বিশ্বে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে নারায়ণগঞ্জের তল্লা মসজিদ ট্রাজেডি । নামাজরত অবস্থায় এতো মুসুল্লী অগ্নিদগ্ধ হয়ে একসাথে এমন নির্মমভাবে মৃত্যু বরণ করবেন তা কেউ চিন্তাও করতে পারেন নাই । এ রিপোর্ট লেখাকালীন সময় ১০ সেপ্টেম্বর (বুধবার দিবাগত রাত ১২টা ৩০ মিনিট) তল্লা বড় মাসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণে মৃত্যুর সংখ্যা ২৮ । আরো ৮ জন মুসুল্লী মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন । তাদের অবস্থা আশংকাজনক বলে জানিয়েছেন শেখ হাসিনা বার্ণ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকগণ
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার তল্লার বায়তুস সালাত জামে মসজিদের আশেপাশে খোঁড়াখুড়ির পর তিতাস গ্যাস কোম্পানির প্রধান ও সংযোগ লাইনের পুরোটা উন্মুক্ত হয়েছে।
বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) পুরো লাইন উন্মুক্ত করার পর আরও ছয়টি ছিদ্র পাওয়া যায়। এর আগেও তিনটি লিকেজ পাওয়া যায় একটি সংযোগ লাইনে। ছয়টি লিকেজের বাইরে আর কোন লিকেজ পাওয়া যায়নি। এই লিকেজ থেকেই মসজিদের ভেতর গ্যাস জমা হয়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটেছে। সর্বশেষ তদন্তে এমনটাই পাওয়া গেছে।
আজ বৃহস্পতিবার ১০ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে জেলা প্রশাসন ও তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটি।
গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে এশার নামাজের সময় সদর উপজেলার পশ্চিম তল্লার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দগ্ধ ৪২ জনের মধ্যে এখন পর্যন্ত ২৮ জন মারা গেছেন। শুরুতে মসজিদের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ (এসি) যন্ত্র বিস্ফোরণে এ ঘটনা ঘটে বলে ধারণা করা হলেও মসজিদের ভেতরে গ্যাসের বুদ বুদ দেখতে পাওয়ার পর গ্যাস বিস্ফোরণের বিষয়টি সামনে আসে। তিতাসের লাইনের লিকেজ থেকে মসজিদের ভেতর জমা হওয়া গ্যাসেই এ বিস্ফোরণ হয়েছে বলে অভিযোগ ছিল মসজিদ কমিটি ও স্থানীয় লোকজনের। গ্যাসের বিষয়টিকে সামনে রেখেই গঠিত হয় চারটি তদন্ত কমিটি।
গত রোববার গ্যাসের লাইন ও লিকেজ খুঁজতে মসজিদের সামনের সড়কে মাটি খোঁড়াখুড়ি শুরু হয়। টানা তিনদিন পূর্ব ও উত্তর পাশের সড়কে খোঁড়াখুড়ি চালিয়ে তিতাস গ্যাসের প্রধান ও সংযোগ লাইনগুলো উন্মুক্ত করা হয়।
মসজিদের উত্তর পাশের সংযোগ লাইনে ছয়টি লিকেজ পাওয়া যায়। লিকেজগুলো বন্ধ করে মসজিদের মেঝে পানি দিয়ে পূর্ণ করে গ্যাস পুনরায় সরবরাহ চালু করে পরীক্ষা করা হয়। পর্যবেক্ষনে মসজিদের ভেতরের মেঝেতে গ্যাসের কোন বুদ বুদ পাওয়া যায়নি।
এ সময় তিতাসের তদন্ত কমিটির প্রধান, ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের প্রতিনিধি, গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সর্বশেষ বুধবার রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মসজিদের ভেতরে কোন স্থানে আর কোন বুদ বুদ দেখা যায়নি।
বিস্ফোরণের পর ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা ধারণা করেছিলেন, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে উৎপন্ন আগুনের স্ফুলিঙ্গ (স্পার্ক) এবং লিকেজ থেকে মসজিদের ভেতরে জমা হওয়া গ্যাস এই দুই মিলে ভয়াবহ বিস্ফোরণটি হয়েছে। মসজিদের পাশেই গ্যাস লাইনে লিকেজ খুঁজে পাওয়ার পর বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে।
জেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের গঠিত দুই তদন্ত কমিটিরই সদস্য নারায়ণগগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন।
জানতে চাইলে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘পুরো গ্যাস লাইন উন্মুক্ত করে ছয়টি লিকেজ পাওয়া গেছে। এই লিকেজগুলো থেকেই মসজিদের ভেতর গ্যাস জমা হয়েছিল। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে সৃষ্ট স্পার্ক এবং জমা হওয়া গ্যাসেই এই ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়েছে।’ তিতাস ও জেলা প্রশাসনের চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার দেওয়া হবে বলেও জানান আব্দুল্লাহ আল আরেফিন।
মঙ্গলবার বিকেলে তিতাসের তদন্ত কমিটির প্রধান মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) আব্দুল ওহাব তালুকদার বলেন, ‘মসজিদে বিস্ফোরণের কারণ উদঘাটনের জন্য অনুসন্ধান করে মসজিদের বাইরে পূর্ব পাশের গলিতে রাস্তার নিচে অনুসন্ধান করে গ্যাস পাইপ লাইনে ছয়টি লিকেজ পাওয়া যায়। পরে লিকেজগুলো বন্ধ করে মসজিদের ভেতরে পানি দিয়ে গ্যাস লাইনে গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হলে মসজিদের ভেতরে কোন লিকেজ পাওয়া যায়নি। তবে মাটি খুঁড়ে দেখা গেছে গ্যাস পাইপ লাইনের উপর দিয়ে মসজিদটির বেশ কিছু স্থাপনা নির্মাণ করায় পাইপে লিকেজ সৃষ্টি হয়। সেই লিকেজ থেকেই এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।’ এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার জমা দেবেন বলে জানান তিনি।
মসজিদে ভয়াবহ এই বিস্ফোরণের ঘটনায় ফতুল্লা থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়েরের পর বরখাস্ত করা হয়েছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা জোনের ৮ কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে।
মামলায় অবহেলাজনিত কারণে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করেন বাদী উপ পরিদর্শক (এসআই) হুমায়ন কবির। দন্ডবিধির ৩০৪(ক) ধারায় রেকর্ড করা মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। মামলায় বিদ্যুৎ, গ্যাস কর্মকর্তাসহ মসজিদ কমিটির বিরুদ্ধে অবহেলা গাফিলতির অভিযোগ করা হয়েছে। বিস্ফোরণের এই ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন হতাহতের স্বজন ও স্থানীয়রা। তদন্তে চিহ্নিত প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে জানান করেছেন জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম।









Discussion about this post