ফতুল্লার চরাঞ্চল বক্তাবলীর দূর্গম এলাকায় স্কুল ছাত্র ইমনকে ৯ টুকরো করে হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২ আসামিসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
২৪ নভেম্বর (রোববার) গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জস্থ র্যাব-১১ এবং চট্টগ্রাম পতেঙ্গাস্থ র্যাব-৭ এর চৌকস দল যৌথ অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর কর্ণফুলী থানাধীন চরলক্ষ্যা এলাকায় থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
শিশু ইমন হত্যায় জড়িত গ্রেপ্তারকৃত হলেন- আহম্মদ আলী (৬৬), সেন্টু মিয়া (৩৬) এবং হোসনা বেগমকে (৫৮)।
এদের মধ্যে আহম্মদ আলী ও সেন্টু মিয়া সম্পর্কে পিতা পুত্র ও হোসনা বেগম আহম্মদ আলীর স্ত্রী।
এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সোমবার (২৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় র্যাব-১১ সিপিসি-১ এর কোম্পানী কমান্ডার উপ-পরিচালক ও মেজর অনাবিল ইমাম আসামীদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার সুত্র থেকে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার ফতুল্লার চরাঞ্চল বক্তাবলীর কানাইনগরের দূর্গম এলাকায় ২০১১ সালে স্কুলছাত্র ইমন হোসেনের বড় ভাই ইকবাল (সিঙ্গাপুর প্রবাসী) এর সঙ্গে চাচা আহাম্মদ আলীর সাথে নানা বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে ইকবালের লাঠির আঘাতে চাচা আহাম্মদ আলীর রক্তাক্ত যখম হয় ।
এমন দ্বন্দ্বের কারণে দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধ মারাত্মক আকার ধারণ করে। এরই মধ্যে ইকবালকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়ায় সিঙ্গাপুর চলে য়ায় ইকবাল ।
হুমকির প্রায় ২ বছর পর ইকবালের পরিবারের ওপর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ইমনকে হত্যার পরিকল্পনায় মেতে উঠে আহাম্মদ আলী।
আর সেই পরিকল্পনা মোতাবেক ২০১৩ সালের ১৩ জুন রাত সাড়ে ৮টায় ইমনকে তাদের ঘরে ডেকে নেন চাচা সিরাজ মিয়ার স্ত্রী সালমা বেগম।
সালমা বেগম নিজেই শিশু ইমনকে ভাতের সাথে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ার পর ইমন অচেতন হয়ে পরলে শিশু ইমনকে একটি নৌকায় করে নাহিদসহ অন্য হত্যাকারীরা মিলিত হয়ে বাড়ির অদূরের একটি ধইঞ্চা ক্ষেতে নিয়ে ৯ টুকরো করে হত্যার পর ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে দেয় খন্ডিত দেহ।
শিশু ইমনের এমন খন্ডিত লাশ উদ্ধারের সাথে সাথে পুরো এলাকায় লোকজন হত্যাকারীদের বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় ।
শিশু ইমন কানাইনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র থাকাবস্থায় এমন নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনায় ইমনের বাবা ইসমাঈল হোসেন রমজান ২৪ জুন ৯ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ৪-৫ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন ফতুল্লা থানায়।
পরবর্তীতে গ্রেপ্তারকৃত নাহিদ ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে দেয়। স্বীকারোক্তিতে নাহিদ বিজ্ঞ বিচারকের খাস কামড়ায় অকপটে জানায়, ইমনের কিলিং মিশনে নাহিদসহ ৬ জন ছিল।
এই মামলায় নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (দ্বিতীয়) আদালতের বিচারক বেগম সাবিনা ইয়াসমিন ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ২০২২ সালের ২০ মার্চ ইমনকে ৯ টুকরো করে হত্যা মামলায় ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।
ওই রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নাহিদ হাসান, আহাম্মদ আলী, সিরাজ, সেন্টু মিয়া। একই সাথে এই নামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন-সালমা বেগম ও হোসনে আরা। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নাহিদ হাসান ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত সালমা বেগম আদালতে উপস্থিত থাকলেও অন্যরা পলাতক ছিল।
উল্লেখিত গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নারায়নগঞ্জ জেলার ফতুল্লা মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানায় র্যাব।









Discussion about this post