নতুন বছরের শুরুতেই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে সামনে রেখে একর পর এক ঘটনার নানা চিত্র দেখলো নগরবাসী।
তুমুল বিতর্কের সাথে তৈমূর করলেন নির্বাচন। এই নির্বাচনে নগরবাসী নানা রাজনৈতিক অপকৌশল দেখে আলোচনা সমালোচনার ঝড় চলে নতুন বছরের জানুয়ারীজুড়ে । ফেব্রুয়ারীর শুরুতেই গেজেট ঘোষনার পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের নির্বাচিতদের শপথের ঘোষনায় পুলকিত নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের এক পক্ষ ।
অপরপক্ষ নানা নাটকীয়তার পর নিজের অবস্থান সমুন্বত রাখতে একের পর এক বৈঠক ডেকে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখতে জ্বালাময়ী বক্তব্য দিচ্ছেন ।
এরই মধ্যে ৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চাষাড়া শহীদ মিনারে ত্বকী হত্যার ১০৭ মাস উপলক্ষে আলোক প্রজ্জ্বালন অনুষ্ঠানে ত্বকী মঞ্চের পক্ষে অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, “শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জবাসী আপনাদের ঘৃণা করে । ঘুঘুর ফাঁদ দেখেন নাই ।”
এই একই অনুষ্ঠানে নিহত ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি বলেন, “ত্বকী হত্যায় ওসমান পরিবার জড়িত, ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে ঘাতক সুলতান শওকত ভ্রমর বলেছে আজমেরী ওসমানের টর্চার সেলে আজমেরী সহ ১১ মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছে। র্যাব তাদের সংবাদ সম্মেলনেও তা উল্লেখ করেছে, আমরা চাই অভিযোগপত্র দেয়ার আগে আজমেরী ওসমানকে গ্রেপ্তার করে ১৬৪ ধারায় তার জবানবন্দি নিয়ে অভিযোগপত্র পূর্ণঙ্গ করা হোক। কারণ আমরা বরাবরই বলে এসেছি, শামীম ওসমানের নির্দেশে আর ছেলে অয়ন ওসমান, ভাতিজা আজমেরী ওসমান তাদের লোক জন নিয়ে ত্বকীকে হত্যা করেছে। অসম্পূর্ণ অভিযোগপত্র কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না।
এমন সভা সমাবেশের পর সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ১০ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) দুপুরে নম পার্কে ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বারদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় বলেন, আল্লাহ ক্ষমাকারীকে বেশি পছন্দ করে বলে ওইটাই বেছে নিয়েছি। যদি আগেরটা বেঁছে নেই ৫ মিনিট নারায়ণগঞ্জ শহরে দাঁড়াতে পারবে না কেউ।
শামীম ওসমানের এমন বক্তব্যের মাত্র ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ১২ ফেব্রুয়ারি (শনিবার ) দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে শহরের চাষাঢ়া প্রেসিডেন্ট রোড এলাকায় অবস্থিত সিরাজ ম্যানশনের চারতলায় দৈনিক সময়ের নারায়ণগঞ্জ পত্রিকা অফিসে হামলার ঘটনা ঘটনায় একদল সন্ত্রাসী । হামলাকারীরা ভাংচুরকালে সম্পাদককে গুলি করে হত্যার হুমকি দিয়ে জানায়, “তোরা আজমেরী ওসমানের নামে নিউজ করস, এত বড় সাহস। ভাইয়্যা আসতে চাইসিলো আমরা আসতে হাতে পায়ে ধরে ভাইয়্যাকে থামাইসি। নেতার আইতে হইবো ? নেতা আইলে সমস্যা হবে।”
“নারায়ণগঞ্জে এগুলি আসলে কি হচ্ছে । একের পর এক অঘটন চলছেই নারায়ণগঞ্জে ।”
এভাবেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও চায়ের আড্ডায় একই সাথে পত্রিকার স্ট্যান্ডে চোখ বুলিয়ে সকল পত্রিকায় হামলার সংবাদ দেখে উল্লেখিত মন্তব্য করেছেন অনেকেই । যা এখন টক অব দ্যা টাউন
আজমেরী ওসমানের বিরুদ্ধে নিউজ করস্, এত বড় সাহস !
