’স্বৈরাচারি সরকার যখন ক্ষমতায় ছিল সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকায় নারায়ণগঞ্জ তথা বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় গডফাদার তার (শামীম ওসমান) একক আধিপত্যে ছিল। তার লোকজন আদমজী ইপিজেডকে লুটপাট করে খেয়েছেন। ওই গডফাদার বিশাল একটা অস্ত্রধারী বাহিনী তৈরি করেছিল। শুধু এমনই নয় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মধ্যকার এই সিদ্ধিরগঞ্জের ১০ ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের অধিকাংশ ছিল সন্ত্রাসী গডফাদারের দখলে। ওইসব কাউন্সিলররা লুটেরা। তারা এহন কোনো অপরাধ নাই যে করে নাই। প্রতিটি শিল্প কারখানায় বল প্রয়োগ করে ব্যবসা বাণিজ্য দখল করেছিলেন তারা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। যে ইপিজেড তৈরি করেছে খালেদা জিয়ার সরকার সেই ইপিজেডকে নিয়ে সন্ত্রাসীরা মেতে উঠেছিল সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে। অস্ত্রের প্রদর্শন করেছে, সাধারণ মানুষকে হুমকি দিয়েছে।’
এভাবেই শামীম ওসমান কে ঈঙ্গিত করে শুক্রবার (১ নভেম্বর) বিকেল ৫ টায় নাসিক ৭ নং ওয়ার্ডে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির আয়োজিত সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব ও অপকর্মে বিরুদ্ধের জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন এমন মন্তব্য করেন।
গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘আদমজী এলাকায় সর্ব বৃহত্তম আদমজী জুট মিল ছিল। সারা বাংলাদেশের মানুষ এই এলাকায় এসে বসবাস করতো। এ এলাকার অন্যান্য কল কারখানায় তারা চাকুরি করতো, ব্যবসা করতো। এক সময় পাকিস্তান আমলে আদমজী জুট মিল অতন্ত্য লাভজনক ছিল। পাকিস্তান আমলের অর্থনীতিতে আদমজী জুট মিলের অনেক অবদান ছিল। তবে পরবর্তীতে অনেক স্বার্থবাদী শ্রমিক নেতারা আদমজী জুট মিলকে লুটেপুটে খওয়ার জন্যে সক্রিয় হয়ে পড়ে। তারা আস্তে আস্তে জুট মিলকে লাভজনক থেকে লোকসানের দিকে নিয়ে যান। প্রতিবছর শতশত কোটি টাকা লোকসান দিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিকে নষ্ট করে দেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, আমি যখন ছাত্র তখন থেকেই এই শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। অনেকেই আদমজী জুট মিলে তাদের লোকজনকে চাকরি দিতে এসতো। কিন্তু আমি কখনো কাউকে চাকরি দিতেও আসি নাই। কোনো অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান হই নাই। দিনদিন যখন আদমজী জুট মিলের দূরাবস্থা দেখে আসছিলাম রাষ্ট্রের ক্ষয়ক্ষতি দেখছিলাম তখন আমি আল্লাহর দিকে তাকিয়ে বলেছি আমাকে যদি আল্লাহ তায়ালা কখনো সুযোগ দেয় তাহলে এই আদমজী জুট মিল আর রাখবো না। পরে ২০০১ সালে যখন আল্লাহ আমাকে সেই সুযোগ করে দিলেন। আপনাদের সমর্থনে আমি ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আপনাদের ভোটে এমপি নির্বাচিত হলাম। এরপর আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন এই আদমজী এলাকার মানুষের শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্ট করে, অনেক মানুষের সন্তানের রক্ত জড়িয়েছে, অনেক মানুষকে নেশাগ্রস্থ করেছে, অনেক শ্রমিকের জীবন নিয়েছে সেই আদমজীকে কিভাবে পরিবর্তন করা যায়। আমাদের দেশনেত্রী খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী তখন বাজেট হবার পূর্ব মূহুর্তে সংসদ সদস্যদের নিয়ে তার বাজেট সভা ঢেকেছিল তৎকালীন অর্থমন্ত্রী মরহুম জনাব সাইফুল রহমান। আমি সেদিন তার কাছে গিয়ে বলেছিলাম আপনার কাছে আমার একটি আবেদন আছে। সে বললো কি আবেদন ? আমি বললাম একদিন জাতির জন্য কল্যানকর ছিল আদমজী জুট মিল। কিন্তু এখন জাতির জন্য এটা দুর্ভাগ্যজনক। এই আদমজী জুট মিলকে বন্ধ করে দিতে হবে, এটার পরিবর্তনে এখানে এক্সপোর্ট হয় এমন শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে হবে।
