বিগত বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে জামায়াত ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল ও সংসদ সদস্য আবু তাহেরের শেল্টারে নারায়ণগঞ্জে নানা অপরাধ কর্মকান্ডচালিয়ে আসছিলোন । কুমির্লা তেকে ঢাকা যাতায়াতে সময় প্রয়াত জামায়াতের নেতা আবু তাহের বিড়ি সুরুজের মালিকানাধীন মদনপুরের সুরুজ মিয়া গ্রুপ অর ইন্ডাস্ট্রিজের দপ্তরের অবস্থান করেই রওয়ানা হতের তার গন্তব্যে । মূলতঃ বিড়ি সুরুজকে যেমন নানাভাবে সহায়তা করতেন বিড়ি সুরুজকে ঠিক তেমনি আবু তাহেরের নির্বাচনকালীন সকল ব্যয় করতেন সুরুজ মিয়া ওরফে বিড়ি সুরুজ । বিএনপি জামায়াত জোট সরকার ২০০৬ সালের পর ক্ষামতায় আর না আসায় একেবারেই াথ্যান্ত গোপনীয়তায় সুরুজ মিয়া তার কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে ।
নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেরার ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসহাসড়ক এলাকার মদনপুরেন সুরুজ মিয়া গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সুরুজ মিয়া ওরফে বিড়ি সুরুজের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সম্পদের বিবরণীতে তথ্য গোপন করার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬(২) ধারায় মামলাটি দায়েরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত ১৫ অক্টোবর দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক (অনুসন্ধান ও তদন্ত) মো. তালেবুর রহমান মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন সূত্রে জানা যায়, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে চলতি বছরের মার্চে সুরুজ মিয়ার বিরুদ্ধে তদন্তে নামে দুদক। প্রাথমিক তদন্তে নেমে সম্পত্তির বিবরণী চায় দুদক। এই বিবরণীতে সম্পদের তথ্য গোপন করেন সুরুজ মিয়া। পরে তার বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত নেয় দুর্নীতি দমন কমিশন।
সুরুজ মিয়া নারায়ণগঞ্জের বন্দরের মদনপুরের ব্যবসাযী চাঁনপুর এলাকার মৃত আফিস উদ্দিন প্রধানের ছেলে। তিনি সুরুজ মিয়া গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। থাকেন রাজধানীর টিকাটুলীর প্যারামাউন্ট কর্নকর্ড-৯ এর একটি ফ্ল্যাটে। তার ব্যবসায়ীক কার্যালয় মতিঝিলের সেনাকল্যাণ ভবনে হলেও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো সবই নারায়ণগঞ্জের মদনপুরে।
বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সূত্রে জানা যায়, এক সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে বন্দরের মদনপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সাধারণ বিড়ি বিক্রেতা থেকে বর্তমানে হাজার কোটি টাকার মালিক সুরুজ মিয়া। তার বিরুদ্ধে অন্যের জমি দখলেরও অভিযোগ রয়েছে। বন্দর থানার মদনপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার ভেতরে চানপুর এলাকায় এশিয়ান হাইওয়ের পাশেই শত শত বিঘা জমির ওপর গড়ে উঠেছে সুরুজ মিয়া গ্রুপ। সেখানে রয়েছে সুরুজ মিয়া স্পিনিং মিল, সুরুজ মিয়া জুট স্পিনিং মিল, সুরুজ মিয়া প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ, টাইটানিক অয়েল মিলস, টাইটানিক সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজ, টাইটানিক ও মাস্টার্ড অয়েল মিলস। আকিজ বিড়ি ও আকিজ সিমেন্টের ডিলারশিপ ছাড়াও সেখানে রয়েছে তাঁর বিশাল জমির ব্যবসা।
বিড়ি সুরুজ থেকে সুরুজ সাহেব :
