সিদ্ধিরগঞ্জে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের নকল সিল ব্যবহার করে অবৈধ চুন কারখানা পরিচালনা করার অভিযোগে ১২টি কারখানার গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছেন তিতাস গ্যাস অ্যান্ড ট্রান্সমিশন কম্পানি নারায়ণগঞ্জ শাখা কর্তপক্ষ। কারখানাগুলোর অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিষয়টি তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।
ভূক্তভোগী এলাকাবাসীরা জানায়, পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই প্রায় ৯ বছর ধরে এই কারখানাগুলো চলছে। পরিবেশ দূষণ রক্ষার্থে আবাসিক এলাকা থেকে কারখানাগুলো সরিয়ে নিতে পরিবেশ অধিদপ্তর একাধিকবার নোটিশ দিলেও সকলকে বৃদ্দাঙ্গলী দেখিয়ে তা কোনোভাবেই মানছেন না চুনা কারখানার অসাধু চক্র।
দেশের পরিবেশ নীতিমালা ও তিতাস গ্যাস চুরি করে সিদ্ধিরগঞ্জের ঘনবসতি বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় চলছে এসব চুন কারখানা। পাথর পুড়িয়ে চুনা তৈরি করতে এসব কারখানায় সারাক্ষণ দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। ফলে কালো ধোয়া ও আগুণের কারণে বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ।ইতিমধ্যে এসব চুন কারখানাগুলোকে অবৈধ গ্যাস সংযোগের দায়ে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিলো। চুন কারখানার মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ার আবারো তারা কারখানায় গ্যাস সংযোগ দিতে বিভিন্ন দফতরে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।খোজ নিয়ে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নানা অপরাধের হোতা আনোয়ার ইসলামের সিআইখোলা এলাকায় জাজিরা লাইমস, হীরাঝিল আবাসিক এলাকায় সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওমর ফারুকের মদিনা লাইমস, কুখ্যাত অপরাধী চাঁন মিয়ার রনি লাইমস, জালাল মিয়ার সুরমা লাইমস, ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের পার্শ্বে বাবুল মিয়ার ফয়সাল লাইমস, প্রয়াত সুন্দর আলীর শরীফ লাইমস, আটি এলাকায় আরাফাত লাইমস-এর মালিক হযরত আলী, আশরাফ আলী লাইমস-এর মালিক জালাল মিয়া, মিজমিজি সিআই খোলা এলাকায় খোরশেদ মিয়ার ঢাকা লাইমস ও যমুনা লাইমস, সিদ্ধিরগঞ্জ পুল এলাকায় প্রয়াত আবু তালেবের ভাই ভাই লাইমস, মেঘনা লাইমস-এর মালিক আব্দুল হাই, হারুন লাইমস-এর মালিক সাদেক মিয়া। এছাড়াও চুনা ফাঁকি করে পরিবেশ বিপন্ন করে ব্যবসা পরিচালনা করছেন এই ব্যবসায়ী নামধারী অপরাধী চক্র।অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, সরকারি নিয়ম ও পরিবেশ দূষণ রক্ষার্থে আবাসিক এলাকা থেকে এসব কারখানা সরিয়ে নিতে গত ৫ বছর আগে নোটিশ করেন নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তর। এমন নোটিশ ছাড়াও পরিবেশ অধিদপ্তরের অসাধু চক্রকে ম্যানেজ করেও চারিয়ে যাচ্ছে এই অবৈধ ব্যবসা। এরপরেও নির্দিষ্ট সময় বেধে দিয়ে কয়েক দফা নোটিশ করলেও অদৃশ্য কারণে অদ্যাবধি পর্যন্ত এসব কারখানা সরানো হচ্ছে না। প্রায় ৯ বছর ধরে কারখানার পরিবেশ ছাড়পত্র নবায়ন না করেই প্রভাব বিস্তার করেই চালাচ্ছে এই অবৈধ প্রতিষ্ঠান।এ ছাড়াও ট্টেড লাইসেন্স নবায়ন করছেন না করেই নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় কারখানাগুলো বৈধতা হারালেও সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করেই চালাচ্ছে অসাধু চুনা ভাট্টি (কারখানা) অসাধু চক্র ।
