ইচ্ছে থাকলে পুলিশ সব কাজ করতে পারে । সকল অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ইচ্ছে শক্তিটাই যথেষ্ট । পুলিশ পারে না এমন কোন কাজ নাই । এমনটাই আবারো প্রমাণ করলেন নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার একদল চৌকস পুলিশ কর্মকর্তারা ।
পেশাদরিত্ব কে প্রাধান্য দিয়ে মত্র ২ দিনের মধ্যে কোন অজ্ঞাতনামা ছিনতাইকারীদের চিহ্নিত করে নৈশপ্রহরী মোঃ ভাসান মালতি (৫০) হত্যা মামলার মূল আসামী দূর্ধর্ষ ছিনতাইকারী আক্কু (২০) কে গ্রেফতারের পর কোন ধরণের রিমান্ড ছাড়াই আধালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানের মাধ্যমে মামলার সকল কাজ সম্পন্ন করেছে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার পুলিশের চৌকষ একটি দল ।
মঙ্গলবার ভোবে হত্যাকান্ডের পর খবর পেয়েই মাঠে নামে পুলিশ । ভাষমান ছিনতাইকারী চক্রের চার জনের একটি দল এই হত্যাকান্ডে জড়িত এই মর্মে পুলিশের একাধিক টিম কাজ শুরু করে । হত্যাকারী খুনি চক্রের কারো হাতে কোন কোন মুঠোফোন না থাকার পরও প্রযুক্তি ব্যবহার করতে না পেরে পুরানো পদ্ধতি অবলম্বন করেই ভাষমান খুনি আক্কু কে গ্রেফতারের পর খুনের কাজে ব্যবহৃত ছুড়ি উদ্ধার করে পুলিশ । পরবর্তীতে কৌসূলী জিজ্ঞাসাবাদেই সকল তথ্য প্রকাশ করে খুনি আক্কু ।
পুলিশের কাছে এমন স্বীকারোক্তির পর শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারী ) সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাউছার আলমের খাস কামড়ায় ১৬৪ ধারায় সকল তথ্য উল্লেখ করে নিজেকে দোষী দাবী করে এমন কাজ আর করবে না বলে ক্ষমা চায় ছিনতাইকারী আক্কু । ছিনতাইকারী আক্কু তার স্বীকারোক্তিতে আরো জানায়, ভোররাতে দোকান থেকে কয়েক হাজার টাকা চুরি করে নিজেদের মধ্যে বাগভাটোয়ারার পর যে যার মতো চলে যায় । তার সহয়োগি আরো তিন জন এই নগরীতে আছে বলেও জানায় আক্কু ।
আদালতে এমন স্বীকারোক্তির পর আসামীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বলে জানান নারায়ণগঞ্জ আদালতের কোর্ট ইন্সপেক্টর আসাদুজ্জামান ।
এমন স্বীকারোক্তির পর নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ইসপেক্টর (তদন্ত) আজিজ হাওলাদার বলেন, আসামী গ্রেফতার ও স্বীকারোক্তির পর একটু স্বস্তি পাচ্ছি । নাওয়া খাওয়া ভুলে এই আসামীকে গ্রেফতার করাই আমাদের মূল লক্ষ্য ছিলো । এখন বাকি আসামীদের গ্রেফতার করতে পারলেই পূর্ণাঙ্গ স্বস্তি পাবো ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দারোগা কামরুজ্জামান বলেন, ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত টানা পরিশ্রমেই আসমী গ্রেফতার ও তাকে স্বীকারোক্তির ব্যবস্থা করতে পেরেছে । এখন একটু স্বস্তি পাচ্ছি । এই আসামী ধরা যে কতটা কষ্টের ছিলো তা ভাষায় বোঝাতে পারবো না ।
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর সর্বত্রই ছিনতাইকারীদের দৌড়াত্ম মারাত্মক আকার ধারণ করায় ভাসমান এই অপরাধী চক্রদের কোন অবস্থাতেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছিলো না । পুরো নগরীতে অপু সিনহার মতো দূর্ধর্ষ ছিনতাইকারীরা লোমহর্ষক ঘটনা ঘটিয়েই আসছিলো ।
