তো একাই একশো, অপ্রতিরোধ্য শামীম ওসমানের নাম ই যথেষ্ট যে কোন ভালো মন্দ কাজের ক্ষেত্রে । আর এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবশালী ব্যাক্তিদের পাশে যদি কোন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী থাকেন তাইলে তো কোন কথাই নাই।
ইভা রহমান । যাকে নিয়ে নানা আলোচনা সমালোচনা ও গুঞ্জন রয়েছে । সেই ইভা রহমানের সম্পত্তি দখল করতে এবার প্রভাবশালী নজরুল ইসলাম বাবু, শামীম ওসমানের মতো ব্যাক্তির সাথে প্রভাবশালী ফকির গ্রুপের কর্তারা ঘৃন্য খেলায় মেতে উঠেছিলো তা কারো চিন্তার মধ্যেই ছিলো না। বিগত সরকারের অত্যান্ত ক্ষমতাধর ওই প্রভাবশালী হুইপ নজরুল ইসলাম বাবু ও এমপি শামীম ওসমানের ঘৃন্য কর্মকান্ড ঘিরে অসংখ্য সংবাদ প্রকাশের পর এবার আড়াইহাজারের বিএনপি নেতা অর্থাৎ বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-অর্থনৈতিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে দৈনিক যুগান্তর । এই সুমন বর্তমানে রাজনৈতিক দলের ক্ষমতার প্রভাবে ফকির গ্রুপ ও নজরুল ইসলাম বাবুর সাম্রাজ্য পাহাড়া দিচ্ছে। যা ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে ।
এমন ঘটনা যদি সত্যি হয় তাহলে বিএনপির পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী উঠেছে অপরদিকে সুমন – ফকির গ্রুপ ও নজরুল ইসলাম বাবুর বিরোধী একটি শক্ত প্রতিপক্ষ রয়েছে বিএনপি ও আড়াইহাজার উপজেলায়। প্রতিপক্ষ স্বার্থান্বেষী মহলের ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের অসংখ্য ফিরিস্তির সমালোচনাও রয়েছে সকলের মুখে।
প্রকাশিত সংবাদটি হুবহু তুলে ধরা হলো :
নারায়ণগঞ্জের সবাই ফকির নিটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফকির আক্তারুজ্জামানকে ব্যবসায়ী হিসাবে চেনেন। ব্যবসার আড়ালে তিনি ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর ব্যবসায়িক অংশীদার ও অর্থ জোগানদাতা। এলাকার অপরাধ সাম্রাজ্যের মূল হোতা ছিলেন বাবু ও ফকির।
স্থানীয় বিএনপির কর্মী কামরুজ্জামান সোহাগের এক লিখিত অভিযোগে জানা যায়, ফকির গ্রুপের ফকির আক্তারুজ্জামানের মাধ্যমে গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে অবৈধভাবে কামানো হাজার কোটি টাকা সাদা করে বিদেশে পাচার করেছে বাবু।
৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর বাবু পালিয়ে যায়। তার অবর্তমানে এলাকার অপরাধ সাম্রাজ্য পাহারা ও ফকির আক্তারুজ্জামান তার ভাতিজা ফকির কামরুজ্জামান নাহিদকে সুরক্ষার দায়িত্ব নিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-অর্থনৈতিক সম্পাদক আড়াইহাজারের মাহমুদুর রহমান সুমন।
আড়াইহাজার ও নারায়ণগঞ্জে ফকির গ্রুপের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি হামলা মামলা থেকে রক্ষার জন্য ৫ কোটি টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ফকির আক্তারুজ্জামানসহ তার ভাতিজা ফকির ফ্যাশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ফকির কামরুজ্জামান নাহিদ, সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর ব্যবসায়ী অংশীদার। তাদের সঙ্গে সাবেক এমপি বাবু অংশীদারত্বের মাধ্যমে নামে বেনামে গড়ে তুলেছে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। তবে সব প্রতিষ্ঠান ফকির গ্রুপের নামে থাকলেও এতে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে বাবু ।
রূপগঞ্জের বরপা এলাকায় সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম বাবু ফকির আক্তারুজ্জামানের মাধ্যমে অলটেক্স কোম্পানি থেকে একটি স্পিনিং মিল ১২০ কোটি টাকায় কিনে অংশীদার হয়েছেন। অন্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে তার ২৮০ কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। ফতুল্লার কায়েমপুরের ফকির নিটওয়্যারেও সাবেক এমপি বাবুর অংশ রয়েছে। এমনকি রূপগঞ্জের দরগাও এলাকার ফকির গার্মেন্টসে ২৬০ কোটি টাকা দিয়ে অংশীদার হয়েছে সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর। শুধু তাই নয়, ফকির আক্তারুজ্জামান নজরুল ইসলাম বাবুকে খুশি করতে আড়াইহাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস নিজ অর্থায়নে জমি কিনে করে দিয়েছেন। ফকির আক্তারুজ্জামান বিগত ১৫ বছর ধরে এমপি শামীম ওসমান ও নজরুল ইসলাম বাবুর সঙ্গে আঁতাত করে বন্ড সুতার আড়ালে চোরাই সুতার ব্যবসা করে দেশের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে তা বিদেশে পাচারও করেছে।
