নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের এমপি শামীম ওসমান বলেছেন, এতকিছুর পরেও ডিএনডি ও ফতুল্লার বিভিন্ন এলাকাতে এখনো পানি জমে থাকায় আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমি মনে করি এটা আমার ব্যর্থতা। এজন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। মূলত বিভিন্ন সরকারী দপ্তর যারা সংশ্লিষ্ট তাদের সমন্বয়হীনতার কারণে অনেক স্থান হতে পারে সরতে পারছে না। আগামী রোববার পানি সম্পদমন্ত্রী আসবে এর আগেই আমাদের বসে একটি সুষ্ঠু সমাধানের পথে আসতে হবে যাতে মন্ত্রীকে বিষয়গুলো অবহিত করা যায়। তাই ডিএনডি, এলজিইডি, ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিদ্যুৎ, জনপ্রতিনিধি সহ সকলকে নিয়ে সমন্বয় সভা করে একটি রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে।
রোববার (৪ জুলাই) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে জলাবদ্ধতা নিরসন নিয়ে বৈঠকে এসব কথা বলেন শামীম ওসমান।
তিনি বলেন, এতবছর প্রকল্প কিংবা বরাদ্দ ছিল না। বাংলাদেশের এক্সপোর্টের ২৫ শতাংশ আমার এই এলাকা থেকে হয়। সেকারণেই টাকা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়ার পরেও কেন কাজ হচ্ছে না পানি সরছে না জলাবদ্ধতা দূর হচ্ছে না সেটা নিয়েও জনগণের মধ্যে প্রশ্ন থেকে যায়। আমার এলজিইডির কাজের জন্য প্রায় ১৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এ টাকাটা যদি ডিএনডিতে যুক্ত করা যায় তাহলে জলাবদ্ধতা ইস্যুতে কাজটি হয়তো স্থায়ী সমাধান হয়ে যাবে। এজন্য দ্রুত সমন্বয় করে মন্ত্রীকে অবহিত করতে হবে। ‘আমাকে যে পথ অবলম্বন করতে বলা হবে আমি করবো। যদি আমি ৭দিন পানিতে থাকলে পানি সরে যাবে আমি থাকবো। এটা আমার দায়বদ্ধতা। তাই আমি প্রশাসনকে বলবো যেখানে আমাকে যেটা করতে বলবেন জনগণের জন্য আমি সেটাই করবো।’ বক্তব্যে যোগ করেন শামীম ওসমান।
তিনি বলেন, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের কাজ চলছে। প্রায় আট কিলোমিটার রাস্তায় আমরা বালু ভরাট করছি। ওই আট কিলোমিটার রাস্তায় ডিএনডির যে খালগুলো তাদের কোন সংযোগ আছে কী না আমরা তা জানি না কারণ আমরা টেকনিক্যাল পারসন না। সড়কের দুই পাশে প্রচুর বর্জ্য ডাম্পিং করছে। ২ বছর আগে সিটি করপোরেশনকে জালকুড়িতে বর্জ্য শোধনাগার করার জন্য জমি অধিগ্রহণ করেছে। কিন্তু কাজ চলছে ধীরগতিতে। এ কারণেও লিংক রোডের অনেক স্থানে পানি জমে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, কুতুবপুরে ওয়াসার পাশে আমাদের একটা রাস্তা আছে। আগে সেই এলাকায় প্রতি বর্ষায় ওয়াসা দশটি করে অস্থায়ী পাম্প বসাতো। এখন ঢাকা সিটি করপোরেশন ওয়াসার দায়িত্ব নিয়েছে। ফলে সেই পাম্পটা এখন চলছে না। তাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আশাকরি তারা সেই পাম্পগুলো চালু করে দেবেন।
এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ। সভায় ডিএনডির মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা, এলজিইডি, সড়ক ও জনপথসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