নারায়ণগঞ্জের একটি স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় স্বসস্ত্র হামলা চালিয়েছে একদল সন্ত্রাসী। এসময় তারা বলেন, তোরা আজমেরী ওসমানের নামে নিউজ করস, এত বড় সাহস।
হুমকী দাতারা আরও বলেন, ভাইয়্যা আসতে চাইসিলো আমরা আসতে হাতে পায়ে ধরে ভাইয়্যাকে থামাইসি। নেতার আইতে হইবো ? নেতা আইলে সমস্যা হবে। এ সময় দৈনিক সময়ের নারায়ণগঞ্জ পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক জাবেদ আহমেদ জুয়েলসহ সাংবাদিকদের হত্যার হুমকী দেন তারা। প্রায় পনেরো মিনিট ধরে চলে এই হামলা। এসময় তারা অকথ্য ভাষায় গালাগালি করার পাশাপাশি অফিসের সিসিটিভি ডিভাইস নিয়ে যায় এবং ক্যামেরা ভাঙচুর চালায়।
শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে শহরের চাষাঢ়া প্রেসিডেন্ট রোড এলাকায় অবস্থিত সিরাজ ম্যানশনের চারতলায় এই হামলার ঘটনা ঘটে।

এসময় পত্রিকাটির সম্পাদক জাবেদ আহমেদ জুয়েল অফিসে ছিলেন না। এসময় আজমেরী ওসমানের সমর্থকেরা বলেন, ওরে আজমেরী ওসমানের পা ধইরা মাফ চাইতে হবে। নয়ত ওর খবর আছে। একদম গুলি করে মাইরা ফালামু।
সময়ের নারায়ণগঞ্জ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আরিফ হোসাইন কনক জানান, বেলা সাড়ে বারোটার দিকে অফিসের নিচল শতাধিক মোটর সাইকেল অবস্থান করে। পরে তারা সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে এবং অফিসে ঢুকেই গালাগালি শুরু করে।
জানা যায় গত ১১ ফেব্রুয়ারি সময়ের নারায়ণগঞ্জ থেকে ‘যা ছিল খসঢ়া চার্জশীটে’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করা হয়। মূলত এই সংবাদের জের ধরেই পত্রিকা অফিসে হামলা চালায় আজমেরী ওসমানের সমর্থকরা। এসময় তারা হুমকি দিয়ে আরও বলেন, কালকের মধ্যে পত্রিকায় এর জন্য ক্ষমা না চাইলে পত্রিকা অফিস জ্বালিয়ে দিব ও গুলি করে মেরে ফেলবো। তারা বার বার দাবী করতে থাকেন প্রকাশিত সংবাদটি মিথ্যা ও বানোয়াট।
‘৫ মিনিট শহরে দাঁড়াতে পারবে না কেউ’ : শামীম ওসমান
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান বলেছেন, ‘শুধু আল্লাহ খোদার পথে চলে গেছি, ধৈর্য্য ধরি। আল্লাহ ধর্য্যশীলদের পছন্দ করেন এবং ক্ষমাকারীকে পছন্দ করে। ক্ষমাও করছি, ধৈর্য্যও ধরছি। কিন্তু আল্লাহ এটাও বলছে, নাকের বদলে নাক, চোখের বদলে চোখ আর জানের বদলে জান।
সবই কিন্তু এলাউ আছে, ক্ষমাকারীকে বেশি পছন্দ করে বলে ওইটাই বেছে নিয়েছি। যদি আগেরটা বেঁছে নেই ৫ মিনিট নারায়ণগঞ্জ শহরে দাঁড়াতে পারবে না কেউ। এটা আমরা লাঠির জোড় দিয়ে করবো না, জনগণের শক্তি দিয়েই হবে। আমি বিশ্বাস জনতার শক্তির চেয়ে কোন শক্তিই বেশি হতে পাড়ে না।’
বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নম পার্কে ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বারদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘ত্বকী হত্যা নিয়ে দোকানদারি চলছে। তথ্য প্রমাণসহ যতটুকু আমি জানি তা নিয়ে প্রেস কনফারেন্স করবো। নারায়ণগঞ্জে অথবা ঢাকায়। সাথে সাথে এই হত্যাকান্ডের বিচার তড়িৎ গতিতে যাতে হয় সেই দাবি করবো। ধৈর্যেরও সীমা আছে। কোর্টে গিয়া বিচার চান। খসড়া চার্জশিট বলতে কোনো চার্জশিট নাই। থাকলে সেটা দেখান না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কর্মীরা অনেকেই ক্ষেপে গেছেন। অনেকের রাগ উঠে গেছে। ধৈর্য্য ধরেন। এই সময়টা পর্যন্ত ওয়েট করেন। প্রেস কনফারেন্স করার পর আমাদের জানা তথ্য যখন বলে দিবো। যারা তদন্ত করেছিল সেদিন, তাদের প্রধানও কিন্ত সাত খুনের আসামি। এখন কারাগারে রয়েছে। কার সাথে কথা বলেছিল, কারসাথে কন্ট্রাক্ট করেছিল, জানি আমি। সব কিছু জানি।’
শামীম ওসমান বলেন, ‘সকল হত্যার বিচার চাই। ২০ জন হত্যা হয়েছে আমার, সেই বিচারও পাই নাই। পারভেজ গুম হয়েছে, তাকে পাই নাই। কারা পারভেজকে গুম করার পেছনে ছিল জানতে চাইবো আমি। মাকসুদ হত্যার পেছনে কারা ছিল জানতে চাইবো আমি। অত বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না। জনগণ সাথে ক্ষেপে যাতে না যায়। তাহলে আপনাদের জন্য খুব একটা সুবিধা হবে না। আপনাদের পায়ের তলায় কতটুকু মাটি আছে আমি জানি।’









Discussion about this post