মাত্র চার বছর আগেও যিনি অন্যের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন, সেই ছৈয়দ আলী সবুজ কী করে রাতারাতি ধনকুবেরে পরিণত হলেন, তা এলাকাবাসীর কাছেও এক বড় প্রশ্ন ।
জানা গেছে, বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের মজিবুল হক দেওয়ানের ছেলে ছৈয়দ আলী সবুজ। নদীভাঙনের কবলে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়ে সপরিবারে চলে আসেন সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি কালুহাজী রোড এলাকায়। মাসিক ৮০০ টাকা ভাড়ায় ঠাঁই নেন ইসমাইল মাস্টারের বাড়িতে। করতেন দিনমজুরের কাজ। পরে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে ঢাকার মতিঝিলের দিলকুশায় কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালে নিরাপত্তা প্রহরীর চাকরি পান ছৈয়দ আলী সবুজ। এরপর আড়াই হাজার টাকা মাসিক ভাড়ায় একই এলাকার আলেক মিয়ার বাড়িতে ওঠেন। ২০১৭ সাল পর্যন্ত ওই বাড়িতেই ছিলেন।২০১৮ সালে ভাড়া বাড়ি ছেড়ে ওঠেন একই এলাকায় নিজের করা তিনতলা বাড়িতে। ওই এলাকায় তার আরও একটি বাড়ির সন্ধান মিলেছে। মাত্র সাড়ে ১৪ হাজার টাকা বেতনের একজন নিরাপত্তা প্রহরী কী করে রাতারাতি এত টাকার মালিক হলেন তা নিয়ে এলাকায় চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।
গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জের কালুহাজী রোড এলাকার মসজিদ সংলগ্ন সিদ্ধিরগঞ্জ মৌজায় ৩ শতাংশ জমিতে তিনতলা বাড়ি, তার পাশেই ৯ শতাংশ জমিতে সেমিপাকা বাড়ি, এর পাশেই অন্তর ভিলা নামে একটি ভবনের চার ও পাঁচতলায় দুটি ফ্ল্যাট, রূপগঞ্জের গাউছিয়াতে সোয়া পাঁচ শতাংশ জমিতে বাড়ি, ঢাকার ডেমরার কোনাপাড়ায় পাঁচ শতাংশ জমি এবং শনিরআখড়াতে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে ছৈয়দ আলী সবুজের। এর বাইরে স্ত্রীর শতাধিক ভরি সোনার অলংকারসহ ছৈয়দ আলী সবুজ কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী।
তার ছেলে ডেমরার সামছুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী । যেখানে মাসিক বেতন ৩ হাজার টাকা। এছাড়া ভর্তি হতে দিতে হয়েছে মোটা অঙ্কের অনুদান (ডোনেশন)।
কালুহাজী রোড এলাকার বাসিন্দা প্রতিবেশী আলেক মিয়া জানান, ছৈয়দ আলী সবুজ পরিবার নিয়ে সাত বছর তার বাড়িতে ভাড়া ছিলেন। তিনি বলেন, ‘খুব কষ্ট করে চলত সবুজের পরিবার। এমনকি সময়মতো বাড়িভাড়াও দিতে পারত না। হঠাৎ কী করে তিনি একাধিক বাড়ি ও এত টাকার মালিক হলেন তা আমার বোধগম্য নয়।’
সামান্য বেতনের চাকরি করে কীভাবে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়লেন তা জানতে চাইলে ছৈয়দ আলী সবুজ বলেন, ‘নদীভাঙনে নিঃস্ব হয়ে সপরিবারে বরিশাল ছেড়ে চলে আসি। বাবার দুই সংসারের পাঁচ ভাই ও পাঁচ বোনসহ ১২ সদস্যের পরিবার। বড় ছেলে হিসেবে আমাকেই সংসারের হাল ধরতে হয়। সরকারি চাকরি পাওয়ার পর বহুকষ্টে তিলে তিলে এসব সম্পদ করেছি। চব্বিশ বছর ধরে চাকরি করছি। চুরি, ডাকাতি করে সম্পদ করিনি।’
নিরাপত্তা প্রহরী সবুজের আয়ের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে মতিঝিলের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা বিপ্লব রায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। নিরাপত্তা প্রহরী ছৈয়দ আলী সবুজের বিষয়ে তেমন কিছু অবগত নই। তবে ১০-১২ বছর চাকরি করে একজন নিরাপত্তা প্রহরীর এত টাকার মালিক হওয়া অকল্পনীয়।’









Discussion about this post