নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়ন ছাড়া অন্যান্য ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্খীরা যেন অতিমাত্রায় ভদ্রলোক হয়ে গেছেন । একদিকে কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী এম সাইফ উল্লাহ বাদলের পুত্রের হামলায় পুরো জেলায় প্রশাসন নড়েচড়ে উঠলেও সদর উপজেলার আলীরটেক ও গোগনগর ইনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীদের উপর হামলার অভিযোগ উঠলেও প্রশাসন রয়েছে নিশ্চুপ। একই সাথে হাইভোল্টোজ নির্বাচন হিসেবে নারায়ণগঞ্জে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীর উপর হামলার পরও নারায়ণঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের নেতাদের নিশ্চুপ ভুমিকায় রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে আরো জোড়ালোভাবে ।
আগামী ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নারায়ণগঞ্জের ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে কয়েকটিতে ইতোমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে গেছে। কিন্তু কয়েকটিতে এখন বিরাজ করছে সংঘাতের পরিস্থিতি। সেখানে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের লোকজন একে অন্যের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে যাচ্ছে। এলাকায় বিরাজ করছে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি। এসব ঘটনায় থানায় মামলা অভিযোগও রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশী আক্রান্ত হচ্ছে নৌকার প্রার্থীরা।
বন্দরে নৌকার ক্যাম্প ভাঙচুর
বন্দরে কলাগাছিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজিম উদ্দিনের নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। তার দাবী প্রতিপক্ষ জাতীয় পার্টির প্রার্থী দেলোয়ার প্রধানের নির্দেশেই এই হামলা চালানো হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযোগ ও জিডি না নেয়ার অভিযোগ তুলেছেন কাজিম উদ্দিন।
২৯ অক্টোবর শুক্রবার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের সাবদী বাজার এলাকায় অবস্থিত নৌকার নির্বাচনী ক্যাম্প ভেঙ্গে ফেলে দুর্বিত্তরা। মধ্যরাতের কোন একটি সময় এই ক্যাম্প ভেঙ্গে ফেলা হয়।
কাজিমউদ্দিন বলেন, সাবদী বাজার এলাকায় শুক্রবার বিকেলে আমি আমার নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন করেছি। সেই এলাকায় বর্তমান চেয়ারম্যান ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী দেলোয়ার প্রধানের ৪টি ক্যাম্প রয়েছে। রাত ২ টার পর আমার লোকজন ক্যাম্প বন্ধ করে চলে আসে। সকালে সেটা ভাঙ্গা দেখতে পায়। আমি মনে করি দেলোয়ার প্রধানই নির্দেশ দিয়ে রাতের আঁধারে এই হামলা চালিয়েছে।
এর আগে বন্দরের কলাগাছিয়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজিমউদ্দিনের অনুগামীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলা করেছেন দেলোয়ার চেয়ারম্যানের লোকজন।
গোগনগের নৌকার ক্যাম্প ভাঙচুর
সদর উপজেলার গোগনগর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী জসিমউদ্দিনের নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুরের অভিযোগে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।
জসিমউদ্দিন আহম্মেদ জানান, চরসৈয়দপুর এলাকার দৌলত হোসেন মেম্বারের ছেলে আবুল কাশেম সম্রাট, মৃত আনোয়ারের ছেলে শরিফ, আবুল হোসেনের ছেলে শাহ পরান, মৃত আব্দুল খালেকের ছেলে কালাচান, আব্দুল জলিলের ছেলে রানা, মৃত কাদিরের ছেলে হাবিব, দৌলত হোসেনের ছেলে ফয়সাল, পুরান সৈয়দপুর এলাকার মৃত কাদিরের ছেলে রবিন ও রুবেল, আব্দুল জলিলের ছেলে সোহেল, আব্দুল কাদিরের ছেলে আনসার, পূর্ব সৈয়দপুর এলাকার মৃত রফিকুল ইসলাম ফেিকরর ছেলে নাজির হোসেন ফকির সহ অজ্ঞাত নামা ২০/২৫ চরসৈয়দপুর কবরস্থান রোডের তোফাজ্জলের বাড়ির পাশে নির্বাচনী ক্যাম্প ভাংচুর করে। বিবাদীরা মটর সাইকেল প্রতিকের প্রার্থী ফজর আলীর লোক। বিচ্ছু বাহিনীর পৃষ্ঠপোশক চেয়ারম্যান প্রার্থী ফজর আলী।
