বাহ কি স্বাদ ! কত স্বদে নিয়ে হোটেল রেস্তোরাঁয় মোটা অংকের টাকা দিয়ে মুরগীর বিভিন্ন ধরণের রান্না করা খাবার খেতে কে না পছন্দ করে । হোটেল রেস্তোরাঁর এই শহর কত গুলি খাবারের মানহীন রেস্তোরাঁ রয়েছে তা খোদ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কেউ বলতে পারবেন না । আর আইনপ্রয়োগকারী অধিকাংশ সংস্থার কর্মকর্তাদের ম্যানেজেই সারাবছর জুড়েই চলছে মরা মুরগীর কারবার ! এমন মন্তব্য নগরবাসীর
মুরগি বিক্রি ও সরবরাহকারীরা কেউ কেউ কোটিপতি
নারায়ণগঞ্জে মরা মুরগি সরবরাহ চক্র সক্রিয় রয়েছে দীর্ঘদিন যাবৎ । নামী-দামী হোটেলগুলোতে এই চক্র নিয়মিত মরা মুরগির যোগান দিয়ে যাচ্ছে। হোটেল মালিকদের জানা অথবা অজান্তেই একটি সিন্ডিকেট এ ধরনের ব্যবসা চালাচ্ছে নির্বিঘ্নে । শহরের পুরাতন কোর্ট সংলগ্ন ইন্সটিটিউট রোড়ে (র্যাব কার্যালয় লাগোয়া) নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নতুন বাজারের শতাধিক মুরগী ব্যবসায়ীদের মধ্যে কয়েকজন ছাড়া প্রায় সকলেই মরা মুরগী বেচাকেনার সাথে জড়িত ।
বৃহস্পতিবার ১৭ ডিসেম্বর মুরগীর খাচার নীচে মরা মুরগীর ছবি তোলার পর মুরগী ব্যবসায়ীদের প্রায় সককেই সটকে পরলে মুরগী ব্যবসায়ী মাসুমের সাথে যোগাযোগ মুঠোফোন যোগাযোগ করলে তিনি নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট কে বলেন, বাজারের কমিটি আছে । তাদের জিজ্ঞেস করেন । আমি এখন চাঁদপুরে আছি । আমার মুরগীর দোকান চালায় আমার ভাই । মুরগীর খাচার নীচে মরা মুরগী নিয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না।
এ বিষয়ে পাইকারি এই বাজারে খোজ করে বাজার কমিটির নির্ভরশীল কাউকে পাওয়া যায় নাই অনেক খোজ করেও ।
নারায়ণগঞ্জের কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা বাজারে মরা মুরগীর রমরমা কারবার নিয়ে সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি মুরগীর খাচার নিচে মারা যাওয়া মুরগী কৌশলে রাখা আছে ।
খোজ নিয়ে জানা যায়, চায়নিজ রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে নামী-দামী হোটেলেও মরা মুরগি সরবরাহ করে একাধিক চক্র। নারায়ণগঞ্জের দিগু বাবুর বাজারের মরা মুরগির মাংস দিয়ে স্যুপ তৈরি করা হয়। ফাস্ট ফুড স্টোর গুলোতে মুরগির তৈরি সব খাবারে এই মরা মুরগি মাংস ব্যবহার করা হচ্ছে ।
নগরীর কয়েকটি বৃহৎ মুরগির আড়তের মধ্যে দিগু বাবুর বাজার বাজার, কালীর বাজার, এবং বাবুরাইল বউ বাজার থেকে মরা মুরগি সরাসরি চলে যাচ্ছে এসব হোটেল রেস্টুরেন্টে ।
প্রতিটি মরা মুরগি ১শ’ থেকে ২শ’ টাকায় বিক্রি করে এই অপরাধী চক্র। ভোক্তারা না জেনেই সরল বিশ্বাসে সেগুলো দেদার খাচ্ছে।
পিওর ফুড অ্যাক্ট (বিশুদ্ধ খাদ্য আইন)-১৯৬৯’ অনুযায়ী ভেজাল খাদ্যদ্রব্য বিক্রেতার বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান থাকলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কার্যকরী কোন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায় না। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন সংস্থাই এমন মরা মুরগীর বিষয়ে কোন ধরনের তদারকি ই করতে দেখা যায় নাই স্বরণকালের সাম্প্রতিক সময়ে ।
দীর্ঘদিন যাবৎ শহরবাসীর মাঝে চাউর রয়েছে, প্রতিদিন নারায়ণগঞ্জ শহরের কয়েকটি বাজারে হাজার হাজার পিছ দেশী, পোল্ট্রি, ককসহ বিভিন্ন জাতের মুরগী অসংখ্য গাড়িতে করে আনা হয় । রাতের বেলায় অসংখ্য মুরগী মারা গেলে তা সংরক্ষণ করে মুরগী ব্যবসায়ীদের প্রায় সকলেই । মরা মুরগী ক্রয় করার জন্য একাধিক চক্র থাকায় এই মারা যাওয়া মুরগী বিক্রি করতে তেমন অসুবিধা হয় না । ।
গত বৃহস্পতিবার ১৭ ডিসেম্বর ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নগরীর দিগুবাবুর বাজার ও আশেপাশের এলাকায় খোজ নিয়ে দেখা যায় মারা যাওয়া মুরগী চোখের পলকে সরিয়ে ফেলছে মুরগী ব্যবসায়ীরা ।
দীর্ঘক্ষণ খোজ করার পর নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট এর চোখে ধরা পরে দিগুবাবুর বাজারের মুরগী পট্টির প্রায় প্রতিটি খাচার নীচে কৌশলে রাখা হচ্ছে মরা মুরগী । এমন মরা মুরগীর বিষয়ে কথা বলতে চাইলে দোকান ফেলে দ্রুত সটকে পরে মুরগী ব্যবসায়ীরা ।
দিগুবাবুর বাজার থেকে বেড়িয়ে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে একজন ব্যবসায়ী ক্ষোভ জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট কে জানায়, পুরো বাজারে মরা মুরগী ব্যবসায়ীরা এক সিন্ডিকেট । কই যায় মরা মুরগী ? হোটেলগুলিতে কি খাওয়ায় ? র্যাব অফিসের দেয়াল ঘেষা আর নারায়ণগঞ্জ থানার কয়েক গজের মধ্যে দিগুবাবুর বাজার আর কালীর বাজার, বাবুরাইল বউ বাজারে কি পরিমাণ মরা মুরগী কত ঘৃণ্য ভাবে বিক্রি করে তা দেখলে কেউ হোটেলে আর খেতে যাবে না !
