পূর্ব থেকেই একজন এএসআই কে দূরে দাঁড়িয়ে রাখার পাশাপাশি পারভেজ নামের একজন সাংবাদিককে সংবাদ প্রকাশের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছিলো ২০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের নাটক পুরোপুরি মঞ্চায়ণ করার জন্য। যার কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা ছিনতাই হয়েছে বলে দাবী করা হলো তিনি হলেন শহরের খানপুর ৩শ শয্যা হাসপাতাল গেইট সংলগ্ন সরকার ফার্মেসীর পরিচালক রাসেল (৩০)। আর যিনি ২০ লাখ টাকা ছিনতাই হয়েছে শুনতে পেয়ে দ্রুত সনাতন পাল লেন এসে নাটক করার চেষ্টা করলেন তিনি হলেন নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার শীতলক্ষ্যা ফাঁড়ির এএসআই রাশেদ । আর অপরজন যিনি ছিনতাইয়ের ঘটনায় সংবাদ প্রকাশ করবেন বলে পূর্ব থেকেই সনাতন পাল লেন এলাকায় অবস্থান করছিলেন তিনি হলেন পারভেজ নামের একজন কথিত সংবাদকর্মী । উল্লেখিত তিন জনই নিজেদের কে খালাতো ভাই বলে দাবী করেছেন নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট এর কাছে। ছিনতাইয়ের নাটক মঞ্চায়ণকালে সিসি টিভি ফুটেজ দ্রুত প্রকাশ হলে এক ধরণের পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন ওই তিন ব্যাক্তি । এরপর এতো বড় ঘটনায় খালাতো ভাই দাবী করা পারভেজ দিনে দুপুরে শহরের ২নং রেল গেইট এলাকায় ২০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় সংবাদ করেন নাই তার দাবী করা গণমাধ্যমে। একই সাথে এএসআই রাশেদ আইন অনুযায়ী কোন ব্যবস্থা নেন নাই। এমনকি তার উর্ধতন কর্মকর্তাদের কে এতো বড় অঘটনের বিষয়ে অবহিতও করেন নাই ।
২০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের খবর পেয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের অনেকেই ঘটনাস্থল উপস্থিত হলেই দ্রুত সটকে পরেন ২০ লাখ টাকা মঞ্চায়ণকারী এই চক্রের সদস্যরা । স্থানীয় অনেকেই মন্তব্য করেছেন এই ঘটনার নেপথ্যে বিশাল একটি অপরাধী চক্র জড়িত । নেপথ্যে রয়েছে প্রতারণার গ্যাং চক্র । যা খুজে বের করা জরুরী
দাবি করা হয়েছিলো, চারজন ব্যক্তি তাকে কালি মন্দির গলিতে নিয়ে সঙ্গে থাকা কালো রঙের ব্যাগ থেকে ২০ লাখ টাকা ছিনতাই করে নিয়ে গেছে। যদিও পরে তিনি টাকার অঙ্ক কমিয়ে বলেছেন, ১২ লাখ টাকা। ঘটনাটি ২৭ সেপ্টেম্বর দুপুরের।
তবে, ঘটনার তিনদিন অতিবাহিত হতে চললেও এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সদর মডেল থানায় কোনো অভিযোগ দায়ের করেননি কথিত ছিনতাইয়ের শিকার রাসেল নামক ওই যুবক। এ নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এখানে একজন পুলিশ কর্মকর্তার নামও জড়িয়েছে। এ নিয়ে সর্বমহলেই চলছে সমালোচনা।
এদিকে প্রশ্ন উঠেছে, সত্যিই কী ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছিল! যদি ঘটে না থাকে তাহলে এমন দাবি পেছনে কী এমন রহস্য লুকিয়ে আছে ?
