নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার ব্যাপক আলোচিত সমালোচিত হত্যা মামলার আসামী সেই ব্রাজিল বাড়ির কর্ণধার নানা অপরাধের হোতা বিগত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের নাম ভাঙ্গানো ছাড়াও অসংখ্য হত্যা মামলার অন্যতম কুখ্যাত খুনীদের মাস্টারমাইন্ড আজমেরী ওসমানসহ খোদ ওসমান পরিবারের সকল সদস্যদের নিয়মিত মাসোয়ারা দিয়ে জয়নাল আবেদীন টুটুল সেই ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে যমুনা ডিপোর একজন সামান্য প্লেট ধোয়ার হোটেল বয় থেকে কর্মচারী, আর সেই কর্মচারী থেকে তেল চুরি করে বনে গেছেন হাজার কোটি টাকার ধনকুবের।
এই ব্রাজিল বাড়ির তেলচোরদের গডফাদার জয়নাল আবেদীন টুটুল হত্যা মামলা থেকে নিজেকে এবার রক্ষা করতে ফেরদৗস নামের এক মাওলানা নামধারী দালালকে দিয়ে মামলার বাদীকে ম্যানেজ করে আদালতে এফিডেভিট দিতে তৎপরতা চালানোর পাশাপাশি সেই তেলচুরির মহোৎসব অব্যাহত রেখেছে। এ ছাড়াও এই মামলা ছাড়াও পুলিশ কিংবা রাজনৈতিক দলের নেতারা যাতে কোন ধরণের সমস্যা তৈরী করতে না পারে সেই লক্ষ্যে কোটি কোটি টাকা দিয়ে পুলিশ ও স্থানীয় প্রভাবশালী, দুদক কর্মকর্তা ছাড়াও্ ডিআইজি পর্যায়ের এক কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেছে তদ্বির চালাচ্ছে নিজেকে রক্ষা করতে।
সোনারগাঁ থানায় দায়ের করা হত্যা মামলার অসংখ্য আসামী গ্রেফতার হলেও সেই হত্যা মামলার এজাহার নামীয় আসামী হয়েও ফতুল্লার ব্রাজিল বাড়ির সেই মহাধূর্ত টুটুল কখনো প্রেসক্লাব, কখনো উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তা কখনো সেই আজমেরী ওসমানের মতো নেতাদের নাম-পবিচয় ব্যবহার করে এখনো বীরদর্পে তেল চুরিসহ অপারাধের সকল কর্মকান্ড অব্যাহত রেখেছে ।
অসংখ্য অভিযোগ এবং সকলে মুখে উচ্চারিত হওয়া এমন আলাউদ্দিনের চেরাগের বিষয়ে খোঁজ নেয়া ছাড়াও গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য সূত্রে জানা যায়, ফতুল্লার লালপুরে ব্রাজিল বাড়ির মালিক জয়নাল আবেদীন টুটুল। বিশাল অট্টালিকা । তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের কুতুবপুর ইউনিয়নের আব্দুল্লাহপুর মজুরটেক। গ্রামের স্কুলে ফাইভ পর্যন্ত লেখাপড়া করে নারায়ণগঞ্জে চলে আসে। তার বাবা রফিক মিয়া ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার পঞ্চবটিতে অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি যমুনা অয়েল কোম্পানির সিকিউরিটি গার্ড। বাবার মৃত্যুর পর যমুনা অয়েল কোম্পানিতে চাকরি পায় টুটুল। নো ওয়ার্ক নো পে পদ্ধতিতে যমুনা অয়েল কোম্পানির খাবার হোটেলের ক্যান্টিনে থালা বাটি ধোয়ার কাজে দৈনিক ৫৫ টাকায় বেতনে চাকরী নেয় টুটুলের। চতুর টুটুল পরবর্তীতে যমুনা অয়েল কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ করা তিনজন কর্মকর্তা ও দুইজন সিবিএ নেতার কল্যাণে টুটুল অপারেটরের পদ চাকারি পান। ভাগ্য খুলে যায় টুটুলের। কারণ প্রতিদিন বিভিন্ন তেলবাহী গাড়িতে তেল চুরির মূল হোতা হলো ওই অপারেটর। এক পর্যায়ে চাকরি নেন গ্রেজারের। গ্রেজার মূলত বড় বড় তেল মাপায় জড়িত। এ থেকেই শুরু করে তেল চুরির মহোৎসব। যা এখনো চলছে অবিরামভাবে ।
