ছাগলকান্ডে তোলপাড় হওয়া নানা অপরাধের হোতা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য ড. মো. মতিউর রহমান দীর্ঘদিন পর এবাব নিজের অপরাধ ধামাচাপার জন্য শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে অপচেষ্ট শুরু করেছে।
গত ১০ সেপ্টেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) মহাপরিচালক ও আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের জিওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল মজিবুর রহমানকে বরখাস্ত করা হলে এবার মুখ খুলেন সেই দূর্ণীতিবাজ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য ড. মো মতিউর রহমান।
এমন খবরেও ব্যাপক গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়েছে নারায়ণগঞ্জে । অনেকেই বলেছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (বরখাস্ত) মজিবুর কে নারায়ণগঞ্জবাসী সোহেল হিসেবে চিনেন। থাকতেন নগরীর ডন চেম্বার এলাকায় । তার ভাই এডভোকেট বুলবুল এখনো নারায়ণগঞ্জ আদালতের পিপি। তাদের অপর ভাই ফেরদৌস কামাল জুয়েল নারায়ণগঞ্জ শহরেই বসবাস করেছেন।
বরখাস্তকৃত আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের জিওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল মজিবুর রহমানকে দায়ী করে সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবাদ লিপি পাঠিয়েছে এই মতিউর। সেই মজিবুর রহমান নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পি.পি) এডভোকেট মোঃ মনিরুজ্জামান বুলবুলের ভাই । একই সাথে মজিবুর রহমানের আপন অপর ছোট ভাই রায়পুরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আলহাজ্ব ফেরদৌস কামাল জুয়েলের সাথে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য দূর্ণীতিবাজ মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকীর দ্বন্ধ ছিলো চরমে।
সেই দ্বন্ধের জের ধরে নরসিংদীর রায়পুরায় ছিলো হানাহানি মারামারি । এমন ঘটনাকে এবার সামনে এনে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণের অপচেষ্টা চালাচ্ছে এই মতিউর ও তার পরিবার। যার প্রভাব পরেছে নারায়ণগঞ্জে । একদিকে রখাস্তকৃত আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের জিওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল মজিবুর রহমান কে নারায়ণগহ্জ শহরে সকলেই সোহেল হিসেবেই চিনেন । তিনি ডন চেম্বার এলাকায় শিশু কাল থেকেই বেড়ে উঠেছেন । গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরায় হলেও তাদের বসতি নারায়ণগঞ্জ শহরেই। আর সেই সুবাধে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মজিবুর রহমান তার আপন ভাই এডভোকেট মোঃ মনিরুজ্জামান বুলবুলকে গুরুত্বপূর্ণ নারায়ণগঞ্জে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পি.পি) হিসেবে নিয়োগ করতে ব্যাপক দৌড়ঝাপ করে সফল হয়েছেন।
নিম্নে ছাগলকান্ডে তোলপাড় হওয়া নানা অপরাধের হোতা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য ড. মো. মতিউর রহমানের প্রতিবাদ লিপি হুবহু তুলে ধরা হলো :
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য ড. মো. মতিউর রহমানের দুর্নীতি নিয়ে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত দুটি সংবাদের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদলিপি পাঠানো হয়েছে। গত ১৪ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত ‘কালো টাকায় মতিউর পরিবারের দেশে-বিদেশে বিলাসী জীবন’ এবং গত ২৪ জুনে প্রকাশিত “দেশ ছেড়েছেন ‘ছাগলকাণ্ডে’র মতিউর’ শিরোনামের দুটি সংবাদের কথা উল্লেখ করে এ প্রতিবাদলিপি প্রেরণ করেন ড. মো. মতিউর।
প্রতিবাদলিপিতে তিনি লিখেছেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কালে প্রভাবশালী ব্যক্তি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জিওসি আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিম কমান্ড লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা ও ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দীর্ঘদিন ধরে শুল্ক ফাঁকিসহ নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত একটি মহলের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ভয়ানক তথ্য সন্ত্রাসের শিকার হয়ে আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা মানসিক ও অর্থিকভাবে দারুণ বিপর্যন্ত। এই মহলটি গোয়েন্দা সংস্থা, গণভবন ও সিআরআই ইত্যাদি ব্যবহার করে গত ঈদুল আযহার সময় কৌশলে তথাকথিত ‘ছাগলকাণ্ড’ নাটক সাজিয়ে আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদেরকে মিথ্যা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও অতিরঞ্জিত, অপতথ্য, সোশ্যাল মিডিয়া এবং গণমাধ্যমে প্রচার করে আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদেরকে ‘দুর্নীতিবাজ’ আখ্যা দিয়ে সমাজের সামনে হেয়প্রতিপন্ন করে এক বিব্রতকর পরিস্থির মধ্যে ঠেলে দেয়।
