দীর্ঘ দুই যুগ আরো ছয় বছর অর্থাৎ তিন দশক (৩০ বছর) পর অবশেষে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ইউপি নির্বাচন।
দীর্ঘ সময় ধরে আটকে থাকা এই ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৩ ডিসেম্বর। নির্বাচন নিয়ে আদালতে দায়ের করা রিট নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়ায় ৪র্থ ইউপি নির্বাচনে সদর উপজেলার এই ইউনিয়নটিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বুধবার (১০ নভেম্বর) তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে এই তথ্য প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। এতে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা ইউনিয়নে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়।
তফসিল অনুযায়ী ফতুল্লা ইউনিয়নে মনোনয়ন পত্র দাখিলের তারিখ ধার্য্য করা হয়েছে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত। এরপর ২৯ নভেম্বর সকল প্রার্থীর মনোনয়ন বাছাই সম্পন্ন হবে। প্রার্থীরা আপিল করতে পারবেন ৩০ নভেম্বরে। এসব আপিল নিষ্পত্তি হবে ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে। প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে পারবেন ৬ ডিসেম্বরের মধ্যে। এরপর ৭ ডিসেম্বর প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্ধ দেয়া হবে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৯২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী সবশেষ ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে নূর হোসেন জয়ী হন চেয়ারম্যান হিসেবে । এরপর মামলা দায়ের করে গত ৩০ বছর যাবৎ বছর ধরে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন আটকে রেখেছিলো আদালতে দায়ের করা রিটের মাধ্যমে। পক্ষে ও বিপক্ষে দায়ের করা দুই মামলার বাদীরা হলো- ফতুল্লার কুতুবআইল (ইরান গার্মেন্ট সংলগ্ন) এলাকার মৃত, হাসান আলী মাতবরের ছেলে কদর আলী মাতবর অপরজন পার্শ্ববর্তী বাড়ির মৃত. সোহরাফ মাতবরের ছেলে হানিফ মাতবর। তারা দুজন একই দিন তৎকালীন ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর হোসেন ও ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য মালেক মেম্বারের অপকৌশলে পড়ে ১৯৯৬ সালে হাই কোর্টে পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় নির্বাচন স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন আদালত। এ মামলা দায়েরের পর ২০১১ সালের ৫ অক্টোবর চেয়ারম্যান নূর হোসেনের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়।
এ ব্যাপারে কদর আলী মাতবর ও হানিফ মাতবরের সঙ্গে কথা হয়। তাদের মধ্যে কদর আলী মাতবর ফতুল্লা ইউনিয়নকে পৌর সভা করার দাবী জানিয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেছিলেন। আর হানিফ ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদ বহাল রাখার দাবী জানিয়ে রিট করেছেন।
কদর আলী মাতবরের বক্তব্য, আমি কোন রিট মামলা করিনি। নূর হোসেন চেয়ারম্যান ও মালেক মেম্বার আমাকে ও হানিফকে বেড়ানোর কথা বলে বাসা থেকে ডেকে গাড়িতে উঠিয়ে উচ্চ আদালতে নিয়ে যায়। সেখানে একজন নারী আইনজীবীর চেম্বারে দুটি কাগজে দুজনকে স্বাক্ষর করান। তখন আমরা দুজনেই জিজ্ঞেস করি কিসের কাগজে স্বাক্ষর করালেন। তারা আমাদের বলেছে একটি মামলা করবো। সেখানে তোমরা দুইজন সাক্ষী দিবে। পরে সব বুজিয়ে বলবো। এরপর শুনি তারা দুজন আমাদের দুজনকে দিয়ে দুইটি মামলা করিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নূর হোসেন চেয়ারম্যানের মৃত্যুর ১৫দিন পর মালেক মেম্বারকে নিয়ে আমি ও হানিফ হাই কোর্টে যাই। এরপর সেই মামলা প্রত্যাহার করে নিতে অনুরোধ করি আইনজীবীকে। এতে তিনি দুইটি কাগজে স্বাক্ষর রেখে বলেন, এটি আদালতে জমা দেয়ার পর আপনাদের মামলা প্রত্যাহার হয়ে যাবে। আর আদালতে আসতে হবে না।
এসব মামলা শেষ পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়ায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে আর কোন বাঁধা থাকছে না এই ইউনিয়নে। আর তাই বুধবার তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে ইউনিয়নে নির্বাচনী আমেজ ফিরিয়ে আনা হলো প্রায় ৩০ বছর পর।









Discussion about this post