স্টাফ রিপোর্টার :
নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর হত্যা এবং ব্যবসায়ী স্বপন কুমার হত্যা মামলার বিচার কাজ শুরু করেছে জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ আনিসুর রহমান । মামলার ৩০ জন স্বাক্ষীর মধ্যে তিন জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারী পুনরায় অন্যান্য স্বাক্ষীদের স্বাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য্য করে আদালত।
বোরবার ১৭ ফেব্রুয়ারী দুপুর ১২ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্য়ন্ত নির্মম হত্যাকন্ডের শিকার প্রবীর হত্যা মামলার বাদী নিহতের ভাই বিপ্লব, বোন শিল্পী রাণী ও স্ত্রী রূপা রানীর স্বাক্ষ্য গ্রহণ করে আদালত । এর আগে দুপুর ১১ টায় স্বপন কুমার হত্যা মামলার চার্জ গঠন করে আদালত। চার্জ গঠনের সময় আমামী রত্না চক্রবর্তী ও পিন্টু দেবনাথ নিজেদের নির্দোষ দাবী করে।
এরপর শুরু হয় চাঞ্চল্যকর স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর হত্যা মামলার স্বাক্ষ্য গ্রহণ। স্বাক্ষ্য গ্রহণকালে আসামী পিন্টু দেবনাথ, বাপন ভৌমিক ওরফে বাবু, রত্না চক্রবর্তী ও বড় ভাইখ্যাত মোল্লা মামুন আসামীর কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলো ।
সাক্ষ্য গ্রহণকালে আদালতকে স্বর্ণ ব্যবসায়ী নিহত প্রবীর ঘোষের পরিবারের সদস্যরা সুষ্ঠ বিচার দাবী করেন ।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রাজজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলী এডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন জানান, প্রবীর হত্যা মামলার আসামীদের উপস্থিতিতেই স্বাক্ষ্য দিয়েছেন নিহতের ভাই, স্ত্রী ও বোন । তারা সঠিকভাবেই আদালতকে ঘটনা বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন । এ সময় এডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকনের সাথে আরো মামলার বিষয়ে সহযোগিতা করেন এডভোকেট মৃণাল কান্তি বাপ্পি ও এডভোকেট অঞ্জন দাসসহ আরো কয়েকজন। অপরদিকে আসামী পক্ষের আইনজীবী হিসেবে স্বাক্ষীদের জেরা করেন এডভোকেট এম এ রশিদ, এড. মশিউর.এড. রুমেল প্রমূখ।
উল্লেখ্য, গত বছর ১৮ জুন প্রবীর ঘোষের নিখোঁজের পর তার বাবা ভোলানাথ ঘোষ সদর মডেল থানায় জিডি করেন। জিডির সূত্র ধরে প্রথমে মোবাইল ফোনের ট্রেকিংয়ের পর বাপন ভৌমিক ওরফে বাবু এবং পরে পিন্টু দেবনাথকে আটক করে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে ঘাতক পিন্টুর দেখানো মতে প্রবীর ঘোষের টুকরো টুকরো লাশ পিন্টুর বাসার নীচ তলার সেফটি ট্যাংকী থেকে উদ্ধার করে পুলিশ । প্রথমে ৫ প্রবীর ঘোষের ৫ টুকরা লাশের অংশ উদ্ধারের পর লাশের পায়ের সদ্ধানে নামে পুলিশ । ফের রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর লাশের দুটি পায়ের অংশ বিশেষ ঘাতক পিন্টর দেখানো মতেই উদ্ধার করে।
এই ঘটনা ছড়িয়ে পরলে ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর কালীর বাজারের আরেক ব্যবসায়ী স্বপন কুমার নিখোঁজ থাকার ঘটনায় পরিবারের লোকজন পুলিশের সহায়তা কামনা করলে পুলিশ শুরু করে ব্যাপক তদন্ত। তদন্তের এক পর্যায়ে স্বপন কুমারের মুঠোফোন সদর উপজেলার মাসদাইরের একটি বাসায় চালু রয়েছে বলে জানতে পারে পুলিশ । এই মোবাইল ফোন পাওয়া যায় ঘাতক পিন্টু দেবনাথের রক্ষিতা রত্না চক্রবর্তীর কাছে । এতেই বেড়িয়ে আসে স্বপন কুমারকে একই কায়দায় হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া তথ্য । প্রবীর হত্রার আগেই স্বপন কুমারকে হত্যা করে লাশ টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দিলেও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত কয়েকটি আলামত উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ।
এমন চাঞ্চল্যকর দুটি হত্যাকান্ডর পর লাশ গুম করার নেপথ্যে পুলিশ আদালতে দেয়া চার্জসীটে জানায়, পরকীয়ার ঘটনা, লেনদেন, ও বড় ভাই মোল্লা মামুনকে দিয়ে পিন্টুকে ঘায়েল করার ক্ষোভ থেকেই প্রবীর ঘোষকে সবশেষ হত্যা করে পিন্টু ও তার সহযোগিরা । এরপর আরো কয়েকজনকে হত্যার পরিকল্পনা করলেও সিরিয়াল কিলার মহাধূর্ত পিন্টু এর আগেই পুলিশের হাতে ধরা পরে ।
আদালত থেকে হাজতে নেয়ার সময় পরকীয়া মূল হোতা রত্না চক্রবর্তী প্রতিবেদককে জানায়, আমি ঘটানার শিকার । আমি মূলত পিন্টুকে ১০ লাখ টাকা দিয়ে আটকে গিয়েছিলাম । তবে আমি শুনেছি পিন্টুর ওস্তাদের স্ত্রী শীলা রানী সাথে পরকীয়া থাকায় ওস্তাদ অপু দাসকেও খুন করেছিলো পিন্টু ও তার সহযোগিরা । পিন্টু ধরা পরার পর অজ্ঞাতস্থানে গাঢাকা দেয় শীলা রানী ।









Discussion about this post