নারায়ণগঞ্জের আলোচিত মেধাবী ছাত্র ত্বকী হত্যাকান্ডের সংবাদ প্রকাশের জের ধরে দৈনিক সময়ের নারায়ণগঞ্জ পত্রিকা অফিসে হামলা ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কিশোর গ্যাং লিডার ম্যাকলিনকে গ্রেফতার করেছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
সোমবার দিনগত রাতে শহরের চাষাঢ়া এলাকা থেকে ম্যাকলিনকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। মঙ্গলবার ২২ ফেব্রুয়ারী বিকেলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃত ম্যাকলিন ৬৬নং উত্তর চাষাঢ়াস্থ আনন মহলের ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া আনোয়ার খন্দকারের পুত্র। ম্যাকলিনের বড় ভাই মিল্টন খন্দকার বিএনপি শাসনামলে দুর্ধর্ষ কিলার হিসেবে পরিচিত ছিল।
এদিকে অফিসে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় গ্রেপ্তার সাত আসামির জামিন মঞ্জুর করেছে নারায়ণগঞ্জের একটি আদালত। ২২ ফেব্রুয়ারি সকালে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নূর মহসিনের আদালতে জামিন আবেদন জানায় তারা। শুনানি শেষে তাদের জামিন মঞ্জুর করেন তিনি।
জামিনপ্রাপ্তরা হলেন, শ্যামল সাহা, কৃষ্ণা, ইব্রাহিম, হাসিব, লিটন দাস, মো. ফয়সাল ও বিল্লাল হোসেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের এসআই ইয়ানূর জানান, দৈনিক সময়ের নারায়ণগঞ্জ পত্রিকা অফিসে হামলা ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কিশোর গ্যাং লিডার ম্যাকলিনকে গ্রেফতার করেছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালত শুনানীর জন্য পরবর্তী দিন ধার্য্য করেছে। এছাড়াও ম্যাকলিনের বিরুদ্ধে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টা মামলাসহ আরো কয়েকটি মামলা রয়েছে।
উল্লেখ্য ১২ ফেব্রুয়ারী দুপুর ১২টা ২৫মিনিটে স্থানীয় পত্রিকা ‘দৈনিক সময়ের নারায়ণগঞ্জ’ অফিসের নিচে অর্ধ শতাধিক সন্ত্রাসী মোটর সাইকেলে এসে অবস্থান নেন। তারা অফিসে প্রবেশ করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন। শুক্রবার সময়ের নারায়ণগঞ্জ পত্রিকার প্রধান সংবাদ ছিল “‘যা ছিল খসড়া চার্জশিটে”’। সংবাদটি কেন প্রকাশ করা হয়েছে, তার কৈফিয়ত জানতে চান হামলাকারীরা। তাঁরা বলেন, ‘তোরা আজমেরী ওসমানের বিরুদ্ধে নিউজ করস। কালকের মধ্যে পত্রিকায় ক্ষমা না চাইলে পত্রিকা অফিস জ্বালিয়ে দেব ও সম্পাদককে গুলি করে মেরে ফেলব। হামলাকারীরা প্রায় ১৫ মিনিট কার্যালয়ে অবস্থান করে হুমকি দিয়ে চলে যান। এসময় বিদ্যুতের লাইন বন্ধ করে দেন। সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর করেন। দু’টি পিসির হার্ডডিক্স ও সিসি ক্যামেরার সরঞ্জাম খুলে নিয়ে যায়।
ওই ঘটনায় ১৯জনের নাম উল্লেখ ও ৩০ থেকে ৪০জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলায় অফিসে হামলা, ভাঙচুর, প্রাণনাশের হুমকি ও দেড় লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগ করা হয়েছে। মামলায় আসামিরা হলেন নাসির (৩৫), আক্তার নূর (৪৫), রবিন (২৯), রাতুল (২৫), মনির (২৮), শ্যামল সাহা লক্ষণ (২৬), কৃষ্ণা সাহা (২৬), মুকিত (২৯), মো. নাসির হোসেন (৩১), শাকিল (৩০), সুমন (৩১), সানি (৩২), সনেট (২৭), আন্নান (২৯), কাজল (৩২), রুবেল (২৭), সিনাফী (৩১), ফারুক (৩৫), ইসমাইল (৩১)। এই মামলায় অদ্যাবধি ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের প্রত্যেককেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
এদিকে মামলার প্রধান আসামীরা এখনো গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পত্রিকা সংশ্লিষ্টরা। সম্পাদক ও প্রকাশক জাবেদ আহমেদ জুয়েল জানান, ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হলেও মূল আসামীরা পলাতক রয়েছে। তাদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবী জানাই।
নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার (এসপি) জায়েদুল আলম বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আসামিরা বার বার তাদের অবস্থান পরিবর্তন করছে। যার ফলে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আশা করছি অবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।’
সন্ত্রাসীদের হুমকির বিষয়ে অভয় দিয়ে এসপি বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের কোন ভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের চরম পরিণত হবে।’









Discussion about this post