আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘খুনি যদি নারায়ণগঞ্জের হয় এবং বিচার যদি যথাযথ নিয়মে হয়, তাহলে সরকারের আর কোনো দায় থাকে না। কিন্তু সরকার যদি খুনিদের রক্ষার চেষ্টা করে, সংসদে খুনিদের পক্ষে বক্তব্য দেয়, তাহলে খুনের দায় সরকারের ওপর বর্তায় এবং সেই দায় সরকার বহন করছে। সরকার যত দিন খুনিদের রক্ষা করবে, তত দিন সরকার খুনি হিসেবে অভিহিত হবে।’
আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘দেশে নারী ও শিশুর কোনো নিরাপত্তা নেই। ত্বকীর মতো মেধাবী কিশোরেরাও দুর্বৃত্তদের জন্য হুমকি। ত্বকীকে ভয়ংকর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে খুনিরা হত্যা করেছিল। ত্বকীর বাবার সঙ্গে যাঁরা মানুষের জন্য লড়াই করেন এবং নারায়ণগঞ্জবাসীকে ভীতসন্ত্রস্ত ও চুপ করাতে ত্বকীকে হত্যা করা হয়। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের মানুষ প্রতিবাদ জারি রাখায় খুনিদের সেই পরিকল্পনা ও ধারণা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। হামলা, হুমকি ও মামলার পরও নারায়ণগঞ্জবাসীর লড়াই সারা দেশের মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। ত্বকীর খুনিদেরও একদিন বিচার হবে।’
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, ‘জনগণকে ভয়ংকর বিপদের দিকে ঠেলে দিয়ে পুরো বাংলাদেশকে নিরাপত্তাহীন বানিয়ে সরকার কেন এই ক্ষুদ্র গোষ্ঠীকে পুষতে চায়? তাদের রক্ষা করতে চায় কেন? সরকারের যারা দেশ চালাচ্ছে, তারা জনগণের ওপর নির্ভর করে না। জনগণের মত, স্বার্থ তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। দেশি-বিদেশি খুনি, লুটেরা ও দখলদারদের সমর্থনে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকে। সে জন্য খুনি, দখলদার ও লুটেরাদের রক্ষা করা তাদের দায়িত্ব এবং নিজেদের রক্ষা করতে তারা খুনি ও দখলদারদের রক্ষা করে। তারা মনে করে, তাদের ওপর ভর করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে পারবে।’
খুশী কবির বলেন, ‘ত্বকী হত্যার বিচার না হওয়া—শুধু নারায়ণগঞ্জবাসীর নয়, সারা দেশের জন্য কলঙ্ক। আমরা জানি না, কত দিন আমাদের এভাবে বিচারের জন্য দাঁড়াতে হবে। ত্বকী শুধু তার পরিবারের নয়, বাংলাদেশের সন্তান। ত্বকী জীবিত থাকলে বাংলাদেশের জন্য উজ্জ্বল উদাহরণ হতো।’ ত্বকী হত্যাকে বিচারহীনতার উজ্জ্বল উদাহরণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এমন এক সময় আসবে, যখন মানুষ বিচারহীনতার সংস্কৃতি গ্রহণ করবে না। চুপ করে বসে থাকবে না। ত্বকী হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা মাঠে থাকব। আমরা ত্বকীর মতো আর কোনো ছেলেকে হারাতে চাই না। ত্বকী হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা অবশ্যই সরব থাকব।’
ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি বলেন, ত্বকী হত্যার এক বছরেই র্যাব তদন্ত করে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন ও খুনিদের শনাক্ত করে অভিযোগপত্র প্রস্তুত করেছে উল্লেখ করে শিগগিরই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। ওই অভিযোগপত্রে বলা হয়, আজমেরী ওসমানের টর্চার সেলে ত্বকীকে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ত্বকীকে অপহরণের পর টর্চার সেলে নেওয়ার আগপর্যন্ত বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ত্বকী কোথায় ছিল? ত্বকীর সঙ্গে কী করা হয়েছিল? সে সময় কারা কারা উপস্থিত ছিল? কার কী ভূমিকা সেটি অভিযোগপত্রে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ত্বকীর বাবা বলেন, ‘আমরা বিভিন্নভাবে জেনেছি, ত্বকীকে অপহরণের পর সায়াম প্লাজার একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে মিশনপাড়া মোড়ে লেবার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে সঙ্গে কারা ছিল সেটা গুরুত্বপূর্ণ। র্যাবের অভিযোগপত্রে বলা হয়, তিন দিন ধরে আমাদের বাড়ির সামনে রেকি করেছিল। এই রেকিতে কারা কারা ছিল, সেটি উল্লেখ থাকতে হবে। এটি বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র পূর্ণাঙ্গ হবে না। এ সময়ে শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান জড়িত ছিল। পাঁচ ঘণ্টায় তার (অয়ন ওসমান) কী ভূমিকা ছিল, সেটি অভিযোগপত্রে স্পষ্ট করতে হবে। সে কোথায় ছিল, কে কে ছিল, কাদের কী কী ভূমিকা ছিল।’
সমাবেশে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল নগরের চাষাঢ়া থেকে শুরু হয়ে বঙ্গবন্ধু সড়ক দিয়ে নগরের আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার মিলনায়তনের সামনে গিয়ে শেষ হয়।









Discussion about this post