ভয়ংকর এই প্রতারক চক্রের হোতা নারায়ণগঞ্জ শহরের নয়াপাড়া এলাকার মৃত গোলাম আলী মাস্টারের (ট্রেনের মাস্টার) তৃতীয় পুত্র গোলাম মোহাম্মদ কালু সারাজীবন কোন কাজ না করেই প্রতারণার বিভিন্ন ফাঁদ তৈরি করায় ছিলো সিদ্ধহস্ত ।
নানা অপরাধ কার্যক্রমসহ চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড চালিয়ে দীর্ঘদিন কারাভোগের পর পিতা ও পুত্র গোলাম মোস্তফা আদর ভয়ংকর ফাঁদে ফেলে পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন কে মহা বিপাকে ফেলে তোলপাড়ের সৃষ্টি করেছে ।
সেই প্রতারক গোলাম মোহাম্মদ কালু ও তার পুত্র গোলাম মোস্তফা আদর মিলিত হয়ে রাজধানীর উত্তরা থেকে ২০১৫ সালের ৭ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসিফ ইমরানকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর আলমগীর হোসেনের বাবুরাইল বউ বাজারের কার্যালয়ে নিয়ে আসে ৷
নারায়ণগঞ্জের এক প্রভাবশালী সংসদ সদস্যের পুত্রের নাম ব্যবহার করে প্রথমে মুঠোফোনে এবং পরে সরাসরি এসে চাঁদা দাবী করে। দাবীকৃত চাঁদার বাহক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসিফ ইমরানকে ব্যবহার করে প্রতারক পিতা ও পুত্র ।
এমন চাঁদাবাজির ঘটনার পর কাউন্সিলর আলমগীর হোসেন তার কার্যালয়ে আসিফ ইমরানকে আটক করে হকিষ্টিক দিয়ে পিটানোর ঘটনা এলাকার অনেকের নজরে আসে ।
এরপর ৯ অক্টোবর বুড়িগঙ্গা নদী থেকে গলাকাটা অবস্থায় আসিফ ইমরানের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। চাঞ্চল্যকর আসিফ ইমরান হত্যা মামলা এখনো কোন কুল-কিনারা করতে পারে নাই সিআইডি। সেই ভয়ংকর খুনি ও প্রতারক চক্রের খপ্পরে পরে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে পুলিশ সুপার বেলায়েত। আর নারায়ণগঞ্জের সেই খুনি ও প্রতারক পিতা পুত্রের খোজে নারায়ণগঞ্জ চষে বেড়াচ্ছে প্রশাসনের অনেক সংস্থা।
যার আংশিক তথ্য উঠে এসেছে গণমাধ্যম কর্মীদের অনুসন্ধানে :
ভয়ঙ্কর প্রতারণা। সরকার ও পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্পর্কের কথা বলে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে ফাঁদে ফেলে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে গোলাম মোস্তফা আদর ও তার বাবা গোলাম মোহাম্মদ কালুর নেতৃত্বে একটি প্রতারক চক্র। বদলির কথা বলে খোদ রাজশাহী রেঞ্জের পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেনের কাছ থেকে নিয়েছে ৫ লাখ টাকা। টাকা চাইতে গেলে উল্টো এসপির বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়। খুনের মামলারও আসামি এই বাবা ও ছেলে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, নিজেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি’র আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বদলির তদবীর করতে চান গোলাম মোস্তফা আদর। আস্থা অর্জনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে প্রতারক বাবা গোলাম মোহাম্মদ কালুর কিছু ছবি পাঠান।
