উত্তপ্ত রূপগঞ্জ। কথিত স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতা কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে ২ জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৩০ জন আহত হলেও পূর্বের ন্যায় এখনো রয়েছে অশান্ত। পাল্টাপাল্টি গুলি ও ককটেল নিক্ষেপের ঘটনায় এখনো আতংক বিরাজ করছে পুরো এলাকায় ।
একদিক দিপু ভূইয়ার অনুসারী অপরদিকে সংঘর্ষের সময় অনলাইন ক্যাসিনোকাণ্ডে আলোচিত সমালোচিত সেলিম প্রধান ওরফে ডন সেলিমের বাড়িঘরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ঘটনা ঘটে।
এমন সংঘর্ষে মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও ধাওয়া পল্টা ধাওয়ার ঘটনায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ঢাকা সিলেট মহাসড়ক।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারী) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনায় প্রায় দেড় ঘণ্টা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল।পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেও ওই ঘটনায় আজ বুধবার রাত আটটা পর্যন্ত কোন মামলা দায়ের হয় নাই।
তবে আজ বুধবার দিবাগত রাতে একটি মামলা দায়ের হবে বলে নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেটকে নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (গ-সার্কেল) মেহেদী ইসলাম।
ওই সংঘর্ষে ৬ জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৩০ জন আহত হরেও তাৎক্ষণিকভাবে ১১ জনের নাম জানা গেছে।
আহতরা হলেন ছাত্রদল কর্মী মো. রাফি আহমেদ, রাজু ভূঁইয়া, স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী মো. ইমন, মো. রফিকুল ইসলাম, রুহুল আমিন, মনির হোসেন, ইয়ার হোসেন, তরিকুল ইসলাম, বিনয় বাবু, নুরুল ইসলাম ও মো. রাজু। আহতদের মধ্যে ছাত্রদলের কর্মী মো. রাফি আহমেদ ও রাজু ভূঁইয়া গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাঁদের দুজনকে নিজের অনুসারী ছাত্রদলের কর্মী বলে দাবি করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মো. মাসুদুর রহমান। তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্য আহতরা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলামের অনুসারী।
দিপু ভূইয়ার অনুসারী স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেছেন, “মঙ্গলবার ভুলতা স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে একটি সন্ত্রাসবিরোধী মিছিল নিয়ে গোলাকান্দাইলের দিকে যাচ্ছিলো। মিছিলটি সেলিম প্রধানের বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় বাড়ির ছাদ থেকে একদল সন্ত্রাসী অতর্কিত গুলি ছোড়ে এবং দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এতে অন্তত ২০ জন নেতা–কর্মী আহত হয়েছেন। পরে স্থানীয় লোকজন উত্তেজিত হয়ে সেলিম প্রধানের বাড়ির সামনে থাকা কিছু যানবাহনে আগুন দিয়েছে। সংঘর্ষের সময় বেশ কিছু মোটরসাইকেল ও একটি গাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।

ছাত্রদল নেতা অনুসারী মাসুদুর রহমানের দাবি, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা–কর্মীরা মিছিল নিয়ে সেলিম প্রধানের বাড়ি দখল করতে আসেন। এ সময় তাঁর অনুসারী ছাত্রদল নেতা–কর্মীরা সেলিম প্রধানের বাড়ির ছাদে অবস্থান করছিলো এবং ভিডিওি করাকালীন সময়ে উত্তেজিত হয়ে বাড়িতে হমলার সময় বাধা দিলে মিছিল থেকে নেতাকর্মীদের ওপর গুলি ও বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এতে তাঁর অন্তত ১৬/১৭ জন নেতা–কর্মী আহত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেই আরো বলেন, ১১টা থেকে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষ থেমে থেমে ২টা পর্যন্ত চলে। সংঘর্ষে অনেক দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে দেখা যায়। মুহুর্মুহু গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের শব্দে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ওই সময় ঢাকা–সিলেট মহাসড়ক ঘেঁষে থাকা সেলিম প্রধানের বাড়ির ছাদ থেকে নিচে ককটেল ছোড়া হয়। নিচে থাকা লোকজনও পাল্টা গুলি ও ককটেল ছোড়ে।
ডন সেলিমের বাড়ির সামনে থাকা অন্তত ১০টি মোটরসাইকেল, ১টি গাড়ি ও বাড়ির ১টি টিনশেড ঘরে আগুন দেন। এ সময় মহাসড়কে প্রায় দেড় ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকলে সড়কের উভয় পাশে লম্বা যানজট তৈরি হয়। সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ চেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
সেলিম প্রধানের অভিযোগ, রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমানসহ কয়েকজন তাঁর ১৬ বিঘা জমি দখল করে আড়ত গড়ে তোলেন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হাবিবুর রহমান পালিয়ে যান। তবে হাবিবুরের পক্ষে তাঁর ভাতিজা আইয়ুব খান ও মজিবুর রহমান স্থানীয় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আড়ত দখলে রাখেন। আড়তের মালিকানা বুঝে পেতে তিনি আদালতে মামলা করেছেন। এ নিয়ে সোমবার তিনি স্থানীয় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে একটি মানববন্ধন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার সকালে আইয়ুব ও মজিবুর রহমান আওয়ামী লীগ ও বিএনপির লোকজন নিয়ে মিছিল করে এসে তাঁর বাড়িঘরে হামলা চালান। এ সময় বাড়ির নিচে থাকা ১টি গাড়ি, ১টি টিনশেড ঘর ও ১০টি মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। হামলাকারীরা বাড়িতে ককটেল ও হাতবোমা নিক্ষেপ করেছেন বলেও সেলিম প্রধানের অভিযোগ।
ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ১০টি গুলির খোসা ও একটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (গ-সার্কেল) মেহেদী ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ ওই ঘটনায় আজ বুধবার রাতে একটি মামলা দায়ের হবে। একই সাথে আমরা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে কাজ শুরু করেছি।’









Discussion about this post