শীর্ষ এই সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের গডফাদার টাইগার ফারুক কে গ্রেফতারে পর সিদ্ধিরগঞ্জ থানার প্রধান ফটক বন্ধ করে দেয় পুলিশ । থানার বাইরে টাইগার ফারুকের অনুসারী অনেক সন্ত্রাসী ভীর করে এখনো অবস্থান করছে
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জের চিহ্নিত মাদক সম্রাট কথিত যুবলীগ নেতা টাইগার ফারুক ওরফে চিকনা ফারুককে আটক করেছে পুলিশ ।
গ্রেফতারের সাথে সাথেই সিদ্ধিরগঞ্জের একাধিক চক্রের সদস্যরা কুখ্যাত এই শীর্ষ সন্ত্রাসী টাইগার ফারুকের পক্ষে জামিনযোগ্য মামলায় আদালতের চালান করতে জোড় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ।
রোববার (২ মে) সকালে মিজমিজি এলাকায় অভিযান চালিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফারুক তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
গ্রেফতারকৃত টাইগার ফারুক সাবেক আদমজী জুট মিলের শ্রমিক দলের সহ সভাপতি আবু সাইদের বড় ছেলে। তার এক ভাই পেশাধার ছিনতাইকারী, মাদক ব্যবসায়ি ও একাধিক মামলার আসামি মো. জসিম, অপর এক ভাই মহানগর ছাত্রদল নেতা জুয়েল।
এদিকে টাইগার ফারুকের আটকের খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ টাইগার ফারুকের রয়েছে একটি বিশাল সিন্ডিকেট। সে ১নং ওয়ার্ডে যুবলীগের অফিস বানিয়ে নিজেকে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে আসছে। সেখান থেকে সে সমস্ত অপকর্ম পরিচালনা করে আসছে। টাইগার ফারুক তার বাহিনী মাদক, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, হত্যা, ধর্ষণ এমন কোন অপকর্ম নেই যা করে না থাকে।
এছাড়াও টাইগার ফারুক গড়ে তুলেছে বিশাল এক মাদকের সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গা থেকে মাদক নিয়ে এসে নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, নরসিংদীসহ এর আশপাশের এলাকায় সরবারহ করে আসছে।
মাদক সরবাহ করতে গিয়ে তার বাহিনীর লোকজন একাধিকবার ধরা গেলেও টাইগার ফারুক রয়ে যায় ধরাছোয়ার বাহিরে।
টাইগার ফারুকের পালিত সন্ত্রাসীরা এলাকায় যা খুশি তাা ই করে বেড়ায়। অনেক বয়স্ক লোক তাদের অন্যায় অত্যাচারের প্রতিবাদ করে লাহ্নিত হয়েছেন।
এলাকাবাসীর দাবি টাইগার ফারুকের বিরুদ্ধে এমন শাস্তির ব্যবস্থা করা হউক যা দেখে আর কেউ যেনো এমন অপকর্ম ও অপরাধ সাম্রাজ্য ও বাহিনী গড়ে না তুলে।
এছাড়াও এলাকাবাসী ফারুকের আরো যেসব সহযোগী রয়েছে কিশোরগ্যাং লিডার, চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী তাদের গ্রেপ্তারের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মো. জাহেদুল আলম পিপিএম ও র্যাব-১১ এর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মশিউর রহমান টাইগার ফারুককে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।
উল্লেখ, এর আগে টাইগার ফারুক বাহিনীর ১০ সদস্য আইশৃংখলা বাহিনীর পৃথক পৃথক অভিযানে বিশাল পরিমান মাদকের চালান নিয়ে গ্রেফতার হয়েছিলো।

কে এই টাইগার ফারুক
মো: ফারুক ওরফে টাইগার ফারুক পিতা-আবু সাইদ। বর্তমান ঠিকানা-মিজমিজি পুর্বপাড়া পাগলাবাড়ি এলাকা