গত শতাব্দীর ৮০’র দশকের কথা। বন্দর থানার মদনপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় চৌকি পেতে আকিজ বিড়ি, বিস্কুট, চকোলেট ইত্যাদি বিক্রি করতেন মদনপুর চাঁনপুর এলাকার মৃত আফাজউদ্দিনের ছেলে সুরূজ মিয়া।থাকতেন এক সময়েক কুক্যাত সন্ত্রাসী কামু বাহিনীর প্রধান কামুর পৈত্রিক বাড়িতে আশিতা হিসেবে।
এলাকাটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে অবস্থিত হওয়ায়র সুবাদে সুরূজ মিয়া একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন বাসে চাঁদাবাজি ও ছিনতাই-ডাকাতির লক্ষ্যে। সাথে চলে বিড়ির ব্যবসাও। এক সময় আকিজ বিড়ির ডিলার বনে যান। পরবর্তীতে গুদামঘরে রক্ষিত প্রচুর বিড়ি বন্যায় নষ্ট হয়েছে এমন অজুহাত দেখিয়ে কোম্পানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করেন।
এসময় এলাকায় প্রভাব বিস্তারে গড়ে তোলেন বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী। বিড়ির ব্যবসার সাথে প্রতিষ্ঠা করেন স্পিনিং মিল, রাস্তায় নামান যাত্রীবাহী বাস। সেই সুরূজ মিয়া এখন সুরূজ সাহেব। মদনপুর ও আশপাশ এলাকায় শত শত বিঘা জমির উপর গড়ে উঠেছে তার অনেকগুলো ফ্যাক্টরি।এবপরও এলাকার সকলের কাছে সুরিুজ মিয়াকে সকলেই ’বিড়ি সুরুজ’ হিসেবেই চিনেন ।
অভিযোগ রয়েছে এসব জমি ভয়ভীতি প্রদর্শন করে গরীব কৃষকদের কাছ থেকে নামমাত্র মূল্যে লিখে নিয়েছেন। সেই সুরূজ মিয়া এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। এলাকাবাসীর ভাষ্য ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, তার ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠেন সুরূত আলী, কামু, কাবিলসহ ভয়ঙ্কর সব সন্ত্রাসীরা। এই বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সুরূজ মিয়া কৌশলে তাদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে দেন। এক গ্রুপের নেতৃত্ব দেন সন্ত্রাসী কামু ও অপর বাহিনীর নেতৃত্বে থাকেন সুরূত আলী। তাদের ভয়ে ওই এলাকার মানুষ সব সময় তটস্থ থাকতো।
মদনপুর, চানপুর, মাধবপুর, কুড়িপাড়া, দেওয়ানবাড়ি, কেওঢালা প্রভৃতি এলাকা তারা দাবড়িয়ে বেড়াত। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, খুন, রাহাজানি এমন কোনো অপকর্ম নেই যা তাদের দ্বারা সম্পন্ন হতো না। আর সেসব অপকর্মে পেছন থেকে উসকানি ও মদদ দিতেন সুরূজ মিয়া।
সূত্রে জানা গেছে, সুরূজ মিয়া ১৯৮৪ সালের দিকে আকিজ বিড়ির ডিলারশিপ পান। ডিলারশিপ পাওয়ার পর তার নাটকীয় আচরণ আকিজ গ্রুপেরও সুনজরে আসে। ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় গুদামে রক্ষিত বিপুল পরিমাণ বিড়ি নষ্ট হয়ে গেছে এমন অজুহাত দেখিয়ে কোম্পানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ পান। এছাড়া একই সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আকিজ বিড়িবাহী একটি ট্রাক ছিনতাই হয়।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, এটাও তার বাহিনীর কাজ। পরে সেই ডাকাতি ও ধোকাবাজির অর্থে ঢাকা-দাউদকান্দি রুটে কয়েকটি পরিবহন ছাড়েন। এরপর গড়ে তোলেন সুরূজ মিয়া স্পিনিং মিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মদনপুর বাসস্ট্যান্ড বাজারের এক মুরগি ব্যবসায়ী জানান, সুরূজ মিয়া যখন দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলেন তখনই বিদ্রোহ করে বসে তার বিশ্বস্ত সুরূত আলী। সুরূত আলীকে শিক্ষা দিতে তার পেছনে লেলিয়ে দেন সুরত আলীরই আপন ভাতিজা কামু ও তার বাহিনীকে। এক সময় তারা একে অন্যকে ঘায়েল করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। এরই প্রেক্ষিতে প্রায় ৬ বছর আগে সুরূত আলী নিহত হন কামু বাহিনীর হাতে। অপরদিকে এর প্রতিশোধ নিতে কামু বাহিনীর বোন রেহানাকে হত্যা করে প্রতিপক্ষ এই সুরুজের চক্রান্তে। এছাড়াও কামু বাহিনীর সদস্য দুই সহোদর র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয়। এসব কর্মকাণ্ডে সুরূজ মিয়ার পরোক্ষ মদদ রয়েছে- এ বিষয়টি এলাকার ‘ওপেন সিক্রেট’ বিষয়।