শামীম ওসমান বলেন, আমি ২০ দিন ছিলাম না। আমি আমেরিকাতে গিয়েছিলাম আমার শ্বশুরকে দেখতে যাওয়া। কারণ তিনি সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। তাই তাঁর পাশে গিয়েছিলাম স্ত্রীকে নিয়ে। এ অবস্থায় আমার বিদেশে থাকার কথা না। দেশে ফিরেই আমি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে সভার আয়োজন করা হয়েছে। পানি দূর করতে হলে শুধু প্রশাসনের কাজ করলেই হবে না বরং জনগণকেও সচেতন হতে হবে। ইসদাইর গাবতলী জোনে আগেও পানি জমতো। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ রেললাইন তৈরি করছেন। সেই রেললাইন তৈরি করার পর যেখান দিয়ে পানি সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের পাশের খাল হয়ে বেরিয়ে যেত সেটা বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় চল্লিশ ফুটের মত স্টিলের স্ট্রাকচার দিয়ে তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আমি সেই এলাকার চেয়ারম্যানদের বলেছি সেটে ভেঙে ফেলুন, প্রয়োজনে আমার ওপর দায় দিবেন।
তিনি বলেন, শুধু প্রশাসন না বরং আমাদের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের ছেলেরাও নিজস্ব টাকা দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। লালপুরে নিজেরাই পাইপ বসাচ্ছে। এনায়েতনগরের চেয়ারম্যান নিজের পকেট থেকে লাখ টাকা খরচ করে ফেলেছে ভেকুর জন্য। সেখানে উভচর ভেকু থাকলে কাজটি সহজ হয়ে যেত। কিন্তু আমাদের কারো কাছে এ নিয়ে কোন বাজেট নাই। করোনার কারণে এমনিতে সবকিছুতেই স্থবিরতা। তাই আমাদের এখন সকলকে নিয়ে সমন্বয় করেই কাজটি করতে হবে।
শামীম ওসমান বলেন, আগামী রোববার মন্ত্রী সাহেব আসবেন। আমরা চেষ্টা করবো মন্ত্রীকে অনুরোধ করে লালপুরকে ডিএনডির প্রকল্পের মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে। এতে ৫০ কোটি টাকা বেশী লাগলেও সমস্যা হবে না। তবে ডিএনডির জন্য নতুন করে কোন বাজেট আর আপাতত পাওয়া যাবে না। তাই এলজিইডির জন্য যে ১৭০ কোটি টাকা প্রকল্প পাশ করিয়েছি সেটা হতে সমন্বয় ঘটালে লালপুরের একটি স্থায়ী সমাধান হতে পারে। যদি এ টাকা দিয়ে না হয় তাহলে আরো প্রকল্প দেখিয়ে কাজ করানো যাবে।’
শামীম ওসমান আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের অনেক প্রকল্প টিকছে না খাস জমির জন্য। আমার জানা দরকার খাস জমি কোনটা। জমির কারণে অনেক প্রকল্প ফেরত যায়। জমি আছে আমি জানি কিন্তু আমি পাই না। অন্য মানুষ ঠিকই পেয়ে যায়।’ ‘জমি অধিগ্রহণ একটি ব্যবসা হয়ে গেছে। শেখ কামাল ইন্সটিটিউট এনেছিলাম। কিন্তু জমির কারণে করা হয়নি। চলে গেছে অন্যত্র। কারণ জমি অধিগ্রহণ হলে তিন গুন টাকা পাওয়া যায়। সব দোষ শুধু রাজনীতিকদের হয়।’
শামীম ওসমান বলেন, ‘গতবছর বৃষ্টিতে তো এমন বাজে অবস্থা হয়নি। এবার এমন এত বাজে অবস্থা। সিটি করপোরেশন এলাকার পানিটা গোরস্থানের দিক দিয়ে এসে ফতুল্লা গাবতলী হয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। সেটা যেখান দিয়ে বের হওয়ার কথা সেই জায়গাটা আটকে যাচ্ছে এবং এইসব এলাকার মানুষ পানিতে ভাসছে। সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকাতে আমি কোন ড্রেন করতে পারছি না। কারণ সেটা সিটি করপোরেশনের। উন্নয়ন হলে আমার আর পানি জমলে শামীম ওসমানের। এটা হতে পারে না। কোন উন্নয়ন ব্যক্তির না। এটা সরকারের উন্নয়ন। জনগণের টাকায় সরকার উন্নয়ন করে। সুতরাং উন্নয়ন সামগ্রিক সকলের। আরো একটি বিষয় দেখতে হবে যে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি জেলা প্রশাসক সে প্রতিষ্ঠান ভেঙে দেওয়া হয়। আমি যদি আইন না মানি তাহলে সাধারণ মানুষ আইন মানবে কেন। এগুলোর একটি শেষ হওয়া দরকার।’
ডিএনডি প্রকল্প কর্মকর্তা বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। আমি কোন খাল পরিষ্কার করার কিছুদিন পর আবারো ভরে যাচ্ছে ময়লা আবর্জনাতে। এর মূল কারণ ময়লা আবর্জনা ফেলার কোন জায়গা নাই। শুধু ডিএনডির খালগুলোর পাশাপাশি অন্যান্য খালগুলোও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।









Discussion about this post