‘নারায়ণগঞ্জে রেলওয়ের জায়গা নিয়ে হরিলুট বরদাশত করা হবে না’ বলে মন্তব্য করেছেন ভূমি রক্ষা আন্দোলন পরিষদ নারায়ণগঞ্জের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি।
আজ সোমবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে ভূমি রক্ষা আন্দোলন পরিষদ আয়োজিত মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন।
রেলওয়ে কল্যাণ ট্রাস্ট নামে একটি হরিলুটের সংগঠন তৈরি করা হয়েছে অভিযোগ করে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, ‘স্পষ্ট করে বলতে চাই, রেলওয়ের জায়গা মানে রেলওয়ে কর্মকর্তাদের জায়গা নয়। রেলওয়ের নারায়ণগঞ্জের জায়গা হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের মানুষের জায়গা। সুতরাং রেলওয়ের কর্মকর্তারা এগুলো হরিলুট করে খাবে, তা হতে পারে না। মার্কেট করে রাম-সাম, যদু-মধু আর গডফাদাররা ভূমি আত্মসাৎ করবে, তা হতে পারে না। আমরা তা প্রতিরোধ করব।’
নারায়ণগঞ্জ রেল স্টেশন সংলগ্ন ভূমি জনস্বার্থে ব্যবহার না করে কল্যাণ ট্রাস্টের নামে বিপণি বিতান নির্মাণের চক্রান্ত করা হচ্ছে বলে মানববন্ধনে অভিযোগ করেন বক্তারা।
২০১২ সালে ১ নম্বর রেলগেট এলাকার রাস্তার পূর্ব পাশের রেলওয়ের জমি দখল করে বাণিজ্যিক মার্কেট করার জন্য রেলওয়ে কল্যাণ ট্রাস্টকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। আন্দোলনের মুখে তা বন্ধ করা হয়। এখন আবারও ওই জায়গা কল্যাণ ট্রাস্টের বিপণিবিতান নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে।
রেলওয়ে নারায়ণগঞ্জ স্টেশন মাস্টার কামরুল ইসলাম বলেন, কল্যাণ ট্রাস্টের নামে বিপণি বিতান নির্মাণ করা হবে। এ জন্য ১৬ ফেব্রুয়ারি সেখানে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে বলে রেলওয়ে ভূসম্পত্তি বিভাগ থেকে চিঠি এসেছে।
বিশেষ এক বাস্তবতা ও প্রয়োজনে ১০ বছর আগে ২০১২ সালে ভূমি রক্ষা আন্দোলন পরিষদ গঠিত হয়েছিল উল্লেখ করে মানববন্ধনে রফিউর রাব্বি বলেন, সেই সময় রেলওয়ের জমি দখল করে বিপণিবিতান বানিয়ে নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে বিক্রি করে ফেলেছিল ভূমিদস্যুরা।
নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক ব্যক্তিরা মিলে সিন্ডিকেট করে ৫-৭ কোটি টাকা তুলেও ফেলেছিলেন। সেই সময় প্রতিরোধের মুখে তা বন্ধ করতে বাধ্য হয় রেল কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন সময় রেলওয়ে ও রাজউক জনকল্যাণের জন্য এসব জায়গা অধিগ্রহণ করেছে। কিন্তু প্রয়োজনের বাইরে থাকা জায়গাগুলো রেল মন্ত্রণালয়ের অসাধু কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময় ভূমিদস্যুদের সঙ্গে আঁতাত করে বিক্রি করেছেন। ১০ বছর পর আবারও তাঁরা হরিলুটের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। কিন্তু তা করতে দেওয়া হবে না। এসব বন্ধ করতে হবে।
রফিউর রাব্বি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জে জায়গার অভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল করা যাচ্ছে না। অধিগ্রহণ আইনে বলা আছে, অধিগ্রহণ যে কারণে করা হচ্ছে সেই প্রয়েজনে যদি ভূমি ব্যবহৃত না হয়, তাহলে যার কাছ থেকে ভূমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে, তাকে ফেরত দিতে হবে অথবা সিটি করপোরেশন, পৌরসভা কিংবা ইউনিয়ন পরিষদকে হস্তান্তর করতে হবে। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে এই জায়গাগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হরিলুটের মতো বিক্রি করে আসছে।
রফিউর রাব্বি বলেন, ‘১ নম্বর রেলগেটের ১৫০-২০০ কোটি টাকার জায়গাগুলো চিহ্নিত ভূমিদস্যুরাই দখলে নিতে চাচ্ছে। শুনেছি, ইতিমধ্যে এসব জায়গার একটা ভাগ-বাঁটোয়ারাও তারা করে ফেলেছে। নারায়ণগঞ্জের জায়গা নিয়ে হরিলুট কখনোই আমরা বরদাস্ত করব না। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলতে চাই, আপনার মন্ত্রীরা, এমপিরা কীভাবে হরিলুট করছে, তার খোঁজখবর নেন, তথ্য তালাশ করেন। অন্যথায় আমরা আমাদের জমি আগেও রক্ষা করেছি, সেই পথে আবারও হাঁটতে বাধ্য হব।’
সমাজতান্ত্রিক গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের জেলা সভাপতি সেলিম মাহমুদের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন নাগরিক কমিটির সভাপতি এ বি সিদ্দিক, বাসদ জেলা কমিটির আহ্বায়ক নিখিল দাস, সিপিবির জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর রায় প্রমুখ।









Discussion about this post