এর আগে গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী ফজর আলীর পক্ষে না যাওয়ায় আওয়ামী লীগ নেতা ওমর ফারুককে লাঞ্ছিত করে ফজর আলীর বেতনভুক্ত কর্মচারী রোস্তম আলী সরদার। ঘটনাটি ঘটেছে ২২ অক্টোবর সকাল ১১ টায় পুরাতন সৈয়দপুর দুদু মুন্সির মাজার সংলগ্ন স্থানে।
গোগনগর ইউনিয়ন ৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ওমর ফারুক বলেন, চেয়ারম্যান প্রার্থী ফজর আলী আমাকে বাসা হতে ডেকে এনে নৌকার প্রার্থী জসিমউদ্দীন আহম্মেদ এর পক্ষে কাজ না করে তার পক্ষে কাজ করতে বলেন। এমনকি একলাখ টাকার অফার দেয় ফজর আলী তার পক্ষে কাজ করতে।
আলীরটেকে সন্ত্রাসী
আলীরটেকে আওয়ামী লীগের নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী জাকির হোসেন বলেন, নির্বাচনে আসার আগে কতিপয় সন্ত্রাস আওয়ামী লীগের কর্মী সভায় হামলা করেছে। জাকির চেয়ারম্যানের কোনো লোক অত্যাচার অন্যায় করে না। যেখানে অন্যায় অত্যাচার হয় তার বিরুদ্ধে কথা বলে। আমরা থাকা অবস্থায় সন্ত্রাস হবে না। জাকির চেয়ারম্যানের কোনো লোক সন্ত্রাস করবে না।
প্রসঙ্গত সদর উপজেলার আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতিকের চেয়ারম্যান প্রার্থী জাকির হোসেনের সমর্থকদের উপর স্বতন্ত্র প্রার্থী সায়েম আহমেদের সমর্থকদের হামলার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
২৩ অক্টোবর সদর থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ খোকন বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় আসামী করা হয়েছে ২২ জনকে এবং প্রধান আসামী হিসেবে রয়েছেন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী সায়েম আহমেদ। সায়েম এক সময়ে ছাত্রদল হয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ছিলেন। বিগত বিএনপি সরকারের আমলে যখন নাশকতার ঘটনা ঘটে তখন সক্রিয় ছিলেন সায়েম ও তার অনুগামীরা।
বাকী আসামীরা হলেন তোফাজ্জল, রতন, আনিছ, সীমান্ত, ফালান মিয়া, আউয়াল জামাই, জনু, মতি, সাত্তার, মোফাজ্জল, দীন ইসলাম, শাকিল, তাউলাদ, আল আমিন, সিরাজুল মেম্বার, মাসুদ, ইসমাইল, শুক্কর কবুতর, সাহাবুদ্দিন, তাওলাদ ও নাসির।
এর আগে ২২ অক্টোবর বিকেলে আলীরটেক ইউনিয়নের কুড়েরপাড় ব্রীজে এই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় আহতরা হলেন মো. আলী, মোবারক আলী, মাহিম, আলমগির, সাফিজুদ্দিন সহ প্রায় ১০ জন।
আহতরা জানান, চেয়ারম্যান প্রার্থী সায়েম আহমেদের লোক রতন, আল আমিন, শ্যামল, মতি চেয়ারম্যানের কাছের লোক তোফাজ্জল ও ডিক্রিচরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী আওলাদ হোসেনের নিদের্শে মোফাজ্জল সহ ১০ থেকে ২০ জন লোক এসে আতর্কিত ভাবে হামলা চালায়। আওলাদ হোসেন ও তোফাজ্জল বর্তমান চেয়ারম্যান মতির ঘনিষ্টজন। মতির অনেক অপকর্মের স্বাক্ষী তারা। তারা এলাকায় উত্তেজনা তৈরী করার জন্য এ হামলা করে। এই ঘটনার পিছনে মাস্টার মাইন্ড হিসেবে কাজ করে মতির ১ নম্বর খলিফা মেম্বার প্রার্থী আওলাদ হোসেন এবং তোফাজ্জল হোসেন। এর আগেও তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ আছে। তোফাজ্জল ও মেম্বার প্রার্থী আওলাদের গ্রেপ্তারের দাবী তুলেন তারা।
তবে রূপগঞ্জের বহুল আলোচিত ইউনিয়ন কায়েতপাড়া ইউনিয়ন। এখানে বর্তমান চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের ভাই মিজানুর রহমান প্রার্থী হয়েছেন বিদ্রোহী হয়ে। নৌকা পেয়েছেন মন্ত্রী গাজী সমর্থিত জায়েদ আলী। এদিকে সবশেষ ২৭ অক্টোবর কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নাওড়া এলাকায় মারামারির ঘটনা ঘটে।








Discussion about this post