ঢাকা সিলেট মহাসড়কের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা গাউছিয়া এলাকায় সড়কের উপর অবৈধ ফুটপাতের চাঁদাবাজি থামছে না।
বেপরোয়া এসব চাঁদাবাজরা মহাসড়কের ওপরে যেখানে সেখানে দোকান বসিয়ে ইচ্ছেমতো করছে চাঁদাবাজি। প্রায় চার শতাধিক দোকান বসিয়ে দৈনিক আড়াই লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছে বলে জানা গেছে। এতে মহাসড়কে যেমন যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে তেমনি ভুলতা ফ্লাইওভার ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে । একই সাথে এমন অবৈধ দখলদারদের আস্ফালনের কারণে অপরাধ প্রবণতা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে৷
জানা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের গোলাকান্দাইল মোড় হতে গাউছিয়া মোড়, ভুলতা ফ্লাইওভারের নিচে ও ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির সামনে পর্যন্ত উভয়দিকে ফুটপাতে প্রায় চার শতাধিক অবৈধ দোকান রয়েছে। প্রতিটি দোকান থেকে এককালীন জামানত ১০ হাজার টাকা করে আদায় করছে চাঁদাবাজরা। আর প্রতিদিন ২০০ থেকে ৪০০ টাকা করে আদায় করছে। জানা গেছে, এ টাকা স্থানীয় যুবলীগ নেতা ও ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির পকেটে যাচ্ছে। একই সাথে রূপগঞ্জ থানার ক্যাশিয়ার ফান্ড হিসেবে অনৈতিক ফান্ডে গোপনে জমা দিচ্ছে চিহ্নিত এই চক্রের হোতারা ।
আর এমন প্রকাশ্য চাঁদাবাজির ভাগবাটোয়ারা নিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সঙ্গে ইউনিয়ন যুবলীগের ধাওয়া পালটা ধাওয়ার ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত।
এদিকে ফুটপাতে দোকান বসানোর কারণে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দখল হয়ে যাওয়ায় যানজট লেগেই থাকে। ৩৫৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ফ্লাইওভার নির্মিত হওয়ার পরেও গাউছিয়া এলাকার যানজট কমছে না। ফুটপাত ব্যবসায়ীরা ফল ও সবজির উচ্ছিষ্ট অংশ ফ্লাইওভারের পিলারের গোড়ায় ফেলে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত করছে। এতে দূষিত হচ্ছে এলাকার পরিবেশ। তাদের কারণে রাস্তা পারাপার হতে পথচারীদের বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। এ জন্য বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনার শিকার হতে হয় পথচারীদের।
ভুলতা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন ও গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমীনের নেতৃত্বে মহাসড়কে অবৈধভাবে দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজি হচ্ছে বলে জানান এলাকাবাসী।
জানা গেছে, গোলাকান্দাইল গোলচত্ব্বর থেকে নুরম্যানশন মার্কেট পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করেন আল আমিন। আর আব্দুল হক সুপার মার্কেট থেকে আজিজ সুপার মার্কেট পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করেন ইকবাল হোসেন। তাদের রয়েছে ছয় জন সহকারী। এরা সারা দিন ফুটপাতে টাকা তোলার কাজে ব্যস্ত থাকে। ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির সামনে এসব চাঁদাবাজি হওয়ার পরেও চাঁদাবাজির ভাগবাটোয়ারার কারণে প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করছে।
এলাকার সচেতন মহল মনে করেন, এখনই এসব চাঁদাবাজি বন্ধ না করলে এলাকার আইনশৃঙ্খলার ভয়ানক অবনতি ঘটতে পারে।
তাছাড়া মহাসড়ক দখলমুক্ত করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা। ফুটপাত ব্যবসায়ীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দৈনিক ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। ব্যবসা না হলেও তাদের চাঁদা দিতে হয়। তা না-হলে পরের দিন বসতে দেয় না। আবার কেউ টাকা দিতে না পারলে তাদের মালামাল কেড়ে নেওয়া হয়। আর এমন সকল ধরনের অপকর্ম নিরবে হজম করে পুলিশ । চাঁদাবাজদের সকলেই চিৎকার করেই বলে, এই টাকা (চাঁদা) কি আমরা একাই খাই, পুলিশ পায় নেতা পায়, বড় বড় কর্মকর্তার বাড়িতে বাজার বাবদ খরচাও যায় ।
এ ব্যাপারে ভুলতা ফাঁড়ির ইনচার্জ নাজিম উদ্দিন মজুমদার বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করি ফুটপাত থেকে দোকান তুলে দেওয়ার জন্য। কিন্তু একদিকে উঠিয়ে দেই অপরদিকে বসে যায়। আমরা কী করব ? গত কয়েক দিন আগে ময়লার ভাগাড় নিজ টাকায় পরিষ্কার করেছি। এখন আবার সেই অবস্থা। আমরাও এখন নিরুপায়। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে ফুটপাত সরানো যাচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে চাঁদাবাজি হয় শুনেছি কিন্তু এ টাকা কে বা কারা নেয় আমার জানা নেই ।’









Discussion about this post