গেলো মঙ্গলবার ভোর ৫ ৫৫ মিনিটের সময় ডাইলপট্টি এলাকার নৈশপ্রহরী মোঃ ভাসান মালতি (৫০) কে অজ্ঞাতনামা ছিনতাইকারী ছুরিকাঘাত করে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে পালিয়ে যায় । ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত মৃত্যূপথযাত্রী নৈশপ্রহরী মোঃ ভাসান মালতি মাটিতে লুটিয়ে পরেও হাতে থাকা বাঁশিতে ফুঁ দিতে থাকে । বাঁশির এমন ফুঁ এর শব্দে আশেপাশের লোকজন এসে রক্তাক্ত নৈশপ্রহরী মোঃ ভাসান মালতি কে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আনা হলে চিকিৎসক গোলাম মোস্তাফা ঈমন মৃত ঘোষনা করেন । অল্প সময়ের মধ্যেই খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশ লাশ মর্গে পাঠানোর সাথে সাথেই কাজ শুরু করেন ।
মঙ্গলবার লাশ ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তরের পাশাপাশি পুলিশের কর্মকর্তাদের মধ্যে থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আজিজুল হাওলদার, শীতলক্ষ্যা ফাঁড়ির ইনচার্জ সাঈদুর রহমান সাঈদ, চাষাড়া ফাঁড়ির ইনচার্জ মঞ্জুর মোর্শেদ আলম, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দারোগা কামরুজ্জামানসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা টানা ৪০ ঘন্টার (২ দিন) মধ্যেই নৈশপ্রহরী ভাসান মালতি হত্যাকান্ডে জড়িত ছিনতাইকারী দূর্ধর্ষ আক্কু (২০) কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন । তাৎক্ষনিকভাবে এই খুনি ছিনতাইকারী আক্কুর কাছ থেকে খুনের কাজে ব্যবহৃত ছাড়াও উদ্ধার করে চমক সৃষ্টি করে পুলিশ। এই ছিনতাইকারী আক্কু বন্দর থানার ইস্পাহানী এলাকার আবদুল কাদিরের পুত্র ।
এমন হত্যাকান্ডের বিষয়ে নিতাইগঞ্জ এলাকার অনেকেই বলেন, পুলিশ কি না পারে ? এটাই আবার প্রমাণ হলো । মাত্র ৪০ ঘন্টার মধ্যেই খুনিকে গ্রেফতার করায় সাধুবাদ জানাচ্ছি । রাতের অন্ধকারে সহজেই ধারনা করা যায় নাই কারা এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত । পুলিশ দুই দিন ব্যাপী পুরো নিতাইগজ্ঞে অভিযান চালিয়ে সিসি ফুটেজ দেখে ছিনতাইকারী খুনি আক্কু কে শনাক্ত করে অভিযান শুরু করে । অভিযানের এক পর্যায়ে নগরীর ৫নং মাছ ঘাট এলাকা থেকে আটক করে ।
এমন ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত ) আজিজুল হাওলাদার নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট কে বলেন, ছিনতাইকারী আক্কু ডাইলপট্টি এলাকার হোলাপ শাহ স্টোরের টিনের চালা খুলে ভিতরে চুরি করে বের হেওয়ার পর নৈশপ্রহরী ভাসান মালতি (৫০) তাকে বাধা দেয় । এমন বাধা পেয়েই উপর্যুপুরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। মূলতঃ এই আক্কু একজন ভাসমান অপরাধী । নাম ঠিকানা পাওয়া গেলেও আক্কু ছিনতাই করে বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করে । পরিবারের সাথেও তার তেমন কোন সম্পর্ক নাই ।
দ্রুত গতিতে এমন অপরাধীকে গ্রেফতার করায় অনেকেই বলেছেন, পুলিশ ইচ্ছে করলেই সব পারে এইটাই তার প্রমাণ । এবার উচিত হবে নগরীর প্রায় সকল এলাকায় ছিনতাইকারীদের দৌড়াত্ম মারাত্মক আকার ধারণ করছে । তাদের নিয়ন্ত্রণ করা। ছিনতাইকারীদের গডফাদার অপু সিনহার নেতৃত্বে শহরের ৮/১০ টি ৩/৪ জনের দল প্রতি রাতেই শহরবাসীকে অতিষ্ট করে তুলছে। মঙ্গলবার ভোরে নৈশ প্রহরী হত্যাকান্ডের পরও বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাতেও অপু সিনহার বাহিনী এবং অপু সিনহা নিজেও শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে ছিনতাই করেছে বলে প্রত্যাক্ষদর্শী অনেকেই জানায় । এদের নিয়ন্ত্রণ করলেই শান্তি ফিরে আসবে এই শহরের ।









Discussion about this post