নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাজাকার পুত্র হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত মাকসুদের লম্পট ভাগ্নে শরিফুল ইসলাম ওরফে গুড্ডু ও তার ২ সহযোগীর বিরুদ্ধে আদালতে জবানবন্দী দিয়েছেন ধর্ষণের শিকার গৃহবধু।
বুধবার (৩০ জুন) নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ আনিসুর রহমানের আদালতে ধর্ষণের শিকার গৃহবধু ঘটনার বিবরণীতে আদালতকে জানান।
একই আদালতে আসামীপক্ষ জামিন শুনানীর আবেদন করলেও আদালত সে আবেদন মঞ্জুর করেননি।
মামলার বাদিপক্ষের আইনজীবী নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান জানান, ধর্ষণের শিকার ওই গৃহবধু মামলা দায়েরের পরে মেডিকেল টেস্ট করলেও জুডিশিয়াল আদালতে ধর্ষিতার ২২ ধারায় জবানবন্দী নেয়া হয়নি। মামলা দায়েরের পরে ধর্ষিতার ২২ ধারায় জবানবন্দী নেওয়া উচিৎ ছিল কিন্তু পুলিশ সেটা করেনি। যে কারণে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ আনিসুর রহমান মহোদয় ঘটনার বিবরণী ধর্ষিতার কাছ থেকে জানতে চেয়েছিলেন। আদালতকে ধর্ষিতা নিজেই ঘটনার বিবরণী তুলে ধরেছেন। একই আদালতে আসামীপক্ষ জামিন আবেদন চাইলেও আদালত জামিন মঞ্জুর না করে পরবর্তী তারিখ ধার্য্য করেছেন।
ধর্ষিতার স্বামী মুঠোফোনে গণমাধ্যম কে জানান, মামলা দায়েরের পরে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে মেডিকেল টেস্ট করা হলেও ২২ ধারায় জবানবন্দী প্রদানের বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। বন্দর থানা পুলিশও আমাদের কিছু বলেনি। যে কারণে আমরা হাসপাতাল থেকেই বাসায় চলে আসি। পরে বুধবার (৩০ জুন) ধার্য তারিখে আদালতে গেলে আদালত আমার স্ত্রীর কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন। পরে আমার স্ত্রী তাকে কিভাবে অপহরণ করা হয়েছে এবং অপহরণের পর ৫ দিন আটকে রেখে মাকসুদ চেয়ারম্যানের ভাগ্নে লম্পট শরীফুল ইসলাম গুড্ডু ও দুই সহযোগী সোহরাব ওরফে পাগলা শুভ এবং ফিরোজ মিয়া পালাক্রমে গণধর্ষণ করেছে সেটার বিবরণ আদালতকে তুলে ধরেছেন। ওই মামলার ১নং এজাহারভুক্ত আসামি ও লম্পট শরীফুল ইসলাম গুড্ডুকে (৪০) পুলিশ গ্রেফতার করলেও অদ্যাবধি বাকী দুই আসামি সোহরাব ওরফে পাগলা শুভ এবং ফিরোজ মিয়াকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। আমরা লোকমুখে নানা ধরনের গুঞ্জন শুনেছি। চেয়ারম্যান মাকসুদের লোকজন তালিকা করেছে আমাদেরকে ধরে মারধর করবে এমন কথা শোনা যাচ্ছে।
এর আগে, গত ১৪ জুন রাতে বন্দর থানা পুলিশ কুড়িপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে গণধর্ষণ মামলার ১নং এজাহারভুক্ত আসামী লম্পট শরীফুল ইসলাম গুড্ডুকে (৪০) গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃত শরিফুল ইসলাম গুড্ডু বন্দর উপজেলার কুড়িপাড়া এলাকার আলতাফ ওরফে আলতু মিয়ার ছেলে। তার মামা রাজাকার পুত্র হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত মাকসুদ চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টির নেতা।
এ ঘটনায় গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূ বাদী হয়ে গ্রেফতারকৃত ধর্ষক গুড্ডুসহ ৩ জনের নাম উল্লেখ করে বন্দর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এ মামলা দায়ের করেন।
মামলার অপর আসামিরা হলো, বন্দরের কুড়িপাড়া নয়ামাটি এলাকার রুহুল আমিনের ভাড়াটিয়া ও মৃত তোতা মিয়ার ছেলে সোহরাব ওরফে পাগলা শুভ (৩৭) এবং একই এলাকার ছালাম মাস্টারের ছেলে ফিরোজ মিয়া (৩৬)।
ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ জানান, তিনি গত ২৫ মে সন্ধ্যা পৌঁনে ৭ টার দিকে বন্দরের মদনপুর এলাকার বারাকা হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। হাসপাতালের গেইটের সামনে যাওয়ার পর একটি সাদা রংয়ের মাইক্রোবাস তার সামনে এসে দাঁড়ায়। কিছু বুঝে উঠার আগেই গুড্ডুসহ ৩জন তাকে জোরপূর্বক গাড়িতে তুলে অপহরণ করে ঢাকার দিকে নিয়ে যায়। এরপর অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে দোতলা বাড়ির একটি কক্ষে ৫ দিন আটকে রেখে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরে অজ্ঞাতনামা এক কাজের বুয়ার মাধ্যমে তিনি ছাড়া পেয়ে গত ৩০ মে বাড়ি ফিরে এসে স্বামীকে ঘটনাটি জানান।









Discussion about this post