আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গোপন বন্দীশালা বা ‘আয়নাঘর’ থাকার কথা স্বীকার করেছে র্যাব। ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধে জড়াবে না বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
আজ (১২ ডিসেম্বর) বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময় সভায় এক প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন র্যাবের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট বাহিনীটির মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান দায়িত্ব নেয়ার পর এমন মন্তব্য করেন।
উক্ত সভায় র্যাব মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, “র্যাব সৃষ্টির পর থেকে যেসব জনসাধারণ র্যাব সদস্যদের দ্বারা নির্যাতিত, অত্যাচারিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের কাছে এবং নারায়ণগঞ্জের সাত খুনসহ যাঁরা র্যাবের দ্বারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, তাঁদের পরিবারের কাছে আমরা দুঃখপ্রকাশ করছি এবং ক্ষমা প্রার্থনা করছি।“
এর পূর্বেও ৫ ডিসেম্বর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নির্বিচার গুলি ও হত্যার ঘটনায় শহীদ পরিবারগুলোর কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছিলেন পুলিশের নব নিযুক্ত মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।
পরবর্তীতে ৯ ডিসেম্বর জুলাই আন্দোলনে অপেশাদার আচরণের জন্য ক্ষমাও চান ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। আজ আবার র্যাবও অতীত অপরাধের জন্য ক্ষমা চাইলেন এ কে এম শহিদুর রহমান।
অতীতে র্যাবের অপরাধের সুষ্ঠু বিচার চেয়ে র্যাব মহাপরিচালক বলেন, “আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আমি যত দিন দায়িত্ব পালন করব এবং আমার এই কর্মকর্তারা যাঁরা দায়িত্বে আছেন, তাঁরা কখনো কারও নির্দেশে গুম, খুনের মতো ফৌজদারি অপরাধে জড়িত হবে না । নির্যাতন ও অত্যাচারের মতো ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে যেন বিচার হয়, সেটা আমরা প্রত্যাশা করি।”
দায়মুক্তি চেয়ে র্যাবের মহাপরিচালক বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গুমের ঘটনা তদন্তে কমিশন করেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই ধরনের অপরাধ আমলে নিয়ে বিচারকার্য পরিচালনা করছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে র্যাবের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আছে, সেগুলোর বিচার হবে বলে জানান তিনি। বিচারের মাধ্যমে র্যাবের দায়মুক্তি সম্ভব বলেও জানান এ কে এম শহিদুর রহমান ।
কঠোর বার্তা দিয়ে র্যাব মহাপরিচালক বলেন, “যদি কোনো সদস্য নিজ দায়িত্বে কোনো ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত হয়, তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিবো। যেটা ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আমরা নিয়ে আসছি।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নে র্যাবের গোপন বন্দিশালা বা আয়নাঘরের অস্তিত্ব নিয়ে বাহিনীর মহাপরিচালক বলেন, ‘র্যাবে আয়নাঘরের যে বিষয়টি এসেছে, সেটি ছিল, আছে। কমিশন (গুমের ঘটনা তদন্তে কমিশন) আমাদের নির্দেশ দিয়েছে যা যে অবস্থায় আছে, সেই অবস্থায় রাখার জন্য। কোথাও কোনো ধরনের পরিবর্তন বা পরিবর্ধন যেন না করা হয়, যা যেভাবে ছিল সেগুলো আমরা ওই ভাবেই রেখেছি ।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র্যাব প্রধান আরো বলেন, ‘আমি র্যাবে কর্মরত আছি। র্যাবে আমরা যত দিন আছি, আমাদের ওপর যে দায়িত্ব তা নিষ্ঠার সঙ্গে, আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করব। বিলুপ্তির ব্যাপারে সরকার যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে, সেটাই শিরোধার্য।’
র্যাব মহাপরিচালক সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, মামলাটি হাইকোর্টের আদেশে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই কমিটিতে র্যাবের প্রতিনিধিও রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে র্যাবের সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।









Discussion about this post