ব্যাপক তদ্বির, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ ও আইনজীবীদের সাথে শলাপরামর্শ করে শেষ পর্যন্ত নিজেকে রক্ষা করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর শিউলি নওশাদ৷
সাংবাদিক সম্মেলনের পূর্বে ও পরবর্তীতে নানাভাবে ভিকটিমকে ম্যানেজ করতে ৬০ হাজার টাকার বিষয়টি ধামাচাপা দিতে সক্ষম হয়েছেন কাউন্সিলর শিউলি নওশাদ ।
ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার পর বুধবার মধ্যরাতে শুধুমাত্র ইব্রাহিম হোসেন খোকাকে আসামী করে ধর্ষণ ও মারধরের অভিযোগে মামলা করেন ওই নারী । মামলা দায়েরের বিষয়টা মধ্যরাতে নিশ্চিত করেছেন বন্দর থানার ডিউটি অফিসার এএসআই সোহেল রানা ।
সোহেল রানা নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট কে বলেন, শুধুমাত্র ইব্রাহিম হোসেন খোকাকে আসামী করা হয়েছে ।
ধর্ষণের অভিযোগের পর তা টাকা দিয়ে মিমাংসার অভিযোগ তোলা নারীকে সাথে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর শিউলি নওশাদ।
বুধবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে বন্দর প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে কাউন্সিলর দাবি করেন, স্থানীয় পঞ্চায়েতের লোকজনকে নিয়ে মারধরের অভিযোগের বিচার হয়েছিল তার বাসায়।
বিচার শেষে ওই নারী ধর্ষণের বিষয়টি জানালে থানায় গিয়ে মামলার করা নির্দেশ দেন বলে দাবি কাউন্সিলর শিউলি নওশাদের।
বন্দরের দড়িসোনাকান্দা এলাকার আজিজুল হকের ছেলে ইব্রাহিম হোসেন খোকার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন ধর্ষণের অভিযোগ তোলা ওই নারী (৩৬)। ওই নারী জানান, তিন ছেলের জননী ওই নারীর স্বামী ৮ মাস আগে মারা গেছেন। বিধবা নারীর সাথে খোকার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি জানার পর খোকার স্ত্রী ও পরিবারের লোকজন ওই বাড়ি ছেড়ে দিতে বলেন তাকে। দুই মাস পূর্বে ওই বাড়ি ছেড়ে গেলেও যোগাযোগ ছিল তাদের মধ্যে। পরে বিয়ের প্রলোভনে একাধিকবার ধর্ষণের শিকার হন বলে অভিযোগ ওই নারীর।
ওই নারী বলেন, ‘আমার স্বামী নাই। আমার তিনটা ছেলে। প্রেমের সম্পর্ক হওয়ার পর খোকা আমাকে বিয়ে করে ভরণপোষণের দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলে। একাধিকবার আমাকে ধর্ষণ করে।’
তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা রাস্তার উপর সকলের সামনে ইব্রাহিম হোসেন খোকা ও তার স্ত্রী নাজমা আক্তার মারধর করা হয় তাকে। এই ঘটনায় স্থানীয় নারী কাউন্সিলর শিউলি নওশাদের কাছে অভিযোগ জানান তিনি। পরে সেখানে ইব্রাহিম হোসেন খোকার বিরুদ্ধে ধর্ষণেরও অভিযোগ করেন। বিচারে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় ইব্রাহিম হোসেন খোকাকে। এক মাসের মধ্যে এই টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেন কাউন্সিলর শিউলি নওশাদ। তবে এই ঘটনা থানা পুলিশের কাছে কেউ জানাননি। যদিও কাউন্সিলর দাবি করেছেন, ধর্ষণের বিষয়টি জানার পর তিনি থানায় গিয়ে মামলা করার পরামর্শ দেন।
স্থানীয় একটি ডকইয়ার্ডের শ্রমিকের ওই নারীর ছোট ভাই বলেন, ‘আমাদের টাকা নাই। খোকার আত্মীয়-স্বজনরা আমাদের হুমকি দিছে। ভয়ে আমরা থানায় যাই নাই।’
এদিকে এ বিষয়ে জানতে ইব্রাহিম হোসেন খোকার খোঁজে তার বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। খোকার বড় ভাবী পলি বেগম জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই তার দেবর, দেবরের স্ত্রী ও শ্বাশুড়ি বাড়িতে নেই। তাদের ঘরের সামনে তালা ঝুলছে। তারা কোথায় গেছেন জানতে চাইলে কিছুই জানেন না বলেন পলি বেগম। ধর্ষণের অভিযোগের কথা শুনেছেন তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানেন না। তিনি বলেন, ‘ওই নারীরা যাওয়ার পর থেকে ওই ঘর আর কাউকে ভাড়া দেওয়া হয়নি।’
এদিকে এ ঘটনার সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হবার পর বুধবার সকালে ওই এলাকায় যায় বন্দরের মদনগঞ্জ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক আসগর আলী। তিনি ভুক্তভোগী নারী ও স্থানীয় কাউন্সিলরের সাথে কথা বলেন। এই পুলিশ পরিদর্শক জানান, ভুক্তভোগীর সাথে কথা হয়েছে। ওই নারী মামলার সিদ্ধান্ত নিলে থানায় যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
এমন ঘটনার সংবাদ প্রকাশের পর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর শিউলি নওশাদ দ্রুততার সাথে কয়েকজন বিশেষ পেশার লোকজন, কয়েকজন আইনজীবী এবং প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে সকলে প্রথমেই উল্টো প্রশ্ন করেছেন, ” এমন ঘটনায় সালিসি কেন করেছেন ?”
পরবর্তীতে শুরু হয় বানা পরিকল্পনা । এমন পরিকল্পনার ফলশ্রুতিতে বিধবা ওই নারীকে নানাভাবে ম্যানেজ করে সংবাদ সম্মেলনে হাজির করানো হয় । মধ্যরাতে মামলা দায়েরের পর স্বস্তির ঢেকুর দেয় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর শিউলি নওশাদ । (এমন তথ্য ঘনিষ্ঠ সুত্রের)









Discussion about this post