নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনি প্রচারণাকালে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী গতকাল শনিবার বন্দরের দেওলী চৌড়াপাড়া এলাকায় সাংবাদিকদের বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার বিএনপির কিংবা জনগণের প্রার্থী নন । তিনি গডফাদার শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের প্রার্থী। মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর এই বক্তব্যে নগরজুড়ে ব্যাপকভাবে চলছে আলোচনা সমালোচনা। আইভীর এ বক্তব্য গতকাল শনিবার ছিল টক অব দ্য টাউন।
রোবরার (৯ জানুয়ারী) সকালে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রাতঃভ্রমণকালে প্রায় সকলের মুখে উচ্চারিত হয়েছে সদ্য সাবেক মেয়র ও মেয়র প্রার্থী চিকিৎসক সেলিনা হায়াৎ আইভীর সেই কড়া মন্তব্য “গডফাদার !’ একই সাথে সকাল সাতটা থেকে নগরীর শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বোস কেবিনের চায়ের আড্ডায়ও সকলের মুখে একই কথা : “ওই চেয়ারম্যানগুলি যারা ওসমান পরিবারের অভিডিয়েন্ট হিসেবে পরিচিত তাার ভোটের মাঠে না নামলে এতো দিন ছিলো ধোয়াশা। ওসমান পরিবারের আশকারায় নৌকা ডুবিয়ে নানা বিতর্ক জন্ম দিয়ে এবার নাসিক নির্বাচনে মাঠে নামায় খোলাসা হয়ে গেলো আসলে তৈমূর আলম খন্দকারকে কারা শেল্টার দিচ্ছে।”
ভোটের মঠে বিএনপির এই নেতাকে খোদ বিএনপি দল থেকে বিতারিত করে দিলেও তাকে এখন শেল্টার দিচ্ছে কে / কারা ? এমন সাধারণ প্রশ্ন নগরীর সকলের মুখে । দুই আর দুই এ চার হয় তা সকলেই জানেন । সেটাই প্রমাণ করেছেন ওসমান পরিবারের প্রার্থী হাতি প্রতীকের তৈমূর ও তার সাথে থাকা বিতর্কিত চেয়ারম্যানরা । ওসমান পরিবারের কথা ছাড়া রাজকারপুত্রসহ বন্দর উপজেলার কয়েকজন চেয়ারম্যানদের সকলে যেখানে প্রশ্রাবও (প্রকৃতির ডাক) করেন না, সেখানে তৈমূর আলমের পক্ষে ওই চেয়ারম্যানেরা মাঠে নামলো কার ইশারায় ? এটি কি গাধাও বিশ্বাস করবে যে তারা স্ব স্ব ইচ্ছায় মাঠে নেমেছেন ! এমন সকল তথ্য পেয়েই আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা একের পর এক সিগনাল দিয়ে যাচ্ছেন ওসমান পরিবারের প্রতি । যা তাদের এখনো বুঝতে বাকী আছে । শেখ হাসিনার কথা ছাড়া কেন্দ্রীয় নেতারা এক পা ফেলার সাহস করতে পারে ? সেখানে কত ভাবেই তো ওসমান পরিবারের সদস্যদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন ।
আর চক্রান্তকারীসহ হাতি প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার নানাভাবে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে তোষামোদ করে নানা মন্তব্য করে বেড়াচ্ছেন । এমন তোষামোদ খুব ভালো ভাবেই বুঝেন আওয়ামী লীগ ও তার দলের সকল নেতারা
আইভীর এ বক্তব্য সম্পর্কে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের প্রতিক্রিয়া কী—এ সম্পর্কে জানতে চাইলে অনেকেই নাম প্রকাশ করে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে যারা মন্তব্য করেছেন তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় ছিল। কিন্তু আইভীর এ বক্তব্যের পর পরিস্থিতি ব্যাপক সাড়া পেলেছে ।
একটি কলেজের শিক্ষক জানান, শামীম ওসমান একজন সংসদ সদস্য। এ কারণে প্রকাশ্যে তিনি নির্বাচনে নামতে পারছেন না—এমন মন্তব্য একাধিকবার মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী নিজেই বলেছেন। হঠাৎ করে কেন নিজ দলের সংসদ সদস্যকে আবার গডফাদার বললেন ওই চেয়ারম্যানদের কারণে।
নির্বাচনি প্রচারণাকালে সেলিনা হায়াৎ আইভী।
আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াত্ আইভীর মন্তব্য সম্পর্কে এ কে এম শামীম ওসমান এমপির মন্তব্য চাওয়া হলে তিনি কোনো মন্তব্য না করে গণমাধ্যমকে বলেন, আগামী সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত বলব।
শামীম ওসমানের একাধিক অনুসারী আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, যুবমহিলা লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের পদধারী নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক। দলের মধ্যে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকতেই পারে। কিন্তু দলীয় সভানেত্রী যাকে মনোনয়ন দিয়েছেন আমরা তার পক্ষেই নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে চলেছি।
তৈমূর আলম খন্দকার নিজেই বারবার দাবি করছেন আমি কারো পায়ে ভর করে নির্বাচনে দাঁড়াইনি। জনতার চাপে আমি প্রার্থী হয়েছি। তবে সেলিনা হায়াৎ আইভীর একাধিক অনুসারী বলেন, মেয়র প্রার্থী আইভী আজ সাধারণ মানুষের মনের কথা স্পষ্ট করেছেন। এতে তার ভোট বাড়বে । এমন আলোচনা সমালোচনা চলছে সমানতালে । নগরবাসীর মুখে মুখে নানা মন্তব্যের পাশাপাশি ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমেও (সামাজির যোগাযোগ) বিভিন্ন পন্থায় চলছে ব্যাপক তর্ক বিতর্ক ।










Discussion about this post