সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেছেন, ডিএনডি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যেগুলো অপসারণ উচ্ছেদ করা প্রয়োজন করা উচিত। গ্যাস লাইন ডিপিডিসি এসবকে সমন্বয় করতে হবে। একটি মসজিদ সরিয়ে দেওয়ার আগে আগে সেটাকে পুনর্বাসন করতে হবে। নতুবা আবার সোনারগাঁয়ের মামুনুল হকরা নেমে যাবে।
আজ বুধবার (৭ জুলাই) নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে জলাবদ্ধতা নিরসন নিয়ে বৈঠকে এসব কথা বলেন শামীম ওসমান। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ।
তিনি আরো বলেন, রাজউককে নারায়ণগঞ্জে ঢুকতে দেওয়া উচিত না। যারা রাজউকের অনুমতি চায় তাদের ফাইল আটকে থাকে বছরের পর বছর। আর যারা অনুমতি ছাড়াই ভবন করছে তাদের কিছুই করতে হচ্ছে না। এছাড়া সড়কের পাশে ময়লা ফেলা হচ্ছে কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর কিছুই করছে না। অথচ তারা বসে বসে বেতন নিচ্ছে। এর দায়ভার আবার আমাদের উপর বর্তাচ্ছে।
শামীম ওসমান বলেন, দুই একটি মিডিয়া বিশেষ করে ফেসবুকে ইচ্ছামত অপপ্রচার চালাচ্ছে। যদিও আমার ফেসবুক নাই। অপপ্রচার যারা চালাচ্ছেন তাদের বলছি যারা জন প্রতিনিধি তাদের কাজটি হলো টাকা নিয়ে আসা। কিন্তু বিয়ে থেকে শুরু করে মুরগী চোর থেকে শুরু করে হিমালয় পর্যন্ত দেখতে হয়। এমনি এমনি প্রকল্প পাশ কিংবা টাকা বরাদ্দ হয় না। আগে যারা ছিল তারা কাজ করে নাই। তাই সব আমার ঘাড়ে এসে পড়ছে। গতবার পানি জমেনি এবার জমেছে। সব কাজ আমার না। সকল দপ্তর সংস্থার সমন্বয় না হলে কোন কাজই টিকবে না সুষ্ঠুভাবে শেষ হবে না। ‘পানিতে ডুবলো’ এসব সস্তা রাজনীতি আমরা করি না। আমাদের পায়ের তলার মাঠি অনেক শক্ত। তিন পুরুষ ধরে রাজনীতি করি। এসমস্ত ঠুনকো জিনিস ফেসবুকে ছেড়ে দিয়ে কোন কাজ হবে না। তাই পজেটিভ বিষয়গুলো দেখেন। সেনাবাহিনী প্রশাসন চেয়ারম্যান কে কি করছে জলাবদ্ধতা নিয়ে সেগুলো তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, অনেকেই মনে করেন সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আমাদের বৈরিতা আছে। প্রকৃতপক্ষে সেটা নাই। আমরা নারায়ণগঞ্জের মানুষ। এ মানুষকে আমাদের ভালো রাখতে হবে। সিটি করপোরেশনের সঙ্গে হাতজোড় করে অনুরোধ করবো দুই বছর আগে ময়লা ফেলার একটি জায়গা দেওয়া হয়েছে। অনেক কষ্ট করে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে এলাকাবাসীর বাধার মুখেও। কিন্তু কাজটি শেষ হয়নি। এখন আমাদের ঢাকাতে গিয়ে ময়লা ফেলতে হচ্ছে। তাছাড়া একটি সমন্বয় করা দরকার। সিটি করপোরেশন সিদ্ধিরগঞ্জে কিভাবে ড্রেনেজ করবে সেটা একটি সমন্বয় করা দরকার।
শামীম ওসমান বলেন, এলজিইডি হতে ১৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ আনতে আমাকে দুটি স্টাইল দেখাতে হয়েছে। একটি ভালো আরেকটি খারাপ। এছাড়া জেলা পরিষদের ১০০ কোটি টাকা ফিক্সড ডিপোজিট আছে। আমাদের জনগণ পানিতে ডুবে মরবে আর টাকা ব্যাংকে থাকবে সেটা ঠিক হচ্ছে না। ফতুল্লা লালপুর সিদ্ধিরগঞ্জে আমাদের লোকজন পকেটের টাকা খরচ করে ড্রেজার পাম্প বসাচ্ছে। পকেটের টাকা আমাদের লোকজন খরচ করবে আর জেলা পরিষদের টাকা অনর্থক পরে থাকবে সেটা হবে না। এ বছর পানি থাকায় একটি সুবিধে হয়েছে সেটা হলো এটার স্থায়ী সমাধান হবে। নতুবা ডিএনডি প্রকল্পের কাজ শেষ হলে সেনাবাহিনী চলে যেত। তখন লালপুরের পানি জমেই থাকতো। এখন হওয়াতে এটার স্থায়ী সমাধান হবে। আশা করছি আগামী বছর আর পানি জমবে না।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আজগর হোসেন বলেন, সিটি করপোরেশনের সিদ্ধিরগঞ্জের ৯টি ওয়ার্ডের প্রত্যেকটি সড়কের পাশেই ড্রেন নির্মাণ রয়েছে। আমরা প্রত্যেকটি ড্রেনের সংযোগটি ডিএনডি ক্যানেলে দেওয়া হয়েছে। ফলে বৃষ্টি হলে ক্যানেলের পানি নিস্কাশন না হওয়াতে কিছু এলাকাতে পানি জমছে। তাছাড়া জামতলা মাসদাইর এলাকার পানি কালিয়ানী খাল দিয়ে নিস্কাশন হতো। কিন্তু ওই খাল ভরাট দখলের কারণে সিটি করপোরেশনের ড্রেনে কলেজ রোডে এসে পড়ছে। এ কারণেই সেখানে পানি জমে আসছে। সে কারণে সিটি করপোরেশন খাল খনন ও উচ্ছেদ শুরু করেছে।
বর্জ্য ডাম্পিং প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা শুধু জায়গা অধিগ্রহণ করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী মন্ত্রণালয়কে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। চায়না কোম্পানীকে দিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। এখানে আর সিটি করপোরেশনের কিছু নাই। তারা কাজ শেষ করে সিটি করপোরেশনকে বুঝিয়ে দিবে।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সেলিম রেজা, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল নারায়ণগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খালেদ সালাহউদ্দিন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আজগর হোসেন, নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াত হোসেন, এলজিইডি নারায়ণগঞ্জ’র নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ তাজুল ইসলাম তুহিন, গণপূর্ত নারায়ণগঞ্জ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফা জহুরা, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. খোকন সাহা, যুগ্ম সম্পাদক শাহ্ নিজাম, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাড. আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস, বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত আলী, ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান স্বপন, এনায়েতনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান, কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টু প্রমুখ।








Discussion about this post