ফারুকের বাবা আবু সাঈদ আদমজী জুট মিলস জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সহসভাপতি ছিল। চাচা আমির হোসেন ওরফে শুটার আমির ওরফে বন্দুক আমির জাতীয়তাবী শ্রমিক দলের প্রচার সম্পাদক ছিল।
বর্তমানে তার ছোট ভাই জুয়েল রানা নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সহসভাপতি। তার বিরুদ্ধে হেফাজতের দুটি মামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। আরেক ভাই জসিম বিএনপিকর্মী। ছিনতাই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন কারাগারে ছিল। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনের ধানের শীষের নির্বাচন করেছে টাইগার ফারুক ও তার বাপ চাচারা।
আদমজী জুট মিলস চলাকালীন তৎকালীন নিউ কলোনী ১নং নতুন গেইটে আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থী শামীম ওসমানের নৌকার প্রতীক ভেঙ্গে ফেলে টাইগার ফারুক। এবং ওই নির্বাচনে শামীম ওসমান পরাজিত হওয়ার পর আগুন দিয়ে নৌকার ক্যাম্প জ্বালিয়ে দেয় এই ফারুক।
বিএনপি সরকারের পতনের পর পিঠ বাঁচাতে কৌশলে আওয়ামীলীগের শিবিরে মিশে যায় টাইগার ফারুক। এবং নিজেকে কখনো যুবলীগ নেতা আবার কখনো যুবলীগ কর্মী পরিচয় দেয়। এই সাইনবোর্ড ব্যবহার করে ফারুক মাদক ব্যবসার সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। আদমজী ইপিজেডে ব্যবসার করার অজুহাতে ভেতরে ভেতরে চলে তার মাদক ব্যবসা। যার কারণে রাতরাতি সে অর্ধকোটি টাকা মূল্যের জমি কিনে সেখানে বহুতল বিল্ডিং তৈরী করেছে এই টাইগার ফারূক।
টাইগার ফারুক সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি টিসি রোডস্থ বৈশাখী কুঞ্জের বিপরীত দিকে বিএনপির হযরত আলীর দোতলা বিল্ডিংয়ের নিচ তলায় স্বঘোষিত যুবলীগের নোত পরিচয় দিয়ে কার্যালয় স্থাপন করে । মজার বিষয় কার্যালয়ের দরজায় লেখা আকাশ এন্টারপ্রাইজ ও এ কে এন্টারপ্রাইজ। ভেতর রাতভর চলে মাদক কেনা-বেচা ও সেবন।
বর্তমানে ফারুক হত্যা মামলার আসামী। এক পর্যায়ে চলতি বছরের গত ১০ মার্চ কমিল্লা ডিবির হাতে ফেনসিডলসহ গ্রেপ্তার হয় এক সমস্য আলমগীর। ২ এপ্রিল রাতে ঢাকার পল্টনে র্যাব-৩ এর হাতে গ্রেপ্তার হয় টাইগার ফারুকের ক্যাশিয়ার মিলন ৩ সহযোগিসহ গ্রেপ্তার হয়। তাদের কাছ থেকে ১৯ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। ১৬ এপ্রিল বিকালে সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাং রোড থেকে টাইগার ফারুকের অন্যতম সহযোগি রাকিবসহ ৫ জনকে ১৮ কেজি গাঁজা ও ৯৬ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার করে র্যাব-৩।
ফারুকের এই সহযোগিরা গ্রেপ্তার হওয়ার পর ফারুকের নাম আলোচনায় চলে আসে মাদক সম্রাট হিসেবে।
বড় ভাই মো: জসিম ছিনতাইয়ের সময় হাতে নাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাবন্দি হয়। পরে জামিনে বেরিয়ে আসে। এছাড়াও ধর্ষণ চেষ্টা মামলার আসামী। চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ি ও ছিনতাইকারী।
টাইগার ফারুকের আপন ছোট ভাই, জুয়েল রানা, নারায়ণগঞ্জ মহা নগর ছাত্রদলের সহ সভাপতি। তার বিরুদ্ধে ২৫ মার্চে হেফাজতের হরতালের দিন নাশকতার ঘটনায় দায়ের করা মামলার মধ্যে একটি মামলায় প্রধান আসামী ও একটি মামলায় ১৯ নাম্বার আসামী। সেও মাদক বিক্রেতা।









Discussion about this post