একজন ক্রেতা নিজ চোখে দেখে মুরগী কিনার পর তাকেও ওলট পালটের পর মরা মুরগী কেটে নাড়িভুড়ি ফেলে ব্যাগের মধ্যে দিয়ে দিচ্ছে তা সাধারণ ভোক্তাদের অনেকেই টের ই পায় না ।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সকলেই এমন অপকর্মের বিষয়টি জানলেও কেউ এমন জঘন্যরকম অপরাধের বিষয়ে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অপরাধীচক্র ।
সূত্রটি আরও জানান, শতাধিক মুরগির আড়তের মধ্যে দিগুবাবুর বাজার মুরগির আড়ত সবচেয়ে বড়। এখানে প্রতি রাতে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ট্রাকযোগে দেড় থেকে দুই লাখ মুরগি আসে। ভোরের মধ্যে আড়ত মুরগিতে ভরে যায়। এরমধ্যে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার মুরগি মারা যায়।
গরম বেশি পড়লে মরা মুরগির সংখ্যা দ্বিগুণ হয়। ব্রয়লার মুরগি হিটস্ট্রোকে এবং চাপে পড়ে বেশি মারা যায় বলে জানান আড়ত মালিকরা।
মরা মুরগির পাখা পশম ছিলার জন্য আড়তের পাশে ছোট ছোট ঘর রয়েছে। সেখানে মরা মুরগি ছিলার কাজ শেষে বস্তাবন্দী করা হয়। কোন মরা মুরগি দুর্গন্ধ হলে সেগুলোর মধ্যে লেবুর রস দিয়ে দুর্গন্ধমুক্ত করা হয় বলে জানায় সূত্রটি।
হোটেলে সরবরাহ করে আরেক গ্রুপ: প্রথম গ্রুপ মরা মুরগি সংগ্রহ করে তা ছিলে বস্তাবন্দী করে দ্বিতীয় গ্রুপের কাছে বিক্রি করে।
দ্বিতীয় গ্রুপ এ জন্য প্রথম গ্রুপকে একেকটি মুরগির জন্য দেয় ৪০- ৫০ টাকা। এক থেকে দেড় কেজি ওজনের একেকটি মুরগি রেস্টুরেন্টে বিক্রি হয় দেড়শ’ থেকে দুশ’ টাকা।
সূত্রটি আরও জানান, অনেক ক্ষেত্রে নামকরা চায়নিজ রেস্টুরেন্ট ও ফাস্ট ফুডের দোকানের কর্মচারীরা মালিকের অজান্তে মরা মুরগি সরবরাহে সহযোগীতা করে আসছে। অনেক আড়তের মুরগি ব্যবসায়ী এবং শ্রমিকেরা মরা মুরগি বিক্রেতাদের চিনলেও লভ্যাংশের লোভে এ অপকর্মের প্রতিবাদ করে না। মরা মুরগি বিকিকিনি চক্রের কয়েকজন এখন কোটিপতি। বাজারে খোজ নিলেই বেড়িয়ে আসবে এমন অপরাধীদের নাম ।
তবে মরা মুরগি বিকিনিকির সাথে রয়েছে অনেকের গোপন যোগাযোগ
ফ্রিজিং করে প্রতারণা: মরা মুরগী ফ্রিজে সংরক্ষণ করে প্রতারক চক্র। পরে ফ্রিজিং (হিমায়িত) করা মুরগীর মাংস বাজারে বিক্রি করে। এক্ষেত্রে মাংস জীবিত নাকি মরা মুরগীর তা বোঝা দুষ্কর হয়ে পড়ে। অনেক ক্রেতাই সরল বিশ্বাসে ফ্রিজিং করা মুরগী কিনে থাকেন। আর বিক্রেতারা এ সুযোগটিই কাজে লাগায়।
মরা মুরগি ভক্ষণ মানব দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর :
কিডনি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট কিডনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশীদ বলেন, মুরগি সাধারণত বার্ড ফ্লু কিংবা কোন ভাইরাসজনিত কারণে মারা যায়। মরা মুরগির মাংস খেলে খাদ্যে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশংকা শতভাগ। পরবর্তীতে লিভার ও কিডনি রোগে আক্রান্ত কিংবা কিডনি অকেজো হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।









Discussion about this post