এছাড়া এখানে শ্রমিক আন্দোলনের নামে যারা নিজেদের স্বার্থ দেখতো তারা এখানে অস্ত্র এবং মাদকের এক স্বর্গরাজ্য কায়েম করেছিল। তখন অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এ এলাকার মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেন, সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠলেই ককটেল রাতে ঘুমাতে গেলে ককটেলের শব্দ শুনতো। এমন এক দাঙ্গা সৃষ্টি হয়েছে যে দাঙ্গায় রাষ্ট্রের রাষ্ট্র ক্ষমতা পরিবর্তন হয়ে গেছে।
সেই সময় জনাব সাইফুর রহমান বলেন, তুমি ম্যাডামের সাথে কথা বলো আমি আমি তোমাকে সাহায্য করবো। এরপর একটা সময় সুযোগ পেলাম ম্যাডামের সাথে কথা বলার। তখন আমি ম্যাডামকে বললাম। তখন ম্যাডাম বললো তুমি অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রস্তাব দিয়েছো । কিন্তু আদমজী জুট মিলের শ্রমিকরা আবার আন্দোলন সংগ্রাম করলে আমার সরকারের কোনো ক্ষতি হয়ে যাবে নাতো ? জবাবে আমি বললাম দেশের স্বার্থে জনগণের স্বার্থে আপনি এ উদ্যোগ নিবেন আপনার পাশে আমি থাকবো।এরপর জনাব সাইফুর রহমানের সাথে আমার দ্বিতীয়বার বৈঠক হয়। তিনি বললেন ম্যাডাম আমাকে বলেছে তুমি তাকে যা বলেছো। আমি বললাম শ্রমিকদের যত পানা দেনা আছে সবগুলো পরিষদ করতে হবে তাদের কেনো কোন ক্ষতি না হয়। তখন বাজেট অধিবেশনে শেষে সাইফুল রহমান আমাকে বললো তোমার কথায় আমি শ্রমিকদের সকল ব্যবস্থা করেছি। একপর্যায়ে সবাইকে টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
এই গুলা কে করেছে ? বিএনপি সরকার ও খালেদা জিয়া সরকার। আমি ছিলাম আপনাদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করার ব্যক্তি। আজ এই আদমজীতে কতো লক্ষ্য লক্ষ্য শ্রমিক কাজ করতে সুযোগ পেয়েছে। আজকে কতো কোটি কোটি বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করে। এটা বিএনপির অবদান।
ওসমান পরিবারের দুই সন্তান নিয়ে গিয়াস বলেন, অয়ন ওসমান আমার সন্তানের মতো, সে একজন রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান, একজন আজমেরি ওসমানও রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান তবে তাদের দিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করিয়েছেন। তারা ছিল সন্ত্রাস।
বিগত সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করে গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘এখানে যে বিকেএমইএ সংগঠন আছে, সেখানে সভাপতি পালিয়ে গেছে। কিন্তু সহ সভাপতি এখন ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে। এই হাতেম স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার প্রধান দোসর। তার বক্তব্য বিবৃতির সব আছে। তাকে দেখে এখন আপনারা বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যবসা দিয়ে নিজেদের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি করছেন, মনে রাখবেন বিএনপির সবাইকে এক সাথে করে ফেললেও গিয়াস উদ্দিনের মাথা গিলতে পারবেন না। আপনাদের ছাড় দেওয়া হবে না, অবিলম্বে এই কমিটি ভেঙে দিয়ে যারা ভালো নিরীহ তাদের দ্বারা কমিটি গঠন করতে হবে। এই কমিটি থাকলে বিএনপি’র বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হবে, অন্তবর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হবে। একটা ব্যবসা বিএনপি নেতার নামে দিয়ে তার সন্তানের নামে হাজারটা ব্যবসা করায়। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমার আহ্বান থাকবে এই সমস্ত দালালদের বিতাড়িত করে আপনারা নতুন কমিটি গঠন করেন ।‘
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি মাজেদুল ইসলামের সভাপতিত্বে জনসমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজিব, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেনসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে সাবেক এমপি ও শিল্পপতিখ্যাত মোহাম্মদ আলীূকে ইঙ্গিত করে গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘ওয়ান ইলেভেনের আহ্বান যে ব্যবসায়ী সংগঠন করেছিল, সেই সংগঠনের নেতৃবৃন্দরাই এদের (আজমেরী-অয়ন) সাহায্য করেছে। ওসমান পরিবারের সাথে সমস্ত মিটিং মিছিলে ছিল। আজ তারা ভিন্ন বেশে সমাজে আসতে চায়, এতটা সহজ নয়। অনেকদিন খেলাধুলা করেছেন কিন্তু এখন বিপ্লব হয়েছে, এখন খেলাধুলা করতে এসে লাফ দিলে কারো দরকার হবে না আপনার হাড়গোড় ভেঙ্গে যাবে।









Discussion about this post