মহামারী করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতার মধ্যেও থেমে নেই সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ের চাঁদাবাজ মুরগী রিপনের চাঁদাবাজি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে রিপন ওরফে ‘মুরগী রিপন’ নামের এক চাঁদাবাজ তার নিয়োজিত লোকদের (জামাল, শাকিল, নাসির ও রুহুল আমিন) দিয়ে পুলিশের নামে চাঁদা উত্তোলন করে। তাদের পাশাপাশি এ ফুটপাতে এক শ্রেণির প্রভাবশালী ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধির সহযোগী ও স্থানীয় চাঁদাবাজরা এসব দোকানপাট থেকে দৈনিক ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে থাকেন। দোকান প্রতি ১ লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অগ্রিম নেয় এ চাঁদাবাজ চক্র। ফুটপাতে গড়ে উঠা অবৈধ দোকান চালাতে তারা দৈনিক পুলিশকে ম্যানেজ করার কথা বলে দোকানপ্রতি এক’শ, সওজ কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ ও বিদ্যুৎ বিল বাবদ ৩০ টাকা করে মোট ১৮০ টাকা বরাদ্দ রাখেন। বাকী টাকা মুরগী রিপন নিজের জন্য ও তার সহযোগী চাঁদাবাজদের জন্য রাখেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যবসায়ী জানান, ‘মুরগী রিপন ও তার সহযোগীরা প্রতিদিন পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক বিভাগের নাম করে এ টাকা উত্তোলন করেন। মুরগি রিপনকে চাঁদা না দিলে তিনি ও তারা বাহিনীর সদস্যরা আমাদেরকে শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি উচ্ছেদের হুমকিসহ পুলিশ দিয়ে হয়রানি করার হুমকি দেয়। ফলে বাধ্য হয়ে আমরা তাকে ও তার নিয়োজিত ব্যক্তিদের প্রতিদিন চাঁদা দেই।’
গত ২০ ডিসেম্বর, ২০২০ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের সহায়তায় সওজের কর্মকর্তারা এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করে। এছাড়া ৩০ ডিসেম্বরও শিমরাইল মোড়ের ফুটপাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৩ শতাধিক দোকান উচ্ছেদ করে। তবে পুলিশ স্থান ত্যাগ করার কিছুক্ষণ পরই চাঁদাবাজ রিপন বাহিনী রিক্সা লেনের ঐ জায়গা তার দখলে নিয়ে নেয়। সে থেকে অদ্যবধি পূর্বের ন্যায় রিপন চালিয়ে যাচ্ছে তার চাঁদাবাজী।
উচ্ছেদের সময় সওজের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, দখলকারীরা এসব দোকান গড়ে তুলে পরিবহন ও পথচারীদের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করছিল। সরকারি রাস্তা দখল করে অবৈধভাবে গড়ে তোলা এসব দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে।
তবে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে রিক্সার লেন দখল করে দোকান বসিয়ে প্রতিদিন পুলিশের নাম ভাঙিয়ে ‘মুরগি রিপন’ ফুটপাতে ব্যবসা করা ব্যবসায়ী নিকট হতে চাঁদা তুলছে । প্রতিদিন দোকানগুলো থেকে পুলিশের নাম করে উত্তোলিত টাকা মাসে ১৭ থেকে ১৮ লাখ টাকা হওয়ায় অজ্ঞাত কারণে স্থায়ীভাবে রিক্সালেন রিপনের কবল থেকে মুক্ত হচ্ছে না। সওজ এবং পুলিশ কখনো উচ্ছেদ করলেও কিছুক্ষণ পর আবার ঐ জায়গা দখল করে নেয় মুরগী রিপন ও তার সহযোগীরা। পুলিশ উচ্ছেদ করার পর পরক্ষণেই ঐ রিক্সা লেন মুরগী রিপন বাহিনী দখল করায় একে পুলিশের সাথে মুরগী রিপন বাহিনীর টম এন্ড জেরীর নাটকের সাথে অবহিত করেছেন শিমরাইলের একাধিক মার্কেটের ব্যবসায়ীরা।
১ ফেব্রুয়ারী ফুটপাতের এসব দোকান থেকে চাঁদাবাজির সময় চাঁদাবাজ মুরগি রিপনের সহযোগী জামাল হোসেনকে গ্রেফতার করে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। মুরগি রিপনের সহযোগী জামালকে গ্রেফতার করলেও অজ্ঞাত কারণে এখনও পর্যন্ত চাঁদাবাজ রিপন গ্রেফতার হয়নি।
ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, প্রতিবারই সওজ ও পুলিশের উচ্ছেদের কিছুক্ষণ পর পুনরায় রিপনের হকার বাহিনী ফুটপাত দখল করে ব্যবসা শুরু করে।
চাঁদাবাজ মুরগী রিপনের ভাষ্যমতে, রিক্সা লেনের ফুটপাত থেকে প্রতিদিন তার উত্তোলিত চাঁদার পরিমাণ অর্ধলক্ষ টাকা থেকে কিছু বেশী। এ চাঁদার একটি অংশ পুলিশ, প্রশাসনের একাধিক ব্যক্তি, স্বেচ্ছাসেবকলীগের এক নেতা ও স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিককে দিয়ে সন্তষ্ট করেন বলে বীরের বেশে জানায় ।
এতে তার কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হয় বলে উল্লেখ করেন রিপন ওরফে মুরগী রিপন । বাকী টাকা এক মার্কেটের মালিক ও এক জনপ্রতিনিধি ও তার সহযোগীদের মধ্যে বিলি করার পর অল্প কিছু টাকা তার নিজের লাভ থাকে বলে মন্তব্য তার।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মশিউর রহমান এ প্রতিবেদককে জানান, আমরা ইতোমধ্যেই সড়ক ও জনপদ বিভাগে চিঠি দিয়েছি। খুব শীঘ্রই আমরা সড়ক ও জনপদ বিভাগকে সাথে নিয়ে ফুটপাতে হকার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করবো।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ১১মে সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিল আবাসিক এলাকায় পতিতা নিয়ে ফূর্তি করতে গিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন `মুরগি রিপন`। অসংখ্য বার ফুটপাতের এমন প্রকাশ্য চাঁদাবাজি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর স ও জ এবং পুলিশের পক্ষ থেকে ভানুমতীর খেলা প্রায়ই দেখা যায় বলে অভিমত প্রকাশ করে ক্ষোভ ঝেড়েছেন এলাকার অনেকেই ।









Discussion about this post