পুলিশ পিটিয়ে নিজেদের রক্ষা করতে ব্যাপক দৌড়ঝাপ, জোড়ালো তদ্বির, নানা আলোচনা সমালোচনার পর শেষ পর্যন্ত বন্দর উপজেলার ধামগড় ইউনিয়ন পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান কামাল হোসেনের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ আদালতের বিজ্ঞ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারহানা ফেরদৌস । সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারী) বিকেলে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পন করলে এমন আদেশের পর কোর্ট পুলিশ সন্ধ্যায় কারাগারে পৌঁছে দেয় ।
নারায়ণগঞ্জ আদালতে দায়িত্বরত কোর্ট পুলিশের উপ পরিদর্শক কামাল হোসেন এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন ।
তথ্য সূত্রে প্রকাশ, সদ্য অনুষ্ঠিতব্য বন্দরের ধামগড় ইউনিয়নে এক ভোট কেন্দ্রে রাতে নৌকায় সীল মারার গুজবে ছড়িয়ে মোবাইল ডিউটি পুলিশের গাড়িতে হামলা ও গলায় ছুরি চালিয়ে জবাই করে হত্যার চেষ্টা ও অস্ত্র লুটের ঘটনায় স্বতন্ত্র প্রার্থী সহ ২’শ জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছেন আহত ডিবি পুলিশের এএসআই আব্দুল হাই।
পুলিশের এ মামলায় দুই দফা অভিযানে গ্রেপ্তারকৃত ১৫ জনকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
২১ নভেম্বর রোববার দুপুরে গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে ডিবি পুলিশ হাজির করে নারায়ণগঞ্জ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালতে।
জানা যায়, স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান বিজয়ী কামাল হোসেন ও তার বড় ভাই আজিজুল হকের নেতৃত্বে দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনের ভোট গ্রহনের আগের দিন (১০ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১১ টার দিকে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের লাঙ্গলবন্দ এলাকায় পুলিশের ওপর এ হামলার ঘটনা ঘটায়।
তৎসময়ে হামলায় গুরুত্বর আহতরা হলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক নুরু মিয়া, উপ পরিদর্শক সোহেল মোল্লা, সহকারি উপ পরিদর্শক আব্দুল হাই, কনস্টবল ওয়াসিম আকরাম, কনস্টবল সাকিল আহম্মেদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল-খ) শেখ বিল্লাল হোসেন ও বন্দর থানার পুলিশ পরিদর্শক(তদন্ত) মহসিন।
ঘটনাস্থল থেকে ৬ জন গ্রেপ্তারের ১০ দিন পর ২০ নভেম্বর শনিবার ভোর রাতে জাঙ্গাল এলাকা থেকে আরো ৯ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
তৎসময়ে গ্রেপ্তারকৃত হলো, কবির হোসেন (৩০), মমিনুল(৩৫), হানিফ(৩৮), আমির(৩৫), তুহিন(২১) জুয়েল(২৮), মমিনুল (৩০) , জুয়েল মিয়া (২৮), তুহিন (২১),আমির হোসেন (৩৫) , মো: হানিফ (৩৫) , কবির হোসেন (৩০) মো: দ্বীন ইসলাম (৫২) ,জাকির হোসেন (৪২) ও মো: সোহেল মিয়া (৩৪) । তারা সবাই বন্দর জাঙ্গাল এলাকার বাসিন্দা ।
ঘটনার পর তাৎক্ষনিক মন্তব্যে স্বতন্ত্র নবনির্বাচিত ধামগড় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কামাল হোসেন জানান, ভোট কেন্দ্রে পুলিশ সীল মারার গুজবে উত্তেজিত কর্মী-সমর্থকরা আনাঙ্খিত ঘটনা ঘটিয়েছে। লাঠি সোটা মহড়ায় বিষয়টি যার যার ব্যক্তিগত। আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি করো চকিদারি করার জন্য নয়।
প্রসঙ্গত, দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলার ৫ টি ইউপিতে নির্বাচনের শেষ দিনে ভোট গ্রহনের আগের দিন রাতে ধামগড় ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড থেকে ৪ নং ওয়ার্ড ৪টি ভোট কেন্দ্রে দায়িত্ব নিয়োজিত জেলা গোয়েন্দা শাখা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক নুরু মিয়া, উপ পরিদর্শক সোহেল মোল্লা, সহকারি উপ পরিদর্শক আব্দুল হাই, কনস্টবল ওয়াসিম আকরাম ও কনস্টবল সাকিল আহম্মেদ। তারা প্রত্যেক কেন্দ্রে ঘুরে ঘুরে টহল ডিউটি করছিলেন ।
১০ নভেম্বর রাত সাড়ে ১১ টার দিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামাল হোসেনের নিজ বাড়ির কেন্দ্র জাঙ্গাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট কেন্দ্রে পুলিশ নৌকায় সীল মারার গুজব ছড়িয়ে পড়ে।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ডিবি পুলিশের টহল ডিউটির অবস্থান নিশ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামাল হোসেন ও তার বড় ভাই আজিজুল হকের নেতৃত্বে দেড় থেকে দুইশত জনের একটি দল রামদা, চাইনিজ কুড়াল, লোহার তৈরী লাঠিসোটা নিয়ে দুই কিলোমিটার এলাকা দৌড়ে এসে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের লাঙ্গলবন্দ এলাকায় পুলিশের বহনের নোয়া মাইক্রোবাসের ওপর হামলা চালিয়ে গাড়ি থেকে টেনে ছেঁচড়ে বের করে জবাই করে হত্যার উদ্দেশ্যে আহত পুলিশের গলায় ছুরি চালায় এবং মাথা থেঁতলে ৫ জনকে গুরুত্বর আহত করে তাদের অস্ত্র লুটে নেয়।
এ খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল-খ) শেখ বিল্লাল হোসেন ও বন্দর থানার পুলিশ পরিদর্শক(তদন্ত) মহসিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে গুরুতর আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়।

ঘটনা ঘটিয়ে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে থাকাবস্থায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির তৎকালীন নেতা এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের পক্ষে ভোট চাইতে কয়েকজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের পাশাপাশি পুলিশ পিটানো এই চেয়ারম্যান কামাল হোসেন হাতি প্রতীকে ভোট চেয়ে বিতর্কের ঝড় তুলেন ।









Discussion about this post