এ যেন সেই সাহেদ রূপে আবির্ভুত হয়েছে কুখ্যাত অপরাধী সালাউদ্দিন বিটু । কখনো এমপির সাথে ছবি তুলে, কখনো প্যানল মেয়র, কখনো নারী কাউন্সিলর, কখনো সদ্য সাবেক কাউন্সিলর, বর্তমান কাউন্সিলর, আবার কখনো এমপির বিয়াইকে দিয়ে আবদুল মালেক নারায়ণগঞ্জ থানার (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) ওসি থাকাকালে পুলিশ কে ম্যানেজ করে পুলিশ পিটিয়ে বিদেশ পলাতক থেকে ফের দেশে ফিরে বীরদর্পে মাদক ব্যবসা শুরু করে।
ওই সময় থেকে প্রতি মাসে দুই লাখ টাকা মাসোয়ারা দিয়ে নির্বিঘ্নে বিশাল এই মাদক ব্যবসা প্রকাশ্যেই চালিয়ে যাচ্ছে বিটু তার বাহিনী ।
বিশাল এই নেটওয়ার্ক নিয়ে সদ্য নির্বাচিক নাসিক নির্বাচনে একেক সময় একেক কাউন্সিলর প্রার্থীর পাশে থেকে নানাভাবে ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শণ করে আসছিলো । এমন ঘটনায় নির্বাচনের দুইদিন আগে আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হলে এই কুখ্যাত অপরাধীকে ছাড়াতে থানায় ছুটে যায় কেউ কেউ । এরই ধারাবাহিকতায় এবার জামিন নিয়ে আবার এলাকবাসীর মাঝে আতংক ছড়িয়ে বীরদর্পে ফুলের মালা গলায় দিয়ে নব নির্বাচিক কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্না কুখ্যাত মাদক কারবারী সালাউদ্দিন বিটুকে নিয়ে শো ডাউন করায় পুরো নারায়ণগঞ্জে শুরু হয়েছে নিন্দার ঝড়
নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন বিটু। নারায়ণগঞ্জের মাদকের জগতের দোর্দন্ড গডফাদার। শতাধিক পাইকারী সেলসম্যান দিয়ে নিরাপদে গন্তব্যে মাদকের চালান পৌছে দেয়াসহ প্রশাসনিক গারান্টি দিয়ে বেচাকেনা করেন ইয়াবা ফেনসিডিলসহ সকল ধরণের মাদক ।
গত ১৬ জানুয়ারী সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ভোটের কয়েকদিন আগে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। গন্তব্য হয় কারাগার। প্রায় ১০ দিন পর ২৪ জানুয়ারী সে জামিনে মুক্তি পায়। আর সেখানেই তাকে রীতিমত রাজকীয়ভাবেই বরণ করা হয়।
১৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্না তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। শুধু স্বাগত না বরং জেল গেট থেকে তার বাড়ি পর্যন্ত ফুলে ফুলে সিক্ত হন তিনি। নলুয়াপাড়া এলাকাতে পৌছানোর পর সেখানে রীতিমত উৎসবের সৃষ্টি হয়। ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয়রা বলছেন, শুধু মুন্না না বরং স্থানীয় প্রভাবশালীরা এবার বিটুকে সরাসরি মদদ দিচ্ছে। মাদকের একজন গডফাদারকে এভাবে বরণ করে নেওয়াতে এলাকাতে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ ।
গত ৩ ডিসেম্বর সদর মডেল থানার ওপেন হাউজ ডে অনুষ্ঠানে ১৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. কবির হোসেনও পুলিশ সুপারের কাছ থেকে সালাউদ্দিন বিটুর থেকে ১৮নং ওয়ার্ডবাসী মাদক থেকে নিস্তার চাচ্ছে উল্লেখ করে বলেন, আমাদের এলাকা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। আমার ১৮ নং ওয়ার্ডের সীমানা যেখানে শেষ সেখানে গোগনগর ইউনিয়নের শুরু আবার আমার যেখান থেকে শুরু সেখানে গোগনগর ইউনিয়নের সীমানা শেষ। আর এই এলাকাই হচ্ছে মাদকের সয়লাব। আর এই দুই এলাকায় তার মাদকের সয়লাব সে হচ্ছে সালাউদ্দিন বিটু। অনেক সময় গ্রেফতার হয়েছে। এখন আছে বিভিন্ন প্রার্থীর সাথে আঁতাত করছে।
এর আগে গত বছরের ৪ মার্চ রাত ১০টায় তামাকপট্টি এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের একটি টিম বিটুকে আটক করে। সে ওই এলাকার আবিদ আলী চৌধুরী ওরফে হাবলু চৌধুরীর ছেলে। পরে পুলিশ বিটুকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখায়। অভিযানের সময়ে বিটুর সঙ্গে কিছু পাওয়া যায়নি জানানো হয়। ৫ মার্চ দুপুরে নারায়ণগঞ্জ আদালতে শুনানীতে বিটুর জামিন মঞ্জুর হয়।
