নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের (নাসিক) ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের সভাপতি মতিউর রহমান মতির সহযোগী নাহিত ও বাবু ওরফে কসাই বাবুর টর্চার সেলে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেছে থানা পুলিশ। এসময় বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য ও দেশীয় অস্ত্রসহ টর্চারে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।
বুধবার (১২ জানুয়ারি) রাতে সিদ্ধিরগঞ্জের সুমিলপাড়া এলাকায় বিহারী ক্যাম্প বালুর মাঠে টিনের সেড দিয়ে তৈরি নাহিদ ও কসাই বাবুর টর্চার সেলে এই অভিযান চালানো হয়। এসময় পুলিশ দুই জনকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, সিদ্ধিরগঞ্জের সুমিলপাড়া এলাকার শওকত (৩০) এবং সেন্টু (৩২)।
অভিযানে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কাউন্সিলরের দুই সহযোগী নাহিত ও বাবু ওরফে কসাই বাবু পালিয়ে যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার এক বাসিন্দা জানান, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে এই টর্চার সেল চালিয়ে আসছে। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নিরিহ মানুষের উপর চালাতো নির্যাতন। নাহিদ ও কসাই বুবুর রয়েছে বিশাল এক সন্ত্রাসী বাহিনী। এই সুমিলপাড়া এলাকায় মাদক, কিশোর গ্যাং, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ করেন তারা। আর এদের সেল্টার দেন স্থানীয় কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মুদি দোকানি জানান, তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। তাঁরা কথায় কথায় দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘাতে জড়িয়ে পরে। তাদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে এই সুমিলপাড়াবাসী। কথা না শুনলে টর্চার সেলে নিয়ে চলে নির্যাতন। আমরা এই অত্যাচার ও জিম্মিদশা থেকে মুক্তি চাই। সামনে সিটি নির্বাচন তাই তাদেরকে নিয়ে আমরা আতংকে আছি। আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এদিকে এক ভ্যানচালক জানান, আমরা ভোট দিয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত করি ছেলে মেয়ে নিয়ে একটু শান্তিতে থাকার জন্য। এখন দেখি সব তার উল্টো। ভোটের আগে তারা হাতে পায়ে ধরে ভোট চান কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর তাদেরই সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচার সহ্য করতে হয় আমাদের। অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বাসায় এসে শুনতে পেলাম এখানে নাকি পুলিশ অভিযান চালাইছে। তবে তারা দীর্ঘদিন ধরেই এসব করছে। তাদের ভয়ে প্রশাসনের কাছে কেউ কোন অভিযোগ করতে সাহস পায়নি।
সূত্রে জানাযায়, এদিকে কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতির দিনের পর দিন বাড়ছে বেপরোয়া গতি। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার টেন্ডারবাজি, শীতলক্ষ্যা নদীতে বালুমহাল নিয়ন্ত্রণ, মেঘনা ও যমুনা তেলের ডিপো নিয়ন্ত্রণ, আদমজী জুট মিলের ইপিজেড নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে পুরো এলাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছেন মতি। বিভিন্ন সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করতে গড়ে তুলেছেন ২৫ থেকে ৩০ জনের ক্যাডার বাহিনী। যারা মতির যে কোন নির্দেশ পাওয়া মাত্র পালন করে থাকে। এই মতির ভয়ে ভূক্তভোগীরা দুরের কথা খোদ থানা আওয়ামীলীগের কোনো নেতাই প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চান না।
এ বিষয়ে জানতে কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতির মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মশিউর রহমান পিপিএম বার জানান, দীর্ঘদিন ধরে এটি টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম জানান, নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন ঘিরে অবৈধ আর্মস উদ্ধারের নিয়মিত অভিযান চলছে। ভবিষ্যতেও এ অভিযান চলমান থাকবে বলে জানান তিনি।
তবে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ওই টর্চার সেলের মূলহোতা নাহিত ও বাবু ওরফে কসাই বাবুকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।








Discussion about this post