স্থানীয় সূতমতে, নিজে প্রশাসনের কাছে সাধু সাজতে এবং গোপন অপকর্ম যাতে ফাঁস না হতে পারে তার জন্য সন্ত্রাসী কামুকে বছরের পর বছরকোরাগারে রাখতে সকল চক্রান্ত করেছেন ।এলাকাবাসী অভিযোগে করে জানান, সুরূজ মিয়ার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুললেই তাদের ওপর অত্যাচারের খড়গ নেমে আসে।
ভীত কন্ঠে তারা জানান, এ পর্যন্ত যতোদূল শুনেছি সুরূজ মিয়া খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, চোরাচালানি, জমিদখল থেকে শুরু করে এহেন কাজ নেই যা তিনি করেননি। তার দ্বারা এ পর্যন্ত ১০/১২টি খুন হয়েছে। নিজেদের আবার না খুন হতে হয় এই ভয়ে নিহতের আত্মীয়-স্বজনরা মামলা করার সাহস পান না। এছাড়া ২ শতাধিক সন্ত্রাসীর একট গ্রুপ তার পক্ষে এলাকায় সব সময় দাবড়িয়ে বেড়ায় বলে জানান স্থানীয়রা।
এলাকাবাসীর ধারণা, হতদরিদ্র থেকে রাতারাতি হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়ার পেছনে অবৈধ আয়ের উৎস রয়েছে তার। এছাড়া মুরাদপুর এলাকার আলী আহমেদ তার দু’ছেলে মকবুল ও সুমনকে খুন করায় সুরূজ মিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করে জীবন নাশের হুমকির মধ্যে রয়েছেন।
তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, পাওনা টাকা চাওয়ার অপরাধে সুরূজ তার দু’ছেলেকে খুন করেছে।
তিনি আরো জানান, তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী, ডিসি, এসপির কাছে পর্যন্ত স্মারকলিপি দেওয়া আছে। এছাড়া আদালতসহ বিভিন্ন থানায় মামলা থাকলেও অর্থের জোরে তিনি প্রশাসনকে ম্যানেজ করে পার পেয়ে যান। তাকে গ্রেফতার করলেই সব অপকর্মের কাহিনী জনগণ প্রকাশ করবে বলে আলী আহমেদের বিশ্বাস।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বন্দর থানার মদনপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার ভেতরে চানপুর এলাকায় এশিয়ান হাইওয়ের পাশেই শত শত বিঘা জমির ওপর গড়ে উঠেছে সুরূজ মিয়া গ্রুপ। সেখানে রয়েছে সুরূজ মিয়া স্পিনিং মিল, সুরূজ মিয়া জুট স্পিনিং মিল, সুরূজ মিয়া প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ, টাইটানিক অয়েল মিলস লি. ও টাইটানিক সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজ টাইটানিক মাস্টার্ড অয়েল মিলস লিমিটেড। পুরো এলাকাজুড়ে রয়েছে নিরাপত্তার চাদর । ক্লোজ সাকিট ক্যামেরায় মোড়ানো পুরো এলাকা।
অভিযোগ রয়েছে, সেসব জমি গরীব কৃষকদের কাছ থেকে নামমাত্র মূল্যে জোরপূর্বক লিখে নিয়েছেন সুরূজ মিয়া। সব ব্যবসা দেখাশুনার জন্য ঢাকায় সেনাকল্যাণ ভবনে নেওয়া হয়েছে অফিস। সেখানে বসেই সুরূজ মিয়া ব্যবসাসহ নানা কার্মকাণ্ডের দেখভাল করেন। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মদনপুর-চানপুর এলাকায় সুরুজ মিয়া গ্রুপের ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করতে গেলে মিল গেটে সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই উপস্থিত সবাই সটকে পড়েন। এসময় নিরাপত্তা কর্মীরা জানান, এখানে কারো সাথে দেখা করা বা কথা বলা যাবে না, সাহেবের (সুরূজ মিয়া) নিষেধ আছে। মালিক সুরূজ মিয়ার মোবাইল নম্বর চাইলে তাও দিতে অস্বীকৃতি জানায় নিরাপত্তা কর্মীরা ।









Discussion about this post