স্থানীয়রা জানান, বিটুকে গ্রেপ্তারের পরেই থানায় ছুটে যান শহরের প্রভাবশালীদের কয়েকজন। শুরু হয় দেনদরবার। রাত ১টা পর্যন্ত তদবির আর দেন দেরবারের পরের সিদ্ধান্ত হয় বিটুকে দেওয়া হবে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার। কথামত সেটাও হয়। আর সে কারণেই পরদিন তিনি জামিন পেয়ে যান।
যেদিন বিটু যেদিন জামিন পান সেদিনই নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের ওপেন হাউজ ডে (উন্মুক্ত দিবস) অনুষ্ঠিত হয়েছে। উকিলপাড়া রেল লাইন এলাকায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের অন্যতম একজন হলো সালাউদ্দিন বিটু। তার রয়েছে বিশাল মাদকের নেটওয়ার্ক। পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা হিসেবেই তাকে চেনে এবং জানে শহর ও শহরতলির মাদক বিক্রেতারা। আরেক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী হাজী ইব্রাহিমের অন্যতম শিষ্য এই সালাউদ্দিন বিটু। বেশ কয়েকবার বড় বড় মাদকের চালান নিয়ে আটক হলেও ক্ষমতাসীনদের আশীর্বাদে ফের জামিন নিয়ে বের হয়ে আসে এই ভয়ঙ্কর মাদক ব্যবসায়ী।
গত বছরে বিটু ও তার দলবল সদর থানা পুলিশের উপর হামলা করে কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে আটক করে রাখার মতো দু:সাহসিক কর্মকান্ড করার সাহস দেখিয়েছিল। একই সাথে এই সারাউদ্দিন বিটুর বিশআল বাহিনী পুলিশের অভিযানকারী দলকে মারধর করে আটক করে রাখে । নগরীর তামাকপট্টি এলাকায় এমন ঘটনা ঘটালে অতিরিক্ত পুলিশ অভিযান চালিয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার এস আই সাহাদাতসহ অন্যান্যদের উদ্ধার করে।
ওই ঘটনার পর শাসক দলের একজন সংসদ সদস্যের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে পুলিশের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ভারতে পারিয়ে যেতে সহায়তা করে ওই আত্মীয় ।
এর আগে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনের আগে একজন এমপি প্রার্থীর মঞ্চে দেখা যায় বিটুকে। আর তখনই সে বেপরোয়া হয়ে উঠে।
২০১৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে ৫০০ পিস ইয়াবাসহ শহরের নিতাইগঞ্জ তামাকপট্টি এলাকার শুক্কুর মিয়ার রিকশার গ্যারেজ থেকে ডিবির হাতে গ্রেপ্তার হয় বিটু। একই বছরের ১৯ আগস্ট বিটুকে সাড়ে ৩০০ পিস ইয়াবাসহ তামাকপট্টি থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। বিটু এর আগেও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কদমতলী থানায় সাড়ে ৫০০ পিস ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার হয়।
সালাউদ্দিন বিটুর সেকেন্ড ইন কমান্ড বুইট্টা সুজন, শাহীন ও আরিফকে ৬০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ আটক করে সদর মডেল থানা পুলিশ। এরপর গা-ঢাকা দেয় মাদক বিক্রেতা সালাউদ্দিন বিটু। পরবর্তীতে তিনি আবারো এলাকাতে ফিরে আস।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে নগরীর নলুয়াপাড়ার একজন প্রবীন ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী বিটু নারায়ণগঞ্জের এমপি ও এমপির পবিরবারের সদস্যদের নাম ব্যবহার করে যাচ্ছে প্রতিনিয়তঃই । এমপিদের আত্মীয় এই বিটুকে শেল্টার দিচ্ছে । পুলিশকে ম্যানেজ করছে এই আত্মীয় । আর স্থানীয় কাউন্সিলরদের প্রায় সকলেই এই বিটুকে লালন পালন করেছে নিজ নিজ স্বার্থ রক্ষায় । এই বিটু ও তার বাহিনী পুলিশ পিটিয়ে আটকে রাখে । আর এলাকার মানুষ তো নস্বি । আর আপনারা যারা এই বিটুর কুকর্ম প্রকাশ করেন সেই সাংবাদিকদের কিভাবে বিটু ও তার বাহিনীর সহযোগিরা গালিগালাজ করে তা কে না জানেন। আর কিছু নামধারী সাংবাদিক আছে যারা বিটুর কাছ থেকে পুলিশের মতো নিয়মিত মাসোয়ার নেয় তাদের ধিক্কার জানালেও এলাকার নিরিহ মানুষ কোন কথাই বলতে সাহস করে না ।









Discussion about this post