সাবেক ডিবি প্রধান হারুনের পতনের পর একসময়ে মাত্র ৮০ টাকা রোজে লোড-আনলোডের শ্রমিক এখন কয়েক শত কোটি টাকার মালিক এবং হারুনের ক্যাশিয়ারখ্যাত চতুর চালাক সেই মোকারম সরদার নিজেকে বাঁচাতে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে।
হারুনের দাপটে রাতারাতি শত শত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া মোকারম সরদার হাসিনা সরকারের পতনের পর কিছুদিন গা ঢাকা দিয়ে আত্মগোপন থাকলেও এখন প্রকাশ্যে এসেছে।
নিজের অবস্থান ঠিক রাখতে বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের বাবা বদরুল ইসলাম জমির সাহেবকে হাত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সু-কৌশলে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের বাবাকে আমন্ত্রণ করে নিজের বাড়িতে ভুঁড়িভোজের আয়োজন করেন মোকারম সরদার।
তার বাড়িতে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের বাবার উপস্থিতিতে ভুড়িভোজের ছবি ভাইরাল হয়। তা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সহ কিশোরগঞ্জে নানা ধরনের গুঞ্জন চলতে থাকে।
এদিকে চতুর চালাক মোকারম সরদার নিজেকে বাঁচাতে বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের বাবার সরলতার সুযোগ নিয়ে ভুড়িভোজের আয়োজন করেন। সাথে আরো কয়েকজনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ভুড়িভোজের ছবি মোকারম সরদার তার লোক দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে পোস্ট করে ভাইরাল করে। ভুড়িভোজের ছবি দেখে অনেকে মন্তব্য করে বলেন, সাবেক ডিবি প্রধান হারুনের পতনের পর নতুন করে নাহিদ ইসলামের বাবার আস্থাভাজন হওয়ার চেষ্টা করছে। আবার কেউ কেউ বলছে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এবং মামলা মোকদ্দমা থেকে বাঁচতে মোকারমের এই কুট-কৌশল।
অথচ সাবেক ডিবি প্রধান হারুনের অবৈধ সম্পদের কেয়ারটেকার ছিলেন মোকারম সরদার। বিষয়টি জনগণের কাছে পরিষ্কার হলে আত্মগোপণে চলে যায় তিনি। হঠাৎ উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের বাবার মাধ্যমে নিজের অবস্থান তৈরি করতে ভুড়িভোজের আয়োজনের মাধ্যমে প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করেন।
এদিকে সূত্রমতে আরো জানা গেছে, অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের বাবা বদরুল ইসলাম জমির সাহেব একজন শিক্ষক হওয়ার সুবাধে কিন্ডারগার্টেন স্কুল শিক্ষক মনির খানের ভাল সম্পর্ক রয়েছে। আর মনির খানের মাধ্যমে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের বাবার সরলতার সুযোগ নেয় মোকারম সরদার। নিজেকে দুদক থেকে বাঁচাতে এবং তার নানা অপকর্ম ঢাকতে মনির খানের মাধ্যমে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের বাবাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করে এবং তাকে দিয়েই মোকারম সরদারের সকল অপকর্ম ধামাচাপা দিতে পরিকল্পনা করেন। সেই পরিকল্পনায় উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের বাবাকে আমন্ত্রণ করে মোকারম সরদারের বাড়িতে ভুড়িভোজের আয়োজন করেন।
স্থানীয়রা বলছেন, কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার মোকারম সরদার নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার আলীগঞ্জে ৮০ টাকা রোজে লোড-আনলোড লেবারের কাজ করতো। লেবার থেকে লেবার সরদার হয়ে মোকারমের জীবনের পটপরিবর্তন ঘটতে থাকে। এক পর্যায়ে শ্রমিক নেতা কাউসার আহমেদ পলাশের হাত ধরে শ্রমিক লীগ নেতা বনে যায়। নেতার সাথে সু-সম্পর্ক তৈরি করে বুড়িগঙ্গায় জাহাজ থেকে লোড-আনলোডের সময় চুরি করে রাখা চাল, ডাল, গম, পাথর, কয়লা সার বিক্রি করতেন মোকারম সরদার। তার রয়েছে জাহাজের পণ্যচোরাই সিন্ডিকেট। সেই সিন্ডিকেট থেকে মোকারম সরদার যে পরিমাণের টাকা আয় করতেন স্থানীয় নেতাদের তার অর্ধেক ভাগ দিতেন। এভাবে মোকারম সরদার টাকা কামানোর মেশিন তৈরির মত কাজ শুরু করে। একজন লেবার সরদার রাতারাতি কিভাবে এতো টাকার মালিক বনে যায়,এতে কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার ও ফতুল্লার আলীগঞ্জের মানুষ হতবাক ।
স্থানীয়রা আরো বলেন, একজন লেবার সরদার টাকার গরমে শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকা সত্বেও কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন। সাবেক ডিবি প্রধান হারুনের দাপটে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসাবে নির্বাচিত হন। মোকারম সরদার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হওয়ার পর কিশোরগঞ্জ থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত চলছে আলোচনা সমালোচনা।
গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর মোকারম সরদার আত্মগোপনে চলে যায় মোকারম সরদার। কিন্তু হঠাৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে মোকারমের বাড়িতে মোকারম সহ উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের বাবাকে আমন্ত্রণ করে ভুড়িভোজের কয়েকটা ছবি ভাইরাল হয়।
এদিকে আরো অভিযোগ রয়েছে, শত শত কোটি টাকার মালিক মোকারম সরদার নিজ এলাকায় অবস্থান করা সহ নিজের অপকর্ম ঢাকতে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে কিশোরগঞ্জ জেলা ও নিকলী উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ম্যানেজ করেন।
টাকা দিয়েই বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সাথে অবাধে ওঠাবসা করতে দেখা যায়,এমনকি সারা বাংলাদেশের উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি দলীয় নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহন এবং প্রচারনায় দলীয় হাই কমান্ডের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও একমাত্র নিকলীতে এর ব্যতীক্রম ছিলো,মোকারমের পক্ষে প্রচারনায় অংশগ্রহন করা বিএনপি এর কোন নেতা কর্মীকে জেলা ও কেন্দ্রীয় ভাবে বহিষ্কার করা হয় নাই,এর একমাত্র কারন মোকারম সরদার এর টাকার কারনে সবাইকে করায়ত্ত করে ফেলে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পুলিশের এসপি থেকে শুরু করে ডিবি প্রধান থাকাকালীন সময়ে অবৈধভাবে উপার্জিত হাজার কোটি টাকার লেনদেনের অধিকাংশ ই এই মোকাররম সরদার তদারকি করতো। আর ওই টাকায় এখন বিএনপিসহ স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করতে কাগজের মতো টকা উড়িয়ে নিজেকে এবং ডিআইজি হারুন কে রক্ষা করতে জোড় তদ্বির ও চেষ্টা চালাচ্ছে মোকাররম সরদার।
এ বিষয়ে মোকারম সরদারের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে লোক মুখে শোনা গেছে মোকারম সরদার নতুন নাম্বার ব্যবহার করছে।









Discussion about this post