সিআইখোলা এলাকার অনেকেই বলেন, প্রশাসন ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে চুনা কারখানাগুলো বহাল তবিয়তে রয়েছে। আবাসিক এলাকায় কাগজপত্র নবায়ন ছাড়া চুনা কারখানাগুলো চালিয়ে আসছে। এলাকাবাসী সকলেই জিমম্ এই অপরাধী চক্রের কাছে । আমরা অবিলম্বে এ সকল অবৈধ চুনা কারখানা অন্যত্র স্থানান্তরের জোর দাবি জানাচ্ছি।
অনুরূপ হীরাঝিল এলাকার বাসিন্দারা বলেন, বেশির ভাগ চুনা কারখানার মালিকরা অবৈধভাবে গ্যাস চুরি করে কোটি কোটি টাকার অবৈধ মালিক বনে গেছে। প্রত্যেকের রয়েছে একাধিক বাড়ি, গাড়ি ও প্রচুর টাকা কড়ি। চুনা কারখানার সঙ্গে বাসাবাড়ি হওয়ায় আমরা খুবই সমস্যায় আছি। তীব্র গরম আর কারখানার কালো ধোয়ায় জনজীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। শিশু ও বয়স্করা শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
কারখানার বৈধতা না থাকা সত্ত্বেও কীভাবে চলছে আবাসিক এলাকায় চুনা কারখানাগুলো এমন প্রশ্নে কথা বলতে রাজি হননি কারখানার মালিকরা। তবে চুনা কারখানার একাধিক মালিক কারখানা স্থানান্তরে পরিবেশ অধিদপ্তরের চিঠি ও ছাড়পত্র নবায়ন না করার সত্যতা স্বীকার করেছেন।
সুরমা লাইমস-এর মালিক জালাল মিয়া এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণমাধ্যমকে বলেন, যখন চুনা কারখানা করেছিলাম তখন ওই এলাকায় ঘনবসতি ছিল না। আমরা পরিবেশ দূষণ করছি না। চুনা আমাদের অনেক কাজে লাগে। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এ এইচ এম রাশেদ এমন ঘটনায় বলেন, ২০১৬ সাল থেকে এসকল চুনা কারখানার মালিকদের পরিবেশের ছাড়পত্র নবায়নের কোন লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে না। কারখানাগুলো অন্যত্র সরাতে একাধিকবার মালিকদেরকে চিঠি দেওয়া হলেও সকল মালিকরা মহামান্য হাইকোর্টে রীট করায় আমরা তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে পারছি না।
তিতাস গ্যাস এন্ড ট্রান্সমিশন লিমিটেড নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়েল ব্যবস্থাপক মোস্তাক মাসুদ মো. ইমরান জানান, চুন কারখানার মালিকরা অবৈধভাবে আমাদের সিল নকল করে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। এমন অভিযোগে তাদের কারখানার গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা এমন ঘটনায় গণমাধ্যমকে বলেন, আবাসিক এলাকায় কোনো অবস্থাতেই চুনা কারখানা পরিচালনা করতে দেওয়া হবে না। এ সকল মালিককে তাদের চুনাভাট্টি অন্যত্র সরানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এমন ঘটনার পর সিদ্ধিরগঞ্জের অনেকেই বলেন, চুনা ভাট্টির এই অপরাধীরা অত্যান্ত ভয়ংকর। এই ভয়ংকর চক্র যে কোন উপায়ে আবার চোরাই গ্যাসের সংযোগ দিয়ে, আইনশৃংখলা বাহিনীকে ম্যানেজ করে এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের অসাধু ওই চিহ্নিত চক্রকে ম্যানেজ করে আবার চালু করবে এই অবৈধ ব্যবসা। পুর্বেও এই বিচ্ছিন্ন বিচ্ছিন্ন নাটক দেখেছে সিদ্ধিরগঞ্জের মানুষ।
যদি সত্যিই পূর্বের ন্যায় অভিযান নামক নাটক মঞ্চায়ন না হয় তাহলে উপকৃত হবে জনসাধারণ এবং উপকৃত হবে রাস্ট্রের রাজস্ব খাত। নয়তো সেই লাউ সেই কদু।









Discussion about this post