আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক পদত্ত নৌকা প্রতীকের বিরোধীতা করায় নোয়াখালী-৪ আসনের সাংসদ মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরীকে জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক এই সাধারণ সম্পাদককে দলের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে চূড়ান্ত বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় সভাপতির কাছে সুপারিশ পাঠাবে জেলা আওয়ামী লীগ।
এমন খবরে নারায়ণগঞ্জে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা । একই সময় ১৬ জানুয়ারীতে অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জে সিটি করপোরশেন নির্বাচনে শেখ হাসিনা কর্তৃক প্রদত্ত নৌকা প্রতীকের বিরোধীতা করে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান নানাভাবে কর্মকান্ড চালিয়েছেন বলে সকল তথ্য রয়েছে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে । কেন্দ্রীয় নেতারা নারায়ণগঞ্জে অবস্থানকালে শামীম ওসমানকে উদ্দেশ্য করে নানা বিরূপ মন্তব্যও করেছেন । খোদ নৌকা প্রতীকের বারবার পরিক্ষিত নেত্রী ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভী নির্বাচনী প্রচারণাকালে ৮ জানুয়ারী বন্দরের ২৪ নং ওয়ার্ডের দেউলি চৌরাপাড়া এলাকায় নির্বাচনী প্রচারে নেমে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে অভিযোগ করে বলেছেন, “তৈমূর আলম খন্দকার বন্দরে সেলিম ওসমানের জাতীয় পার্টির (জাপা) ৪ জন চেয়ারম্যানকে নিয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন। এতেই প্রমাণিত হয়েছে তৈমূর আলম গডফাদার শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের ক্যান্ডিডেট।”
এমন অসংখ্য ঘটনার সকল তথ্য রয়েছে বলেও নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে আপাততঃ একজন নেতা তীব্র ভাষায় সমালোচনা করে আরো বলেছেন, নোয়াখালী-৪ আসনের সাংসদ মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরীকে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে । আর আমাদের নারায়ণগঞ্জে কত নাটক মঞ্চস্থ্য হচ্ছে । একটু ধৈর্য্য ধরেন অনেক কিছুই অপেক্ষা করছে। আমরা যে যতই নাটক করি না কেন, আমদের নেত্রী শেখ হাসিনা অত্যান্ত বিচক্ষণ । সময় মতো তিনিই নারায়ণগঞ্জের শৃংখলা ফিরাতে যা করার তা করবেন। নোয়াখালীর এমপি মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরীর বিষয়টি প্রকাশের পর নারায়ণগঞ্জে নেতাকর্মীদের মাঝেও ব্যাপক চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে বলে জানান এই জেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ এই নেতা ।
শনিবার সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী এই সিদ্ধান্তের তথ্য নিশ্চিত করেছে।
খায়রুল আনম চৌধুরী আজ সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় গণমাধ্যমকে বলেন, ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচন ও চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের বিরোধিতা করার কারণে সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরীকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। চূড়ান্ত বহিষ্কারের জন্য দলের সভাপতির কাছে প্রস্তাব পাঠানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
দলের এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে সাংবাদিকরা আজ সন্ধ্যায় সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়েও বন্ধ পাওয়া যায়। পরে তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তাঁর কাছ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ বেলা তিনটায় শহরের আবদুল মালেক উকিল সড়কের দলীয় কার্যালয়ে জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির বৈঠক শুরু হয়। সংগঠনের আহ্বায়ক এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে আহ্বায়ক কমিটির দুই যুগ্ম আহ্বায়ক শিহাব উদ্দিন শাহিন, নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র মো. সহিদ উল্যাহ খানসহ ৮৪ জন সদস্যের মধ্যে ৭৫ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষ হয় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চূড়ান্ত বহিষ্কারের সুপারিশ–সংবলিত প্রস্তাবটি কাল রোববার দলের সভাপতির কাছে পাঠানো হবে। একই সঙ্গে পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের বিরোধিতায় যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের যাঁরা জড়িত ছিলেন বা আছেন, তাঁদের চিহ্নিত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও নোয়াখালী-৬ আসনের সাবেক সাংসদ মোহাম্মদ আলী গণমাধ্যমে বলেন, সভায় ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নোয়াখালী পৌরসভাসহ বিভিন্ন উপজেলার ইউপি নির্বাচনে সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরীর প্রকাশ্যে বিরোধিতা ও নৌকার বিপক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালানোর বিষয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরীকে জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি এবং দলের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে চূড়ান্ত বহিষ্কারের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।
সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল মমিন বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের কথাটি তিনি কেবলই শুনেছেন। তাই এ বিষয়ে তিনি সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে পারছেন না। তবে তিনি বলেন, কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তাঁকে তো দল থেকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করা কিংবা কৈফিয়ত চাওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু দল থেকে কোনো অভিযোগের বিষয়ে কেউ সাংসদ একরামুল করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি কিংবা তাঁকে কোনো চিঠি দেওয়া হয়নি। কারও বক্তব্য না শুনে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়ার যৌক্তিকতা নেই।
প্রসঙ্গত, ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নোয়াখালী পৌরসভার নির্বাচন, তার আগে কবিরহাট উপজেলার সুন্দলপুর ইউপি নির্বাচন এবং আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য সুবর্ণচরের চর জুবলী ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী ও নৌকা প্রতীকের বিরোধিতা করার অভিযোগ রয়েছে সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে।









Discussion about this post