নারায়ণগঞ্জের নৌ-সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বছরের পর বছর নৌ-দুর্ঘটনায় উদ্ধারকারী জাহাজ পরিচালনায় ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে তেল খরচের নামে সরকারি বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ অভিযোগ তদন্ত করছে দুদক।
দূদকের এমন খবরে চোরচক্রের অনেকেই নিজেদের রক্ষা করতে ইতিমধ্যেই শুরু করেছে দৌড়ঝাঁপ ।
বিআইডব্লিউটিএ এর একজন কর্মকর্তা এমন অভিযানের খবরে প্রতিবেদকের কাছে জানতে পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “সরকারী কোন সংস্থায় চুরি নাই ৷ আমার এই বক্তব্য কোড কইরেন না প্লিজ । সব সেক্টরে কি হয় / হচ্ছে খোজ নেন । একজন শেখ হাসিনা আর কত চেক দিবেন ! এই তেলচুরির ঘটনাও কয়েক দিন পর থেমে যাবে !”
একই অভিযোগে বিআইডব্লিটিএ কর্তৃপক্ষ তদন্ত করলেও অভিযোগের বিষয়ে কোন সত্যতা পায়নি।
কিন্তু তদন্তে নেমে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নারায়ণগঞ্জের নৌ-সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নথিপত্রে ব্যাপক গরমিল পেয়েছে। দুদক জানায়, এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দুদক কমিশনে দেয়া হবে।
কমিশনের কাছে এ বিষয়ে অনুসন্ধানের সুপারিশ করা হবে। কমিশন অনুসন্ধানের অনুমতি পেলে বুঝা যাবে যে কি পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে এসব অপকর্মের সঙ্গে বিআইডব্লিটিএ’র কর্মকর্তা এবং সিবিএ নেতারাও জড়িত। এসব কর্মকর্তা ও সিবিএ নেতারা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে নানা অপকর্ম করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না।
দুদকের পরিচালক প্রণব কুমার ভট্টচার্য জানান, দুদকের অভিযোগ কেন্দ্রে (হট লাইন ১০৬) জনৈক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, নারায়নগঞ্জে বিআইডব্লিউটিএ’র যেসব উদ্ধারকারী জাহাজ রয়েছে এগুলো পরিচালনা না করেও তেল খরচের নামে বিল আদায় করা হচ্ছে। ভুয়া বিলের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ তুলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট জাহাজ পরিচালনা কর্তৃপক্ষ তা ভাগ করে নিচ্ছেন। এতে সরকারের রাজস্ব থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ক্ষতি হচ্ছে।
এমন অভিযোগের ভিত্তিতে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ২-এর সহকারী পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে গতকাল অভিযান পরিচালনা করে দুদক এনফোর্সমেন্ট টিম। নারায়ণগঞ্জে থাকা উদ্ধাকারী জাহাজের তেল খরচের বিল ভাউচারের সংশ্লিষ্ট নথিপত্র পর্যালোচনা করে দুদক টিম। প্রাথমিকভাবে কয়েকটি বিল পর্যালোচনা করে দুদকের কাছে মনে হয়েছে, ভুয়া বিলের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।
দুদকের সহকারী পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, উদ্ধাকারী জাহাজ দূরত্ব এবং তাকে টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য জাহাজ প্রত্যয়ের পরিচালনায় তেল ও ইলেক্টনিক্স বিল বাবদ ভুয়া ভাউচারের মাধ্যম অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। আমরা কিছু নথিপত্র পর্যালোচনা করেছি।
আমাদের কাছে অনিয়ম হয়েছে প্রতীয়মান হওয়ায় আমরা ২০১৭ থেকে চলতি বছর পর্যন্ত ৩ অর্থবছরের বিল ভাউচার তলব করেছি। আজকের মধ্যে দুদকের সমন্বিত কার্যালয় ২-এ নথিপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে। এসব নথিপত্র পর্যালোচনা করা হবে। আমরা পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিয়ে অনুসন্ধানের সুপারিশ করব। অনুসন্ধান শুরু হলে নারায়ণগঞ্জের উদ্ধারকারী জাহাজ পরিচালনায় বিল ভাউচার পর্যালোচনা করবে দুদক।
বিআইডব্লিউটিএ এর নৌ-সংরক্ষণ ও পরিচালন কর্তৃপক্ষ নারায়ণগঞ্জ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জে পূর্বে প্রত্যয় ও নির্ভীক নামে দু’টি উদ্ধারকারী জাহাজ ছিল। তবে নির্ভীক এখন বরিশাল থেকে পরিচালিত হয়। নারায়ণগঞ্জ থেকে উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় পরিচালিত হয়।
বিআইডব্লিউটিএ এর নৌ-সংরক্ষণ ও পরিচালন কর্তৃপক্ষ নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের অদূরে শহরের ৫ নম্বর ঘাটে শীতলক্ষ্যা নদীতে নোঙর করা থাকে আড়াইশো টন ওজনের উত্তোলন ক্ষমতা সম্পন্ন উদ্ধার জাহাজটি। এই জাহাজেরই ভুয়া তেল খরচ তৈরি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তদন্তে নেমেছে দুদক।









Discussion about this post