অন্যদিকে ঘটনার দ্বিতীয় দিন রাতে কথিত ছিনতাইয়ের শিকার সরকার রাসেল জানিয়েছিলেন, তিনি বুধবার (আজ) থানা অভিযোগ দিবেন। মামলা করবেন। এবং তার দাবি, তিনি ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছিলেন। দুই নম্বর গেট ডাচ বাংলা ব্যাঙ্কের সামনে তার বোন তাকে ১২ লাখ টাকা দিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু কেন দিয়েছিলেন, এবং রাস্তার মধ্যে কেন এই টাকা দিলেন, এমন প্রশ্নের সঠিক কোনো উত্তর তিনি দিতে পারেননি। এমনকী তার কথা অনুযায়ি তিনি থানায় কোনো মামলা, অভিযোগও করেননি।
এদিকে ঘটনার সাথে যেই পুলিশ কর্মকর্তার নাম উঠে এসেছে তিনি নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রাশেদ। ঘটনার পরপরই তিনি কোনো রকম ফোর্স না নিয়ে এবং থানাকে অবহিত না করেই ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছিলেন। তিনি কথিত ছিনতাইয়ের শিকার সরকার রাসেলের খালাতো ভাই। পুলিশের এই কর্মকর্তা ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর জানিয়েছিলেন, ‘তাকে থানায় এসে অভিযোগ দিতে বলেছিলাম। তিনি আসেননি। মিথ্যা নাটকের কারণে তার বিরুদ্ধে আমি থানায় অভিযোগ করবো।’
তবে, তিনিও কোনো অভিযোগ করেননি। মঙ্গলবার এ প্রসঙ্গে তিনি আবারও জানিয়েছেন, তার খালাতো ভাইয়ের টাকা ছিনতাই হয়েছে এটা সত্যি। এই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ আছে। তা সংগ্রহ করার চেষ্টা করছে পুলিশ। ঘটনাটি তিনি থানায় অবগত করেই গিয়েছিলেন বলে দাবি করেন এবং বিষয়টি পুলিশ সুপারকেও জানানো হয়েছে বলে দাবি করেন। একই সঙ্গে জানিয়েছেন, ওই ঘটনায় তার খালাতো ভাই মামলা করবেন। তবে, অদ্যবধি এমন কোনো অভিযোগ বা মামলা থানায় জমা হয়নি।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক অঞ্চল) মোহাম্মদ নাজমুল হাসান জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। তাকে কেউ কিছুই জানানো হয় নাই । এবং তিনি বলেছেন, এ ব্যাপারে জেনে আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি ।
অন্যদিকে ঘটনার দিন সদর মডেল থানা পুলিশের সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রাশেদ জানিয়েছিলেন, রাসেল আমার খালাতো ভাই। সে আমাকে ফোন করে জানায়, ‘চারজন ছিনতাইকারি তাকে মারধর করে বিশ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিছে। এমন খবর পেয়ে এসে দেখি তার শার্ট ছেঁড়া। তল্লাশি করে ব্যাগটি উদ্ধার করি। তবে, ছিনতাইয়ের কোনো আলামত পাইনি। পরে রাসেল আবারও জানায়, বিশ লাখ নয়, তার ১২ (বারো) লাখ টাকা ছিলো।’
২৭ সেপ্টেম্বর দুপুরের দিকে ডাচ বাংলা ব্যাঙ্কের পেছনে সনাতন পাল লেন কালি মন্দিরের সামনে চারজন ছিনতাইকারি রাসেল নামক এক ব্যক্তিকে মারধর করে বিশ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এমন দাবি খোদ ওই ব্যক্তি নিজে করেন এবং আহাজারি করেত থাকেন। কিছুক্ষণ পরেই সদর মডেল থানার এএসআই রাশেদ ঘটনাস্থলে আসেন এবং ব্যাগটি উদ্ধার করেন। এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ দেওয়ারও প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তবে, সাংবাদিকেরা বিষয়টি আগেই জেনে ফেলাতে পরে আর থানায় কোনো অভিযোগ দায়ের হয়নি। এবং একটি সিসি টিভি ফুটেজে ছিনতাইয়ের নাটক সাজানোর বিষয়টিও স্পষ্ট হয়ে উঠে।
এদিকে গত তিন দিনেও ওই ঘটনায় কোনো অভিযোগ না হওয়াতে ছিনতাইয়ের ঘটনাটি সাজানোর নেপথ্যে দুটি ধারণা করা হচ্ছে। যার একটি ছিনতাইয়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি। মিথ্যা নাটক সাজিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা খালতো ভাইয়ের সাহায্য নিয়ে কাউকে না কাউকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছিল তারা। আর যদি এটা না হয়ে থাকে তাহলে, বোনের দেওয়া ১২ লাখ টাকা পুলিশ কর্মকর্তা খালাতো ভাইয়ের সাহায্যে আত্মসাৎ করার পরিকল্পনা থেকেই এমন ঘটনার সূত্রপাত বলে মনে করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলের দিকে সদর মডেল থানা পুলিশের অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) মোহাম্মদ শাহ্ জামান জানিয়েছেন, “এএসআই রাশেদ আমাদের থানার নন। তিনি শীতলক্ষ্যা ফাঁড়ির। যদিও সেই ফাঁড়িটি আমাদের থানার অন্তর্ভূক্ত। তবে, তিনি ঘটনাস্থলে যাওয়া প্রসঙ্গে আমাদেরকে কিছু জানায়নি। এটা তিনি অন্যায় করেছেন। এ ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করারও এখতিয়ারও রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “ছিনতাইয়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি। যদি সত্যি সত্যি বিশ লাখ টাকা ছিনতাই হতো তাহলে এই মামলা নিয়ে আমাকে কতটা ঘাম ঝরাতে হতো। গত এক বছর ধরে এই থানাতে আমি আছি। এখনও পর্যন্ত এখানে বড় কোনো ঘটনা ঘটেনি। সেখানে যদি এমন ছিনতাইয়ের ঘটনা হয়েই যেত, তাহলে এই এক বছরে আমাদের অক্লান্ত পরিশ্রম বৃথা যেত। এখন তারা এমন নাটক সাজাবে, তাহলে তো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে। মাননীয় পুলিশ সুপার সাহেব অবশ্যই ব্যবস্থা নিবেন।”









Discussion about this post