যমুনা অয়েল কোম্পানির সংশ্লিষ্টদের মতে, একজন গ্রেজারের দৈনিক আয় কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা। কখনো কখনো মাসে এ টাকার অংক ছাড়িয়ে যায় কোটিতে। মূলত তেল চুরির টাকা দিয়ে ফতুল্লার লালপুরে আলিশান ব্রাজিল বাড়ি গড়ে তুলেন টুটুল।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে যাদের নামে মাত্র ১৫ শতাংশ জমি রয়েছে তাদেরই এখন ফতুল্লার লালপুরে ব্রাজিল বাড়ির পাশাপাশি প্রচুর জমিরও মালিক তারা। নারায়ণগঞ্জের ইউসিবি ব্যাংক থেকে ১০ বছর মেয়াদে ২০ লাখ টাকা লোন নিলেও মাত্র দেড় বছরের ব্যবধানে পরিশোধ করা হয় টাকা। টুটুলের এসব কাহিনী ব্রাজিল বাড়ির বদৌলতে সকলে পজেটিভ বিষয় জানলেও ইতোমধ্যে দুর্নীতির অভিযোগে তাকে একবার বদলিও করা হয়েছে। দুদকে জমা পড়েছে দুর্নীতির অভিযোগ।
তবে ইউসিবিএল ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৩ মার্চ টুটুল ১০ বছর মেয়াদে ২০ লাখ টাকা লোন নেয়। কিন্তু মাত্র দেড় বছরের মাথায় ২০১৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পুরো লোন পরিশোধ করে টুটুল। প্রশ্ন উঠে মাত্র দেড় বছরে ২০ লাখ টাকা টুটুল পেল কোথায় ?
এছাড়াও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফতুল্লার পিলকুনি মৌজায় ৪ শতাংশ জমি, সম্প্রতি ব্রাজিল বাড়ির সন্নিকটে আরও ৮ শতাংশ জমি কিনেছেন টুটুল। অথচ টুটুলের বেতন ২৫ হাজার ৪৬২ টাকা। এই বেতনের একজন কর্মচারী রাতারাতি এতো টাকার মালিক বনে যাওয়ার বিষয়টি আলাউদ্দিনের চেরাগের মতো লাগছে এলাকাবাসীর কাছে। এক পর্যায়ের টুটুলের বিরুদ্ধে যমুনা ওয়েল কোম্পানির একজন দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দেন। দুদকের শুনানীতে টুটুলকে ডাকাও হয়েছিল। তখন দুক এর একজন কর্মকর্তাকে কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে তার সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে।
এমন ঘটনায় জয়নাল আবেদীন টুটুল বিভিন্ন সময়ে দাবি করে গণমাধ্যমকে বলেন, আত্মীয় স্বজন ও পারিবারিক সূত্র ধরেই টাকা-পয়সার মালিক হয়েছেন, বাড়ি করেছেন। তিনি জানান, গ্রামের স্কুলে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণিতে এবং নারায়ণগঞ্জে ৫ম ও ৬ষ্ঠ লেখাপড়ার কথা বলে শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান। তবে বিপুল অর্থ-বিত্ত ও ব্রাজিল বাড়ি নির্মাণের বিষয়ে বলেন, বাবার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমি বিক্রি, বোনদের সহায়তা, ব্যাংক লোন নিয়ে এই বাড়ি করেছেন। আর তার বিরুদ্ধে অহেতুক অপপ্রচার করা হচ্ছে। তার আরও দাবি, ব্রাজিল বাড়ি করার কারণে হিংসা থেকে কেউ তার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে।