উদ্দেশ্য ছিল জনগণের দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে রাখা। কয়েক দশক ধরে যথাযথ নিয়মে কর পরিশোধসহ বৈধ পন্থায় বিনিয়োগের মাধ্যমে গড়ে তোলা আমার ও আমার পরিবারসহ আত্মীয় স্বজনের শিল্প বাণিজ্য সম্পর্কে মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও অতিরঞ্জিত অপতথ্য ছড়িয়ে জনমনে এক বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে।
সংবাদে প্রকাশিত বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, সাদেক এগ্রোর কর্ণধার মো. ইমরান হোসেন আলী প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর সাভার, ঢাকা হতে ভ্যাটসহ কেজি প্রতি ৬০০ টাকা দরে ব্রাহমা জাতীয় গরু কেনেন। তার সেই গরু মাত্রাতিরিক্ত দামে বিক্রি করার জন্য এক অভিনব কৌশল বের করেন।
প্রথমে তিনি একটি ছাগল বিক্রির জন্য দাম হাকান ১৫ লক্ষ টাকা এই সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর সমগ্র বাংলাদেশে আলোরন উঠে। আর তার এই প্রচারের পর সাদেক এগ্রোর মালিক টার্গেট করেন ১৬ বছরের মুশফিকুর রহমান ইফাতকে। ইমরান হোসেন সেই ইফাতকে প্রস্তাব দেয় যে, আমি যে ছাগলের দাম হাঁকিয়েছি তার জন্য তুমি আমাকে এক লক্ষ টাকা দেবে আর আমি প্রচারণা চালাবো যে একজন ভালো ছেলে যার পরিবারও প্রতিষ্ঠিত ও স্বনামধন্য যে তার বাবাকে ‘সারপ্রাইজ’ বা অভিভূত করার জন্য ১৫ লক্ষ টাকা দিয়ে ছাগল কিনে নিয়ে গেছে। প্রকৃতপক্ষে ছাগলের মূল্য হবে এক লক্ষ টাকা কিন্তু আমি প্রচারণা চালাবো ১৫ লক্ষ টাকা।
এতে করে তুমি সমগ্র বাংলাদেশে আদর্শ সন্তান হিসেবে পরিচিতি পাবে যে, একজন অল্প বয়স্ক ছেলে তার বাবাকে ভালোবেসে ১৫ লক্ষ টাকা দিয়ে ছাগল উপহার দিয়েছে। আর এতে করে তোমার ও তোমার পরিবারের সম্মান বৃদ্ধি পাবে এবং সমগ্র দেশব্যাপী তোমাকে চিনবে ও জানবে।
অপরদিকে, ইমরান আরো বলেন যে, এত করে আমার ব্যবসায় লাভ হবে এবং আমি ১৫ লক্ষ টাকায় ছাগল এবং কোটি টাকা দামে ১৫টি ব্রাহমা জাতীয় গরু বিক্রি করতে পারব। বাস্তবিক অর্থে চতুর ইমরান সরলমনা কিশোর ইফাতকে ব্যবহার করে ৬০০ টাকা কেজি দামে কেনা গরুকে উচ্চ বংশীয় গরু বলে প্রতি গরু এক কোটি টাকা করে বিভিন্ন লোকের কাছে বিক্রি করেন।
এ ছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে আমাকে অপসারণ করা হয়নি।
আমি স্বেচ্ছায় অবসরে গিয়েছি। আমার কন্যা ফারজানা রহমান ইপসিতা বিবাহিত এবং ১২ বছরের অধিক সময় ধরে বিদেশে স্বামীর সাথে বসবাস করেন। তিনি বাংলাদেশ থেকে কোন টাকা বিদেশে নেননি। অধিকন্তু বাংলাদেশে উপার্জিত আয় দিয়ে বাংলাদেশেই সম্পদ করেছেন। ফারজানা রহমানের পলাতক থাকার সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমার স্ত্রী লায়লা কানিজ ও আমার ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্নব আমাদের বাসায় অবস্থান করছি। এক্ষত্রে গাঢাকা দিয়ে থাকার তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। স্ত্রী শাম্মি আখতার আমার সাথে কোনো যোগাযোগ না করে মিডিয়া ট্রায়েল থেকে বাচার জন্য তার নিকটজনের সাথে আছে মর্মে জানতে পারি।
আপনি আপনার প্রতিবেদনে আমার ও আমার পরিবারের নামে ১৩৪,৪৩৬,৪৩১ (১৩ কোটি ৪৪ লক্ষ ৩৬ হাজার ৪৩১) টাকা ব্যাংকে জমা আছে মর্মে উল্লেখ করেছেন যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। গ্লোবাল সুজ লি. নামক প্রতিষ্ঠানে (যেখানে ফারজানা রহমানের ২১% শেয়ার রয়েছে) বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিভার অনুমোদন নিয়ে বৈদেশিক বিনিয়োগকারী হিসেবে যে টাকা বাংলাদেশে গ্লোবাল সুজের একাউন্টে এনেছেন তার মালিক মতিউর রহমানকে দেখানো হয়েছে যা খুবই হাস্যকর ও দুঃখজনক। দুর্নীতি দমন কমিশনের সূত্র উল্লেখ করে জানিয়েছেন যে দুদক সুত্রে জানতে পেরেছেন আমাদের পরিবারের পাঁচজনের সম্পদ বিবরণি আমরা দাখিল করেছি। বর্তমানে যাচাই বাছাই চলছে এবং শিগগিরই প্রতিবেদন দাখিল করা হবে এবং অতঃপর মামলা হবে।









Discussion about this post