রূপগঞ্জে ছাড়াও নারায়ণগঞ্জের প্রায় প্রতিটি এলাকায় এভাবেই গড়ে উঠেছে অসংখ্য ডাইং কারখানাসহ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ মিল ফ্যাক্টরী ।
ডাইং কারখানা ও মিল ফ্যাক্টরীর কর্তৃপক্ষ স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজের পাশাপাশি জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রায় সকল অসাধৃু কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিয়মিত মাসোয়ারা দিয়ে পরিবেশ ধ্বংসের নেশায় মত্ত হয়ে উঠেছে। এমন অভিযোগ উত্থাপিত হলেও অসাধু কসকল কর্মকর্তা কর্মচারীরা যেন একেকজন পরহেজগার হিসেবে নিজেদের জাহির করতে চেষ্টা চালান। অথচ পরিবেশ ধ্বংস করতে কি পরিমাণ দূর্ণীতিতে নিমজ্জিত হয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তরের পিয়ন থেকে শুরু করে উপ পরিচালক পর্যন্ত । দূর্ণীতিবাজদের সাথে অত্যান্ত ঘনিষ্ট না হলে বোঝাই যাবে না এই সামান্য চাকরীজীবীরা কি পরিমাণ অর্থ সম্পদের মালিক । একেক জন যেন আঙ্গল ফুলে কলাগাছ ।
কতটা দূর্ণীতিতে নিমজ্জিত হলে সরকারী জমিতে খেলার মাঠকে রূপান্তর করা হয়েছে ডাইং কারখানা,যা উঠে এসেছে গণমাধ্যমে। এরপরেও নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের চোখে ই পরে নাই এমন অপরাধ।
রূপগঞ্জে সরকারি জমির একটি খেলার মাঠ দখল করে ড্রাইং কারখানা গড়ে তুলেছে প্রভাবশালী একটি চক্র। ওই কারখানার কেমিক্যালযুক্ত পানি ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বিসিক জামদানি পল্লীসহ আশপাশের এলাকায়। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে সেই এলাকার মানুষ। উপজেলার তারাবো পৌরসভার নোয়াপাড়া বিসিক জামদানি পল্লীর পাশের একটি খেলার মাঠ দখলের অভিযোগ ওঠেছে।
স্থানীয় আলী আকবর মিয়া বলেন, ‘বিসিক জামদানি পল্লীর পূর্বপাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২৫টি আলাদা দাগে ৩.৬৭ একর সম্পত্তি রয়েছে। ১৯৯৬ সালে আমার বাবা আলাউদ্দিন পানি উন্নয়ন বোর্ড নরসিংদীর অধীন থেকে পাঁচ বছরের জন্য ওই জমি রূপগঞ্জ উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর থেকে লিখিত অনুমতি নিয়ে লিজ নেয়। পরে সেখানে সমবায় ভিত্তিতে মাছের খামার গড়ে তোলেন। যেখানে স্থানীয় শতাধিক পরিবারের কর্মসংস্থান ছিল। ২০১১ সাল পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে তিন বার লিজ নবায়ন করে মাছের খামার অব্যাহত রাখেন। ২০১১ সালে লিজ নবায়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করলে নানা টালবাহানা শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পরে বাধ্য হয়ে তিনি আদালতের শরণাপন্ন হন। রূপগঞ্জের সাবেক এমপি ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর আশ্বাসে তিনি মামলা ওঠিয়ে নেন। পরে ওই জলাধার ভরাট করে একটি খেলার মাঠ গড়ে তোলা হয়। গত বছর বাবা মারা গেলে সাবেক এমপির সহায়তায় মাঠ দখল করে সেখানে ইউনিফিল টু ফ্রেবিক্স লিমিটেড নামে একটি ড্রাইং নিটিং ও ফিনিসিং কারখানা গড়ে তোলা হয়।’
আলী আকবর আরও বলেন, ‘ওই কারখানার কেমিক্যাল মিশ্রিত পানিও ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে লোকালয়ে। যে কারণে সে এলাকার মানুষ পড়েছেন মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে।’

ডাইং কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য আশপাশে ছড়িয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের নানার ধরনের রোগবালাই দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন রূপসি কাজীপাড়া এলাকার জাকির হোসেন রিপন। তিনি বলেন, ‘কোনো প্রকার ইটিবি ছাড়াই কারখানা কর্তৃপক্ষ সরাসরি বর্জ্য ফেলছে। এতে করে অনেকেই নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। দ্রুত এর প্রতিকার চাচ্ছি।’
খাদুন এলাকার নুর আলম বলেন, ‘এই জায়গাটিতে খেলার মাঠ থাকায় আমরা খেলাধুলা করতে পারতাম। বর্তমানে দখল হয়ে যাওয়ায় এখন আর খেলাধুলা করতে পারছিনা। জায়গাটি দখলমুক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।’
নোয়াপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী স্বপন মিয়া বলেন, ‘জায়গাটি যখন খালি ছিল তখন এলাকার পরিবেশ সুন্দর ছিল। বর্তমানে ডাইং কারখানার বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ায় পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে।’
এ ব্যাপারে তারাবো পৌরসভার সাবেক মেয়র শফিকুল চৌধুরী বলেন, ‘এলাকাবাসীর পক্ষে জলাধার ভরাট ও সরকারি সম্পত্তিতে কারখানা স্থাপনে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হয় কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি। গত ২৮ সেপ্টেম্বর আলী আকবর বাদী হয়ে দুদক বরাবর আবেদন করেছেন।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউনিফিল টু ফ্রেবিক্স লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ জামান। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠান শতভাগ রপ্তানিমুখী। প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে আলী আকবর চক্রান্ত করছে। আমার জমি পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে লিজ নেওয়া। কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে সেটা পানি উন্নয়ন বোর্ড দেখবে। আলী আকবর অভিযোগ করার কে?’
কেমিক্যাল মিশ্রিত পানি লোকালয়ে প্রবেশের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠান গ্রিন আর্থ, জনস্বাস্থ্য ক্ষতির কোনো সম্ভাবনা নেই।’
অপরদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নরসিংদী অঞ্চলের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) মো. হুমায়ুন কবির জানান, তিনি দুদক থেকে এ ব্যাপারে একটি নোটিস পেয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি কোনো প্রতিষ্ঠানকে তাদের জমি লিজ দেওয়া হয়নি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমিতে স্থাপনা নির্মাণেরও কোন বিধান নেই। এই ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।









Discussion about this post