সোনারগাঁয়ে জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে দুর্বৃত্তদের হামলায় প্রয়াত চিত্র নায়িকা দিতি ও অভিনেতা সোহেল চৌধুরীর মেয়ে লামিয়া চৌধুরীর পা ভেঙ্গে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আজ শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সোনারগাঁ পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দিয়াপাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা লামিয়ার গাড়ি ভাংচুর করে।
আহত লামিয়া চৌধুরী জানান, ‘জমি দখলের চেষ্টায় ৪০ জনের মতো একটি সন্ত্রাসী দল আমার বাড়িতে হামলা করে। তারা হামলা করে আমার একটি পা ভেঙ্গে দিয়েছে। আমার গাড়ি ভাঙচুর করে। কোনো মতো প্রাণ নিয়ে ঢাকায় পালিয়ে এসেছি।’
এমন ঘটনার পরপর ই ফেসবুকে কয়েক টি স্ট্যাটাস দেন দিতি কন্যা লামিয়া।
অপর একটি স্ট্যাটাসে লামিয়া লিখেছেন, ‘আমার পা ভেঙে ফেলছে ওরা।হসপিটালে যাব, যেতে দেয় না। আমার গাড়িতে ইট মেরে ভেঙে ফেলছে। আমি হাঁটতে পারছি না ।’
আরো একটি স্ট্যাটাসে লামিয়া রিখেছেন, ‘আমার পাশে কি কেউ নেই ? আমার মা-বাবা মারা গেছে বলে আমার পাশে কি কেউ নাই ?’
কারা লামিয়ার ওপর হামলা করেছে তা বিস্তারিত জানা যায় নি। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে লামিয়া সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে জানান।
এমন ঘটনায় পাল্টা অভিযোগ করেছেন লামিয়ার প্রয়াত ছোট মামার স্ত্রী লায়লা লুৎফুন্নাহার শারমিন প্রীতি। প্রীতির দাবি, জমি সংক্রান্ত বিষয়ে বিচারে লোকজন নিয়ে এসে তার (প্রীতি) উপর হামলা চালিয়েছেন লামিয়া।
এলাকবাসী জানায়, লামিয়ার মামা টিপু সুলতান অন্তত ৯ বছর আগে গত হয়েছেন। তবে তার পরিবারের সাথে লামিয়াদের জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলছে। এ নিয়ে আদালতে একটি মামলাও চলমান রয়েছে। শনিবার বিচার-সালিশ বসানো হয়। ওই সময় উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে দু’পক্ষই হাতাহাতিতে জড়ান। তখন লামিয়ার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
ঘটনার দু’জন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, সালিশে লামিয়ার পক্ষের লোকজনও ছিলেন। তার সাথে ঢাকা থেকে আসা কয়েকজনও ছিলেন।
অপরদিকে তার মামা টিপুর স্ত্রী প্রীতি স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি নেতাকে তার পক্ষে ডেকে নিয়ে আনেন। লামিয়ার উপর হামলায় বিএনপির কর্মীরাও অংশ নেন।
উপস্থিত বিএনপির কর্মীরা সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেনের অনুসারী। তিনি নিজেও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বলে াভিযোগ উঠে।
এ বিষয়ে বিএনপি নেতা মোশারফ হোসেন বলেন, “লোকজন শুনেছে শেখ মারুফ (শেখ হাসিনার আত্মীয়) নাকি লামিয়ার পক্ষে এখানে এসেছিলো। এমন খবর পেয়ে কিছু লোকজন সেখানে গিয়েছিলো। মারুফকে পাওয়া যায় নাই। আমার লোকজন কোনো হামলার সাথে জড়িত ছিলো না। মহিলারা মহিলারা এইটা করছে। আর আমিও গিয়েছি ঘটনার অনেক সময় পরে।”
“লামিয়া লোকজন নিয়ে তার মামিকে মারধরও করেছে। এই খবর পাওয়ার পর, আমার বাড়ি যেহেতু পাশেই, তাই গিয়েছিলাম”, এমন মন্তব্যও করেন করেন বিএনপি নেতা মোশারফ হোসেন।
লামিয়ার মামী প্রীতি বলেন, “আমার স্বামী মারা গেছে ৯ বছর। আমার স্বামীর নামে ৩৮ শতাংশ জমি আছে। আমি আমার দুই সন্তানকে নিয়ে বসবাস করি। আমার একটা ছেলে অটিস্টিক। আমার স্বামীর জমি লোকজন নিয়ে এসে দখল করতে চায় লামিয়া। এ নিয়ে সালিশ বসলে লামিয়া ঢাকা থেকে লোকজন নিয়ে এসে আমার উপর হামলা চালিয়েছে।”
এমন ঘটনায় সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাশেদুল হাসান খান জানান, “মামাদের সাথে লামিয়াদের জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলছিলো। ওই বিষয়ে আজ (শনিবার) একটি সালিশও বসছিল, তখন উত্তেজনা তৈরি হয়। তখন লামিয়ার গাড়িতে হামলার ঘটনাও ঘটে। বিষয়টি নিজেদের মধ্যেই হয়েছে।”
তবে, এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষই এই ঘটনায় লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ করেননি জানিয়ে রাশেদুল হাসান খান বলেন, “বিষয়টি আমরা জেনেছি। কিন্তু লামিয়া এই ঘটনার পরপরই ঢাকায় চলে গেছেন বলে জেনেছি। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি।”









Discussion about this post