নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক আলোচনায় একটিই বিষয় তা হলো : শামীম ওসমান থাকছেন না আজকের বিজয় সমাবেশে । নগরীর রাসেল পার্কে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত বিশাল সমাবেশে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, আ.ফ.ম. বাহাউদ্দিন নাসিম, আজমল হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, এফ এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম এমপি, অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস এমপি, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল হাই, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীিলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহিদ মোঃ বাদল, নজরুল ইসলাম বাবু এমপি । এই বিজয় সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভী বক্তব্য রাখবেন । সমাবেশে সভাপত্বি করবেন মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন । অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা ।
কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতি হবেন এমন ব্যানারে নাম নেই নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সমালোচিত সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। অনুষ্ঠানে শামীম ওসমান না থাকলেও তার অনুসারীদের অনেকেই কেন্দ্রীয় নেতাদের ছবি সম্বলিত ফ্যাস্টুন নগরীতে শুক্রবার সকাল থেকেই শোভা পাচ্ছে । শামীম ওসমানের ছবি সম্বলিত ফ্যাস্টুন নগরীর মোড়ে মোড়ে দেখা গেছে
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে বর্জন করছেন একেএম শামীম ওসমান।
শুক্রবার (২৪ ডিম্বেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জের শেখ রাসেল পার্কে আওয়ামী লীগের বিজয় সমাবেশে থাকছেন না শামীম ওসমান ।
বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এই সমাবেশ আহবান করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বিজয় সমাবেশটি শেষতক ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর নির্বাচনী জনসভায় রূপ নেবে। এই সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের এমপি একেএম শামীম ওসমানকে অনুরোধ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। এ নিয়ে তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমের কয়েক দফায় কথাও হয়েছে। মির্জা আজম নাসিক নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থীর নির্বাচনী কর্মকাণ্ড দেখভালের জন্য কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব।
শামীম ওসমানের ইতিবাচক অবস্থান না পেয়ে শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের বিজয় সমাবেশের ব্যানারে তার নাম থাকছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বলেছেন, ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিরুদ্ধে একেএম শামীম ওসমানের বিস্তর অভিযোগ। তার ভাষায়, সামাজিক ও পারিবারিকভাবে তাকে নানাভাবে হয়রানি করেছেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। এ কারণেই তিনি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে বর্জন করছেন। বিজয় সমাবেশে যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তবে তিনি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরোধিতা করবেন না। আবার আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী কর্মকাণ্ডেও সম্পৃক্ত হবেন না।
অবশ্য নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী, শামীম ওসমান জাতীয় সংসদ সদস্য হওয়ায় ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালাতে পারবেন না।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক একেএম শামীম ওসমান এবং জেলার সিনিয়র সহসভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর মধ্যকার দূরত্ব দীর্ঘদিনের। এ দুই নেতার শীতল সম্পর্কের কারণে আওয়ামী লীগের স্থানীয় রাজনীতিতেও বিরূপ প্রভাব পড়েছে। বিরোধ মিটিয়ে ফেলার জন্য গত সোমবার একেএম শামীম ওসমান ও ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে ঢাকায় জরুরি তলব করা হলেও একেএম শামীম ওসমান আসেননি। কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবানে নারায়ণগঞ্জ মহানগর ও জেলার কার্যনির্বাহী কমিটির ওই সভায় উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানিয়ে তার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছিলেন সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস- এই চার নেতাকে কথা দিয়েও তিনি শেষতক সভায় আসেননি।
২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শামীম ওসমান ও ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর মধ্যকার মত বিরোধের বিষয়টি প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে আসে। শামীম ওসমান ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেলেও জয় পান নাগরিক পরিষদের প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী।
ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন দ্বিতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলে আলোচিত দুই নেতার বাগ্যুদ্ধ দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার শিরোনাম পায়। স্থানীয় নেতাকর্মীরা তিক্ততায় জড়িয়ে পড়েন। ওই নির্বাচনে একেএম শামীম ওসমান দলীয় মনোনয়ন চাননি। তিনি নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের দলীয় প্রার্থিতার পক্ষে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই অবস্থায় একেএম শামীম ওসমান ও ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে ডেকে নিয়ে গৃহদাহ মিটিয়ে দেন।









Discussion about this post