যমুনা ডিপোর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ২০০৫ সালে জয়নাল আবেদীন টুটুলের চাকরি স্থায়ী হয়। পরে তদবীর ও টাকা পয়সা খরচ করে কৌশলে সে তার পদবী পরিবর্তন করে অপারেটর (তেল মাপা) পদে পদায়ন হয়। আর অপারেটর হওয়া মানে তেলের ভেতর ঢুকে যাওয়া। মোট কথা সে যেদিন অপারেটর হয়ে গেল সেদিন থেকে তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। তবে অপারেটর হওয়ার পর তার আবার সাধনা হলো সে গ্রেজার হবে। গ্রেজার হলো তেল মাপা, মানে যেখানে বড় মাপের তেল মাপা হয়। মাপের হেরফেরের মাধ্যমে দৈনিক লাখ লাখ টাকা ইনকাম হয়। মাসে কোটি টাকা। ধীরে ধীরে তার ভাগ্যের চাকা খুলে যায়। অল্প দিনের মধ্যে তেল চুরির বিদ্যা রপ্ত করেন তিনি। এরপর রাজনৈতিক আর প্রভাবশারীদের ক্ষমতায় গেরো ১৫ বছরে ডিপোর অঘোষিত মালিক বনে যান এই টুটুল।
যমুনা অয়েল কোম্পানির সংশ্লিষ্টদের মতে, একজন গ্রেজারের দৈনিক আয় কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা। কখনও কখনও মাসে এ টাকার অংক কোটিও ছাড়িয়ে যায়। প্রতি দিন হাজার হাজার লিটার তেল চুরির সিন্ডিকেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন টুটুল। যমুনা অয়েল কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ করা তিনজন কর্মকর্তা ও দুইজন সিবিএ নেতার সমন্বয়ে একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠা। ওই সিন্ডিকেটের ইশারায় পদায়ন, পদোন্নতি, নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য হয়। এক সময় টুটুলের অপকর্ম দৃষ্টিগোচর হলে তাকে বদলি করা হয় যুমনা ডিপোর সুনামগঞ্জ জেলায় সাজনা বাজার শাখায়। কিন্তু সে বেশি দিন সেখানে থাকেনি। ফতুল্লায় চলে আসে।
দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে এই ডিপোতে কাজ করা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী জানান, ধরেন ১৫ লাখ লিটার তেল জাহাজে এসেছে। ১৫ লাখ লিটার ট্যাংকিতে উঠেছে কাগজে কলমে। কিন্তু এই ১৫ লাখ লিটার তেল যে বিক্রি করা হচ্ছে তাতে গাড়িওয়ালাদের কম দিয়ে নিজেরা ওই তেল একসেস করে। যেমন একটি গাড়ি পাবে ১ হাজার মিলি। কিন্তু দুই থেকে তিন মিলি কম দেয়া হচ্ছে। তাহলে তিন মিলিতে ৯ লিটার কম, ২ মিলিতে ৬ লিটার কম। এই তেলটা তারা বাহিরে বিক্রি করে দেয়। ট্যাংকির ভেতর ১৩ লাখ তেলের সঙ্গে ২ লাখ লিটার পানি থাকার কথা। সেখানে পাওয়া গেছে ৪ লাখ। এ ঘটনায় ঝামেলা তৈরি হলে টুটুলকে এই ডিপো থেকে বদলী করা হয় সুনামগঞ্জ জেলায় সাজনা বাজার শাখায়।
বিগত সময়ে এতো অপরাধ ছাড়াও আওয়ামীলীগের শাসনামলের ১৫ বছর নারায়ণগঞ্জের কুখ্যাত গডফাদার শামীম ওসমাসনের সকল সহাযোগিদের পাশাপাশি আজমেরী ওসমসানকে সাথে নিয়ে ডিপোর ভিতেরের সকল লুটপাটের দৃশ্য দেখানোর পর কর্মকর্তাদের হত্যাসহ লাশ গুম করে দেয়ার হুমকি দিয়ে হাজার কোটি টাকার তেল চুরি করে ধনকুবের বনে যায় এই জয়নাল আবেদীন টুটুল ।
এমন ঘটনায় জয়নাল আবেদীন টুটুলের নানা অপকর্মের বিশাল ফিরিস্তি উঠে আসার পর অসংখ্য বার নানাভাবে ফোন করে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষদে বার্তা দিয়ে বক্তব্যে চেয়ে যোগাযোগ করলেও জয়নাল আবেদীন টুটুল কোন মন্তব্য না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায় নাই।









Discussion about this post