পুলিশের একজন ডিআইজি পর্যায়ের কর্মকর্তার নাম ব্যবহার করে কালু নামের এক পরিবহন ব্যবসায়ী সদ্য অবসরে যাওয়া ওই কর্মকর্তার ভাই/শ্যালক পরিচয়ে অনেক অসংগতি থাকার পরও যত্রতত্র মৌমিতা পরিবহন চালিয়ে যাচ্ছে ।
নারায়ণগঞ্জ থেকে গাজীপুর পর্যন্ত চলাচলরত প্রায় দেড় শতাধিক মৌমিতা বাস চলাচল করছে কোন আইন না মেনেই । মৌমিতা পরিবহনের প্রায় সকল ড্রাইভার ও হেলপাররা যাত্রী সাধারণের সাথে দম্ভাকারে বলে বেড়ায়, “মৌমিতার মালিক হইলো ডিআইজি, এই গাড়ি ঠেকাইবো কে ?”
নারায়ণগঞ্জ শহরে যানজট সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে পরিণত হয়েছে মৌমিতা ট্রান্সপোর্টের বাস। এই বাসগুলো যত্রতত্র একসাথে ৪ থেকে ৫ টি বাস দাঁড় করে যাত্রী উঠানামা করে।
কোনোভাবেই যেন তাদের দমানো যাচ্ছে না। আর এই বিষয়টি নিয়ে স্বয়ং নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ জসিম উদ্দিন চরম বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। সেই সাথে মৌমিতা টান্সপোর্ট সহ অন্যান্য পরিবহনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার কথাও বলেছেন।
জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এই বিরক্তি প্রকাশ ও অভিযানের নির্দেশনা দেন।
‘মুজিব বর্ষের শপথ সড়ক করবো নিরাপদ’ প্রতিপাদ্যকে সামানে রেখে ২২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এই সভার আয়োজন করা হয়। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান।
জেলা প্রশাসক মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, যখনই মেট্রো হল দিয়ে আসি তখনই দেখি মৌমিতার ৩টি বাস একসাথে দাঁড় করিয়ে আমার গাড়ি আটকে দিয়েছে। আমার সঙ্গে থাকা পুলিশ যখন নামে তখন তাড়াহুড়ো করে রাস্তা ছাড়ে। অনেক সময় মনে হয় নিজেই নেমে মারধর করি। পরে ভাবি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে নিজে কিভাবে মারি? আমি যদি মারি তাহলে বিচার কে করবে ? এটা ভেবে থেমে যাই । মৌমিতা এখানেই দেখি একশো। কয়হাজার অনুমতি দেয়া হয়েছে জানি না। ১৩০ টি অনুমতি দেয়া হলে এখানেই থাকে ১৩০ টি।
তিনি আরও বলেন, এসপি সাহেব যেভাবে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামীর নাম তালিকা করে ঝুলিয়েছিলেন তেমনিভাবে অবৈধ বাসগুলোর নাম্বার বিভিন্ন ঝুলিয়ে দেয়ার দরকার। মৌমিতার এই বাসগুলো অবৈধ তালিকা করা হতো তাহলে জনগণই এড়িয়ে চলতো। মৌমিতা যার গাড়িই হোক না কেন, আমার বাবার গাড়ি হোক কেন, ছাড় দেয়ার সুযোগ নাই। যদি পরিচয় দেয় তাহলে তার বিরুদ্ধে আগে শাস্তির ব্যবস্থা করা দরকার।
জেলা প্রশাসক বলেন, শনিবার থেকেই অভিযান শুরু হবে। কার গাড়ির অনুমতি আছে আর কার গাড়ির অনুমতি নাই এটাকে বড় বিলবোর্ডে টাঙ্গিয়ে দেয়া হোক। তাহলে বহুজনের চরিত্র বেরিয়ে আসবে। সবকিছু স্পষ্ট হয়ে যাবে।
পরিবহণ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নিয়মনীতির উপেক্ষা না করেই নারায়ণগঞ্জ থেকে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন রুটে চলাচল করছে মৌমিতা ট্রান্সপোর্ট নামের বাস কোম্পানী। নারায়ণগঞ্জ শহরের কোথাও কাউন্টারের অস্তিত্ব নেই। ফলে নারায়ণগঞ্জ থেকে শুরু করে সাইনবোর্ড পর্যন্ত সারা রাস্তা জুড়েই যেন তাদের কাউন্টার। সেখানে ইচ্ছা সেখান থেকেই যাত্রী উঠানামা করছে।
প্রতিদিন নারায়ণগঞ্জ থেকে চন্দ্রা, ইপিজেড, নবীনগর, সাভার, হেমায়েতপুর, গাবতলী, শ্যামলী, আসাদগেট, আজিমপুর, বকশীবাজার, চানখারপুল চলাচল করছে এই বাসটি। রুট পারমিট কাগজপত্রে কি আছে না আছে তা নিয়ে তাদের কোনো ভাবনা নেই। কথাছিল বাস ছাড়া হবে ২নং রেলগেট থেকে এবং তা বঙ্গবন্ধু সড়ক হয়ে চাষাঢ়া গোলচত্তর ঘুড়ে প্রবেশ করবে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে। কিন্তু বাস্তবে তার উল্টো চিত্র। যাত্রী উঠানো হচ্ছে খানপুর ৩শ’ শয্যা হাসপাতালের সামনে থেকে ভাসমান অবস্থায়।
এরপর যাত্রী উঠানো হয় চাষাঢ়া শহীদ মিনারের সামনে থেকে। সেই সাথে শহীদ মিনারে পেরিয়ে চাষাঢ়া আর্মি মার্কেটের সামনে থেকেও যাত্রী উঠানো হয়। ফলে চাষাঢ়া গোল চত্ত্বর এলাকাতেও যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই মৌমিতা পরিবহণের বাস।









Discussion about this post