নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের পৌরসভার দত্তপাড়া এলাকায় মাদকসহ জব্দকৃত প্রাইভেটকার খাদে ফেলে পুলিশের দুই উপ-পরিদর্শক (এসআই) নিহত হওয়ার ঘটনায় পলাতক সেই আসামি আলমগীর হোসেনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জিজ্ঞাবাদের জন্য রিমান্ডে এনেছে পুলিশ।
নারায়ণগঞ্জ আদালতের অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়ার ম্যাজিস্ট্রেট বদি উজ জামান ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের শুননী শেষে ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন বলে নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট কে নিশ্চিত করেছেন কোর্ট পুলিশের ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ।
বুধবার (২৬ জানুয়ারি) আসামি আলমগীর হোসেনকে চট্টগ্রামের লোহাগড়া থেকে গ্রেফতারের পর আদালতে গ্রেরণ করে পুলিশ। আদালতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ ।
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) জায়েদুল আলম জানান, আসামিকে চট্টগ্রামের লোহাগড়া এলাকা থেকে ওই আসামীকে গ্রেফতার করে আনা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) সেই আসামি পালানোর ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছিল নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানকে। আরো দুই সদস্য হলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা শাখার খ-জোনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম শাহরিয়ার হাসান, নারায়ণগঞ্জ ডিএসবি শাখার ডিআইও-২ মো. হুমায়ুন কবির খান।
কমিটিকে ৭ কার্যদিবসে অনুসন্ধান করে সুস্পষ্ট মতামতসহ একটি বস্তুনিষ্ট প্রতিবেদন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলমের নিকট দাখিলের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়।
জানা গেছে, কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে প্রাইভেটকার যোগে আসা ৪২ হাজার পিছ ইয়াবার একটি বড় চালানসহ আলমগীর নামে এক পাচারকারীকে সোমবার ১৭ জানুয়ারী সকালে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার মেঘনা ব্রীজ এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জব্দকৃত ৪২ হাজার পিছ ইয়াবার মূল্য আনুমানিক ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এসময় একটি নিল রঙের প্রাইভেটকার (ঝালকাঠি গ ১১-০০০৪) জব্দ করা হয়। বিকেলে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয় প্রাঙ্গনে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) শেখ বিল্লাল হোসেন।
তবে রাতে সেই প্রাইভেটকারটি নিয়ে সোনারগাঁ যাওয়ার পথে প্রাইভেটকারটি সোনারগাঁ পৌরসভার দত্তপাড়া এলাকায় খাদে পড়ে সোনারগাঁ থানার দুই উপ-পরিদর্শক (এসআই) নিহত হয়েছে। রাত পৌনে ৭টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। প্রাইভেটকারটি চালাচ্ছিলেন ইয়াবাসহ গ্রেফতারকৃত গাড়িচালক আলমগীর হোসেন। মূলত পালানোর উদ্দেশ্যেই প্রাইভেটকারটিকে খাদে ফেলে দিয়েছিল আলমগীর। এ সুযোগে সে পালিয়ে গেলেও ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান দুই পুলিশ কর্মকর্তা। নিহতরা হলেন, ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার মুনসুরাবাদ গ্রামের কাজী নুরুল ইসলামের ছেলে কাজী সালেহ আহম্মেদ ও গোপালগঞ্জের চরভাটপাড়া গ্রামের ইউনুস আলীর ছেলে এসএম শরীফুল ইসলাম। তারা সোনসারগাঁ থানায় কর্মরত। স্থানীয়রা উদ্ধার করে সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
এ দুর্ঘটনায় আরও এক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আহত হয়েছেন। আহত এএসআইকে মূমুর্ষূ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এস এম শফিকুল ইসলাম জানান, নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে একটি প্রেস ব্রিফিং শেষে সোনারগাঁ থানায় কর্মরত উপ-পরিদর্শক (এসআই) কাজী সালেহ আহম্মেদ, শরিফুল ইসলাম ও সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রফিকুল ইসলাম মাইক্রোবাসে থানায় ফিরছিলেন। পথে সোনারগাঁয়ের দত্তপাড়া এলাকায় তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের পুকুরের খাদে পড়ে যায়। এ সময় স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কাজী সালেহ আহম্মেদ ও শরিফুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে প্রাইভেটকারটি উদ্ধার করে।
প্রত্যক্ষদর্শী টমটম চালক মোক্তার হোসেন জানায়, সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে দত্তপাড়া বাদশা গ্যারেজের একটু সামনে একটি প্রাইভেটকার দ্রুতগতিতে এসে পুকুরে পড়ে যায়। গাড়িটি মহাসড়ক থেকে সোনারগাঁ থানার দিকে যাচ্ছিল। গাড়িটি পুকুরে মুহূর্তের মধ্যে পানিতে তলিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা পুকুর থেকে পুলিশের তিন সদস্যকে উদ্ধার করে হাসপাতালে আমার টমটম দিয়ে নিয়ে আসি। হাসপাতালে আনার পর দুজনকে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন ।









Discussion about this post