নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সোমবার ১৭ জানুয়ারী বিকেলে প্রেস ব্রিফিং করে জেলা পুলিশের খ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ বিল্লাল হোসেন বলেন, ৪২ হাজার পিছ ইয়াবা সহ আলমগীর নামে এক মাদককারবারীকে গ্রেফতার করেছে তার নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল। একই সাথে এই বিশাল পরিমাণ মাদক পাচারের কাজে ব্যবহৃত নীল রঙের প্রাইভেটকার (ঝালকাঠি ঘ-১১০০০৪) আটক করা হয় ।
বিশাল এই মাদক বিরোধী অভিযানকে নারায়ণগঞ্জ ছাড়াও পুলিশ বিভাগসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে। কয়েক কোটি টাকার মাদক উদ্ধারের ঘটনায় সাধুবাধের ঝড় উঠেছে সর্বত্র । এমন ব্রিফিংয়র মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে কষ্টদায়ক খবরে ভেঙ্গে পরেছে পুলিশের অনেক কর্মকর্তাসহ প্রত্যাক্ষদর্শী অনেক সাধারণ মানুষ ।
৪২ হাজার পিছ ইয়াবাসহ আটক মাদক কারবারী কক্সবাজারের আলমগীর হোসেনকে সাথে ওই আটক করা গাড়ীতে করে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে সাংবাদিক সম্মেলন শেষে সোনারগাঁ থানায় যাবার পথে দত্তপাাড়া নামক স্থানে একটি পুকুরে পরে সলিল সমাধি ঘটে পুলিশের কর্মকর্তা (দারোগা) কাজী সালেহ আহম্মেদ ও দারোগা এসএম শরীফুল ইসলামের । এমন ঘটনায় নিহত দুই দারোগার লাশ সোমবার মধ্যরাত ১ টায় নারায়ণঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায় সোনারগাঁ থানার সহকর্মী পুলিশ কর্মকর্তারা । দুই জন দারোগার মৃত্যুর পাশাপাশি পুলিশের আরো একজন এএসআই রফিক গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকায় প্রেরণ করেন ।
সহকর্মীদের হারিয়ে এমন মর্মান্তিক ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, মাদক ব্যবসয়ী আলমগীর পালিয়ে গেছে । তাকে পাওয়া যায় নাই । গাড়ীটি কি সেই আলমগীর চালচ্ছিলো ? এটি কি দূর্ঘটনা নাকি হত্যাকান্ড ? যে গাড়িতে এতোগুলি মাদক উদ্ধার করা হলো সেই গাড়িতে কেন আসামীকে সাথে নিয়ে তিনজন কর্মকর্তাকে একই গাড়ীতে যেতে হবে ? গুরুতর আহত এএসআই রফিক সুস্থ হয়ে উঠলে বেড়িয়ে আসতে পারে আরো কোন চাঞ্চল্যকর তথ্য । সেই পর্যন্ত এমন মর্মান্তিক ঘটনা কোন দিকে গড়ায় তা দেখার বিষয় । অনেক কথা বলার আছে কিন্তু বলা যাচ্ছে না চাকুরী করি বলেই । এমন ক্ষোভ প্রকাশ করে আবারে নাম প্রকাশ না কার অনুরোধ জানান কর্মকর্তারা ।
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ :
নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ পৌরসভার দত্তপাড়া এলাকায় প্রাইভেটকার খাদে পড়ে সোনারগাঁ থানার দুই উপ-পরিদর্শক(এসআই) নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো একজন।
সোমবার (১৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়াও আরো এক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আহত হয়েছেন।
আহত এএসআই রফিকুল ইসলামকে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নিহতরা হলেন- ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার মুনসুরাবাদ গ্রামের কাজী নুরুল ইসলামের ছেলে কাজী সালেহ আহম্মেদ ও গোপালগঞ্জের চরভাটপাড়া গ্রামের ইউনুস আলীর ছেলে এসএম শরীফুল ইসলাম। তারা সোনারগাঁ থানায় কর্তব্যরত।
সোনারগাঁ থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) এস এম শফিকুল ইসলাম জানান, নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিং শেষে সোনারগাঁ থানায় কর্মরত উপ-পরিদর্শক (এসআই) কাজী সালেহ আহম্মেদ, শরিফুল ইসলাম ও সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রফিকুল ইসলাম মাইক্রোবাস যোগে থানায় ফিরছিলেন। পথে সোনারগাঁয়ের দত্তপাড়া এলাকায় তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পার্শ্ববর্তী পুকুরের খাদে পড়ে যায়।
এসময় স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে এস আই কাজী সালেহ আহম্মেদ ও শরিফুল ইসলামকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
সোনারগাঁ থানার ওসি মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান আহত এএসআইকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে গেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ইজি বাইক চালক মোক্তার হোসেন জানায়, সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে দত্তপাড়া বাদশা গ্যারেজের একটু সামনে একটি প্রাইভেটকার দ্রুত গতিতে এসে পুকুরে পড়ে যায়। গাড়িটি মহাসড়ক থেকে সোনারগাঁ থানার দিকে যাচ্ছিল। পড়ার পরেই গাড়িটি তলিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা পুকুর থেকে পুলিশের তিন সদস্যকে উদ্ধার করে ইজি বাইক দিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী মুনসুর আলী বলেন, গাড়িটি পুকুরে পরার পর রশি বেঁধে গাড়িটি উল্টে ইট দিয়ে গ্লাস ভেঙে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।









Discussion about this post