মোবাইল ফোনের কল রেকর্ডে শোনা যায় এসপি বেলায়েতকে আশ্বস্ত করে আদর বলেন, বদলির ব্যাপারে মন্ত্রীকে দিয়ে ফোন করানো হয়েছে। সবচেয়ে হাই লেভেলের তদবির হল আপনারটা। এর ওপর আর কোন তদবির নাই।
মন ভোলানো কথায় ধীরে ধীরে আদরের সঙ্গে সখ্য তৈরি হয় এসপি বেলায়েতের। হঠাৎ একদিন অসুস্থতার কথা বলে, ছবিগুলো পাঠিয়ে এসপির কাছে ১০ লাখ টাকা ধার চান। বদলির আশায় আর মানবিক কারণে ৫ লাখ টাকা দিয়েও দেন এসপি বেলায়েত। তার অভিযোগ, টাকা ফেরত চাইলে তাকে নানা বাহানায় ঘুরায় আদর। কখনও বলে লকডাউন চলছে। আবার কখনও ভিন্ন কথা। এক পর্যায়ে হুমকি দেয়া শুরু করে- আপনার ফ্যামিলি ঢাকায় থাকে, আপনার বাচ্চারা ঢাকায় পড়াশোনা করে, আপনি কি বুঝেন না। আপনি নিরাপত্তা চান না? আপনি তো দূরে থাকেন। কি করবেন? আমি টাকা দিতে পারবো না।
টাকা ফেরত দেয়া তো দূরের কথা। উল্টো, টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে এসপি বেলায়েতের বিরুদ্ধে মামলা করেন গোলাম মোস্তফা আদর। কৌশলে তার অভিযোগের তীর এসপির দিকে। এ ব্যাপারে আদরে বক্তব্য, উনি দাবি করছেন আমি এ বছর টাকা নিছি। এ বছর তো আমি অসুস্থই ছিলাম না। আর আদরের বাবা জানান, তারা ষড়যন্ত্রের শিকার।
ব্যাংক হিসাব দেখে আদরের কথার সত্যতা পাওয়া যায়নি। ১৬ মার্চ আদরই চেকের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা তোলেন এসপি বেলায়েতের অ্যাকাউন্ট থেকে। সে টাকা ফেরত না দিয়ে এসপি পরিবারকে নিয়ে অশ্লীল মন্তব্য আর নানা হুমকি দেন আদর।
কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে বেরিয়ে আসে সাপ। একের পর এক মিলছে বাবা-ছেলের প্রতারণার তথ্য। আদর ও তার বাবা খুনের মামলারও আসামি। ২০১৫ সালে উত্তরা থেকে অপহরণ করে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে খুন করা হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র আসিফ ইমরানকে। বিচার চাওয়ায় উল্টো ৩টি মামলা দিয়ে হয়রানি ও ভয়ভীতি দেখানো হয় এই আসিফের পরিবারকে। সন্তানকে খুনের পরিবর্তে আসামিদের মৃত্যুদণ্ডের দাবি করেন আসিফের মা। আদর ও তার বাবা সব সময় প্রতারণাসহ হত্যাকাণ্ডের মতো অপরাধ করে বেড়ান বলে অভিযোগ আসিফের বাবার।
তবে, অভিযুক্ত গোলাম মোস্তফা ও তার বাবা গোলাম মোহাম্মদ কালু সব অভিযোগ অস্বীকার করছেন।
উল্লেখিত ঘটনা নিয়ে শহরের পাইকপাড়া এলাকায় ব্যাপক অনুসন্ধান করে জানা যায়, তিন ভাইয়ের মধ্যে গোলাম মোহাম্মদ কালু সারাজীবন প্রতারণা করেই যাচ্ছে । তিন ভাই ও তিন বোনের পরিবারের কেউ গোলাম মোহাম্মদ কালুকে পরিচয় দিতে কুন্ঠাবোধ করেন ৷ ঘনিষ্ঠ স্বজনদের অবেকেই বলেছেন কালু ও তার পরিবারের কাউকেই কোন অনুষ্ঠানে তাদের নিমন্ত্রণও করা হয় না এমন অপকর্মের কারণে। গোলাম মোহাম্মদ কালু তার পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করে এখন কোথায় থাকেন তা কেউ বলতে পারে নাই ।









Discussion about this post