ফতুল্লায় মাত্র তিন লাখ টাকা মুক্তিপণের জন্য হাবিবুর রহমান হাবিব নামের এক যুবককে হত্যার ঘটনায় পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে স্বামী-স্ত্রীসহ পাঁচ (৫) জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারী) রাতে নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা ও মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
নারায়ণগঞ্জ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) মোহাম্মদ হাসিনুজ্জামান-এর নেতৃত্বে উপ পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম ও ওয়াসিম খানসহ একটি বিশেষ দল অভিযানটি পরিচালনা করে।
হাবিব হত্যাকান্ডে গ্রেফতারকৃতরা হলো : মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর থানার দানেছপুরের মৃত জলিল মিয়ার পুত্র সিদ্দিক(৫২) ও পটুয়াখালী জেলার সদর থানার হাজীখালা গ্রামের আব্দুল সাত্তার পেয়াদার পুত্র নুরুজ্জামান (৩৫), পটুয়াখালী জেলার সদর থানার মাদারবুনিয়ার মোঃ ইউসুফ আকনের পুত্র কবির ওরফে সগির হোসেন (৩৮), মুন্সিগঞ্জ জেলার সদর থানার হাতিমারার মজিদ আলী সৈয়ালের মেয়ে ও সগিরের স্ত্রী রেহেনা বেগম (২৫), নারায়নগঞ্জ জেলার বন্দর থানার চর ইসলামপুরের আসমত আলীর পুত্র আরিফ (২৫)।
ফতুল্লা থানার পুলিশ জানায়, হত্যাকান্ডের শিকার যুবক হাবিবুর রহমান (২১) নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বাসিন্দা। ২৪ জানুয়ারি রাতে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা উল্লেখিত আসামীরা। ২৪ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৮টার দিকে হাবিবের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর থেকে তার বাবা মো. আজিজুল হকের (৪৮) এর কাছে একটি ফোন আসে। হাবিবের ফোনে অজ্ঞাত ব্যক্তি জানায়, হাবিবকে অপহরণ করে আটকে রাখা হয়েছে, ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে, না হলে তাকে মেরে ফেলা হবে।
ওই ফোনের ঘটনায় হাবিবের বাবা জানান, তিনি পেশায় ভ্যানচালক, এতো টাকা দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি ছেলের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে অপহরণকারীরা ফোন কেটে দেয়। রাত ১২টার দিকে আবারও ফোন করে টাকা দাবি করা হয় এবং এরপর থেকে হাবিবের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এর চারদিন পর ২৮ জানুয়ারি ফতুল্লার আমতলা হরিহরপাড়া এলাকার স্বপন সরকার (৪০) এর বাড়ির নিচতলার দক্ষিণ পাশের ফ্ল্যাট থেকে হাবিবের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর ২৯ জানুয়ারি ফতুল্লা থানায় মামলা দায়ের করা হয় ।
তদন্তে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডের অভিযুক্তদের শনাক্ত করে ফতুল্লা থানা পুলিশ।
ফতুল্রা থানা পুলিশের তদন্তে জানা যায়, অপহরণকারীরা মুক্তিপণ আদায়ের জন্য হাবিবকে ওই কক্ষে আটকে রাখে। পরে মুক্তিপণের জন্য চাপ দিলে হাবিব চিৎকার করতে থাকলে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়।
তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ সোমবার ১৭ ফেব্রুয়ারী রাতে প্রথমে মুন্সিগঞ্জের হাতিমারা থেকে কবির ওরফে সগির হোসেন ও রেহেনা বেগম কে গ্রেফতার করে। তারা স্বামী স্ত্রী। তাদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক নারায়নগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার শাসনগাঁও এলাকা থেকে আরিফ কে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত আরিফের স্বীকারোক্তি মোতাবেক ঢাকার পোস্তগোলা থেকে সিদ্দিক নামের একজন কে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে সিদ্দিকের স্বীকারোক্তি মোতাবেক ফতুল্লা থানার দাপা ইদ্রাকপুর থেকে নিহতের সহোযোগি নুরুজ্জামান কেও গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত সকলেই প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হাবিব হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি পুলিশের নিকট স্বীকার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত রেহেনা জানান, ভিকটিম হাবিবকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁদে ফেলে একটি নির্দিষ্ট কক্ষে আটকে রাখেন এবং পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে ফোন করে। যখন হাবিব চিৎকার করতে থাকে, তখন তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) মোহাম্মদ হাসিনুজ্জামান জানান, গ্রেফতারকৃত দম্পত্তি কবির ওরফে সগির হোসেন ও রেহেনা বেগম বিভিন্ন স্থানে ঘর ভাড়া নিয়ে মোবাইল ফোনে যুবক-পুরুষদের সাথে সম্পর্ক করে বাসায় ডেকে এনে মুক্তিপণ আদায় করতো এই চক্র । এমন ঘটনার ধারাবাহিকতায় নিহত হাবিবুরের সহযোগি এবং গ্রেফতারকৃত কবির ওরফ সগিরের চাচাতো ভাই নুরুজ্জামানের মাধ্যমে নিহতের সাথে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শারিরীক মেলামেশার লোভ দেখিয়ে বাসায় ডেকে এনে মুক্তিপণ আদায়ে নিহতের পরিবারের নিকট অর্থ দাবী করে হাবিবুর কে নির্যাতন করে। হাবিবুর চিৎকার করলে আসামীরা হাবিবকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ঘরের ভিতর লাশ ফেলে তালাবদ্ধ করে তারা সকলে পালিয়ে যায়।









Discussion about this post