কে হবেন এবার মেয়র প্রার্থী সেটা নিয়ে আওয়ামী লীগে শুরু হয়েছে ভেতরগত স্নায়ুযুদ্ধ। বর্তমান মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে ইতোমধ্যে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হয়েছে। নিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদল, মহানগরের সেক্রেটারী খোকন সাহা ও সহ সভাপতি চন্দন শীল। এরই মধ্যে আইভী ইস্যুতে বৈঠক হয়েছে। ২৯ নভেম্বর বিকেল থেকে কয়েক ঘণ্টার ম্যারাথান ওই বৈঠকে মহানগর আওয়ামী লীগের একটি অংশের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে উঠে আসে নির্বাচন কেন্দ্রীক নানা ইস্যু। ২৭টি ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের সকলেই শামীম ওসমান অনুগামী।
স্বল্প সময়ের নোটিসে অনুসারী নেতা-কর্মীদের ডেকে ফতুল্লার নাসিম ওসমান মেমোরিয়াল (নম) পার্কে বৈঠক করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান।
সোমবার (২৯ নভেম্বর) বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত চলে ওই বৈঠক। বৈঠকে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন ও মেয়র পদে মনোনয়ন। সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন পরিচালনার স্থানীয় নেতাদের সমন্বয়ে ২৭টি ওয়ার্ডে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তও হয় বৈঠকে।
একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, বৈঠকে শামীম ওসমান নিজে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. খোকন সাহা, সহসভাপতি রবিউল হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক শাহ্ নিজাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, অ্যাড. মাহমুদা মালাসহ সাংসদ শামীম ওসমান অনুসারী আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী। তবে এই বৈঠক প্রসঙ্গে জানতেন না শামীম ওসমান অনুসারীদের বাইরের কোনো আওয়ামী লীগ নেতা। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন পরিচালনার বিষয়ে সাধারণভাবেই কাজ করার কথা মহানগর আওয়ামী লীগের।
তবে এই বৈঠক প্রসঙ্গে অবগত ছিলেন না বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন।
আনোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কমিটি করবে মহানগর আওয়ামী লীগের সকল নেতা বসে। আলোচনার মধ্য দিয়ে কমিটি হবে। এইভাবে কমিটি গঠন করা যায় না। আর বৈঠক সম্পর্কে সভাপতি হিসেবে আমি কিছুই জানি না।’ এভাবে নির্বাচন কেন্দ্রীক কমিটি গঠন করা যায় না বলে মন্তব্য করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম আরাফাতও।
আরাফাত বলেন, ‘শুনেছি এই ধরনের একটি সভা হয়েছে। ওই সভায় নাকি ২৭ ওয়ার্ডে কমিটি গঠন করা হয়েছে। আসলে গঠনতন্ত্রে এইভাবে কমিটি গঠন করার কোনো সুযোগ নেই। এইটা যারা করেছেন তারাই ভালো বলতে পারবেন।’
এদিকে নম পার্কে অনুষ্ঠিত ওই সভায় উপস্থিত একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, শর্ট টাইম নোটিশে তাদের ডেকেছিলেন সাংসদ শামীম ওসমান। সভায় মহানগর অর্থ্যাৎ সদর, বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন ২৭টি ওয়ার্ডের স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বক্তব্য রেখেছেন। আওয়ামী লীগের কমিটিতে না থাকলেও ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকজন নেতাও। এই নেতারা সাংসদ অনুসারী। মহানগর আওয়ামী লীগেরও কয়েকজন পদধারী নেতা উপস্থিত ছিলেন সভায়। সকলের আলোচনায় সবচেয়ে বেশি উঠে এসেছে সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রসঙ্গ। তাদের মধ্যে অধিকাংশ নেতাই বলেছেন, তারা বর্তমান সিটি মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে চান না। এইবার যেন তাকে সিটি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া না হয়। এই বিষয়ে কেন্দ্রে লিখিত দিতেও তারা প্রস্তুত। আইভীর বাইরে যে কাউকেই নৌকার মনোনয়ন দেওয়া হোক তাতে তাদের কোনো সমস্যা নেই। কেবল আইভীকে মনোনয়ন দেওয়া যাবে না বলে সভায় একাট্টা ছিলেন নেতারা।
এদিকে সূত্র বলছে, এই ধরনের সভা ২০১৬ সালে দ্বিতীয় দফায় অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনের পূর্বেও হয়েছিল। ওই সময়ও আইভীকে মনোনয়ন না দেওয়ার জন্য একাট্টা ছিলেন শামীম ওসমান অনুসারীরা। একইভাবে ২৭ ওয়ার্ডে কমিটি গঠন করে রেজুলেশন তৈরি করা হয়েছিল। তারা কেন্দ্রে আইভীর নাম পর্যন্ত পাঠাননি। যদিও দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তালিকার বাইরে থেকেই ডা. আইভীকে নির্বাচন করেন। তাকেই দেন নৌকার মনোনয়ন। একইভাবে এবারও আইভীকে মাইনাস করার জন্য একাট্টা হয়েছে আওয়ামী লীগের একাংশ। তবে গতবার এই অংশের সাথে যুক্ত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন। কেননা তিনি নিজেও তখন সিটি মেয়র পদে নির্বাচন করতে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশা করেছিলেন।
নাম প্রকাশ না করা অনুরোধে বৈঠকে উপস্থিত একজন নেতা নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট কে মুঠোফোনে ১২ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের আলোচনাকালে বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে যে কোন প্রার্থীই জয়ী হউক তাতে কোন আপত্তি নেই । কিন্তু কোন অবস্থাতেই যেন এবার আর আইভী যেন মনোনয়ন না পান এবং নাসিক চেয়ারে মেয়র হিসেবে বসতে না পারে সে লক্ষেই ছিলো অনেকের মতামত। প্রয়োজনে দল তেকে পদত্যাগ করবে বলে শামীম ওসমানপন্থী আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাদের অনেকেই ছিলেন একট্টা।








Discussion about this post