ফাঁসির দন্ড মাথায় নিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের সেই কুখ্যাত খুনি নূর হোসেন কারাগারের কনডেম সেলে থাকলেও আবারো ফের ব্যাপকভাবে সমালোচনার ঝড় উঠেছে মুয়াজ্জিন কে মারধর করার ঘটনায় । এমন ঘটনা ছাড়াও কাউন্সিলর আরিফুল হাসানের ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্য কে ঘিরে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জসহ নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর সর্বত্র ।
নূর হোসেন যখন কাউন্সিলর তখন তাঁর ওয়ার্ডে চলতো অসামাজিক, অনৈতিক সকল কর্মকান্ড। ধরাকে সরা জ্ঞান করতেন এ নূর হোসেন। ওই সময়ে যাঁদের দ্বারা সব সময়ে বেষ্টিত থাকতেন তাদের মধ্যে আরিফুল হাসান একজন। ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক। ভালো ক্রিকেটার ছিলেন তিনি। তবে খেলার জগত ছেড়ে নূর হোসেন বাহিনীতে যোগ দিয়েই বনে যান উপদেষ্টা।
নূর হোসেনের যেসকল উপদেষ্টা ছিলেন তাদের মধ্যে আরিফুল হাসান ছিলেন অন্যতম। অর্থ সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখভাল করতেন তিনি। আর সেই সময়ের নূর হোসেনের দুর্দান্ত প্রতাপশালী অপকর্ম দেখে রপ্ত করেন এই আরিফুল ।
২০১৬ সালের ২৮ এপ্রিল বিকেল সাড়ে ৪টায় আদমজী ইপিজেডের মূল ফটকের সামনে থেকে একটি মাইক্রোবাস থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের একজন কাউন্সিলর আরিফুল হাসান। গ্রেপ্তারকৃত অপর দুইজন আক্তার হোসেন ও সুমন হোসেন হলো হাসানের ঘনিষ্টজন। এ তিনজনের কাছ থেকে ২৪ ক্যান বিয়ার ও ৮ বোতল বিদেশী মদ উদ্ধার করা হয়েছে।
জানা গেছে, নূর হোসেন যখন ক্ষমতায় তখন আরিফুল হক হাসানকে শিমরাইল পিকআপ ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি করেন। এছাড়াও আরিফুল হক হাসানের নামে একটি বাইশ বোর রাইফেল (লাইসেন্স নম্বর ১২২/১২) এবং পিস্তল (লাইসেন্স নম্বর ২৮৫/১৩) করে দিয়েছিল নূর হোসেন। সেভেন মার্ডারের পর প্রশাসন অস্ত্রগুলোর লাইসেন্স বাতিল করলে তার বাবা জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক আব্দুল মতিন সভাপতি মাষ্টার সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় অস্ত্রগুলো জমা দেয়। সেভেন মার্ডারের পর নূর হোসেনের সাথে এলাকা থেকে পালিয়ে যায় আরিফুল হক হাসানও।
২০১৫ সালের ১১ জুলাই এলাকায় ক্যাডার বেষ্টিত হয়ে ফিরে আসে আরিফুল হক হাসান। পরবর্তীতে নুর হোসেনের লোকদের সহযোগীতায় গত বছরের ২ আগষ্ট নূর হোসেনের শূন্য ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয় আরিফুল হক হাসান। ২ আগস্ট উপ নির্বাচনে আরিফুল হাসান যখন জয়ী হন যখন নূর হোসেন ভারতে গ্রেপ্তার ছিলেন। আরিফুল লাটিম প্রতীক নিয়ে তিন হাজার ৩৩৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন।
সবশেষ আবারো হাসান বাহিনী আলোচনায়। ১০ মার্চ শিমরাইলে একটি মসজিদের মুয়াজ্জিনকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করেছেন কাউন্সিলর আরিফুল হাসানের ছোট ভাই সহ অনুগামী বাহিনী। ওই সময়ে মুয়াজ্জিন হাতজোড় করে ক্ষমা চাইলেও রক্ষা হয়নি। বরং তাকে প্রায় ২০ মিনিট রাস্তার মাটিতে ফেলে লাথি কিল ঘুষি মারা হয়। তখন আশেপাশে থাকা লোকজন ছিলেন নীরব দর্শকের ভূমিকাতে। হাসান বাহিনীর ওই তান্ডবে মুয়াজ্জিন এখন চরম আতংকে রয়েছে। তিনি এ ব্যাপারে ‘আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছি’ বলে মন্তব্য করা ছাড়া আর কিছুই বলছেন না।
স্থানীয়রা জানান, শিমরাইল উত্তরপাড়া জামে মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসেবে দায়িত্বপালন করে আসছেন দ্বীন ইসলাম। কয়েকদিন আগে এলাকাতে একটি ওয়াজ মাহফিল হয়। এর পরে সেটা নিয়ে বুধবার বিকেলে স্থানীয় একটি চায়ের দোকানে বিষয়টি নিয়ে মুয়াজ্জিন সহ অন্যরা আলোচনা করছিলেন। তখন মতিন মাস্টারকে ‘সাহেব’ না বলায় সেখানে থাকা হাসানের লোকজন চটে যান। খবর পেয়ে হাসানের ভাই আতিকুল হক হাসিব ২০-২৫ জনকে সাথে নিয়ে ওই দোকানে গিয়ে মুয়াজ্জিনকে মারধর করে। একের পর এক কিলঘুষি আর লাথিতে মাটিতে লুটে পড়েন মুয়াজ্জিন। সেখানেও তাকে মারধর করা হয়।
এলাকার অনেকেই আরিফ বাহিনীর ভয়ে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে বলেন, নুর হোসেন ফাসির কনডেম সেলের মৃত্যুর জন্য প্রহর গুণলেও তার নিয়ন্ত্রিত পুরো বাহিনীর সকল অপকর্ম ই রয়েছে সচল । যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেখেও না । নারায়ণগঞ্জে সব সম্ভব বলেই যা খুশি তা ই করে আরিফ বাহিনীর সক্রিয়রা ! আরিফ ও তার সহযোগীরা কেন, কার ক্ষমতায় এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে তা কি কেউ জানেন না ? সবাই সবই জানেন শুধু মুখ খুলে কেউ কথা বলতে পারে না । এর জ্বলন্ত উদাহরণ হলে মসজিদের মুয়াজ্জিন ও ঈমাম। ঈমান সাহেব এমন ঘটনায় আজ শুক্রবার খুৎবায় কথা বলতেও পারে নাই আরিফ বাহিনীর ভয়ে ।









Discussion about this post