শুধু তাই নয়, ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল বন্ড সুতা আসবে আর সেইখানে বন্ড সুতার আড়ালে লবণ পাওয়া গিয়েছিল। আর এইভাবে ফকির গ্রুপ বিদেশে টাকা পাচার করত। এদিকে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর ফকির আক্তারুজ্জামানসহ তার ভাতিজা ও ছেলের অপকর্ম একে একে বেরিয়ে আসছে।
নানা অপকর্মের ফিরিস্তি : গত ২৯ আগস্ট সংগীতশিল্পী ইভা রহমানের দখল হওয়া দুই ফ্ল্যাট উদ্ধারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন এবং নারায়ণগঞ্জ সাবেক এমপি শামীম ওসমান ও সাবেক হুইপ নজরুল ইসলাম বাবু ও আওয়ামী লীগের শাসনামলে সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর অর্থ জোগানদাতা ফকির আক্তারুজ্জামানের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক দখল ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গুলশান থানায় মামলা করেন।
ইভা রহমান অভিযোগ করে বলেন, ফকির আকতারুজ্জামান ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার খুব কাছের লোক হওয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ যত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে সব জায়গায় বিষয়টি জানালেও কোনো প্রতিকার পাইনি। উল্টো ফকির আকতারুজ্জামান আমাকে ও আমার পরিবারকে জীবননাশের হুমকি এবং বিভিন্ন মিথ্যা মামলার ভয়ভীতি দেখাতে থাকে। এমতাবস্থায় আমি ও আমার পরিবার জীবন বাঁচানোর জন্য তিন মাস বাড়িতে না থেকে পালিয়ে ছিলাম। আওয়ামী লীগের অর্থ মজুতকারী ও ভূমিদস্যু ফকির আকতারুজ্জামানসহ স্বৈরাচারের অর্থ লুণ্ঠনকারী দোসরদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করে ফ্ল্যাট দুটি আমাকে বুঝিয়ে দেওয়া হোক।
সমঝোতার রাজনীতি : নির্ভরযোগ্য সূত্রে আরও জানা গেছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ- অর্থনৈতিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন ফকির আক্তারুজ্জামানের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের দায়িত্ব নিয়েছেন। কারণ সুমন একসময় নজরুল ইসলাম বাবুর কাছ থেকে সুবিধা নিয়েই আড়াইহাজারে বিএনপির রাজনীতি করতেন। আওয়ামী লীগের পতনের পর বাবুর নির্দেশেই সুমন এখন ফকির আক্তারুজ্জামানের দায়িত্ব নিয়েছেন। আর মাহমুদুর রহমান সুমন আওয়ামী লীগের শাসনামলে সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর সঙ্গে আঁতাত করে আড়াইহাজারে বিএনপির রাজনীতি করেছিলেন।
বিএনপির পদ থাকলেও কিন্তু আড়াইহাজার তার জনমত গড়ে তুলতে পারেনি। ফলে বিগত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে আড়াইহাজারে বিএনপির কেন্দ্রীয় একটি কর্মসূচিও পালন করতে পারেননি। বাবুকে ম্যানেজ করে নিজ বাড়িতে চার দেয়ালের ভেতরে নামমাত্র কর্মসূচি পালন করত। আড়াইহাজার বিএনপির দলীয় কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে তার বিরুদ্ধে নেই কোনো মামলা। কারণ কোনো মামলা হলে সাবেক এমপি বাবুকে আঙ্কেল ডেকে সে মামলা থেকে নিজেকে রক্ষা করতেন সুমন।
অতঃপর মামলা : ছাত্র-জনতার হুঁশিয়ারির পর, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে শফিকুল ইসলাম শফিক ও মো. বাবুল নামে দুজনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ফকির গ্রুপের তিন কর্ণধারকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। ওই দুই মামলায় প্রধান আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মামলায় ফকির নিটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফকির আক্তারুজ্জামান, তার ভাতিজা ফকির কামরুজ্জামান নাহিদ ও ফকির গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ফকির মাশরিকুজ্জামানকে অর্থ জোগানদাতা হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।








Discussion about this post