আবার আলোচনা সমালোচনার মুখে “জনাব খালেদ হায়দার খান কাজল ।“ যিনি একাধারে রাইফেল ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবার ব্যবসায়ী সংগঠন নারায়ণগঞ্জ চেম্বার এন্ড কমার্স নেতা। যাকে নগরবাসীর সকলেই কাজল বললে না চিনলেও এক ডাকেই রাজাকারপুত্র বললেই আর নাম বলার আর প্রয়োজন হয় না । সেই খালেদ হায়দার খান কাজল এবার “২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস, ও ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০২২“ উদযাপন উপলক্ষে শহিদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা শীর্ষক সভায় মধ্যমনি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে সেই রাজাকার পুত্র খালেদ হায়দার খান কাজল কে ।
নারয়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার উপ পরিচালক (উপ সচিব) ফাতেমা তুল জান্নাত কর্তৃক ইস্যূকৃত স্মারকে ১৮ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয় ।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কর্তৃক ইস্যুকৃত এই পত্র হাতে পেয়ে একজন মুক্তিযোদ্ধা তার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট কে বলেন, “আমরা মুক্তিযোদ্ধারা খুবই অসহায়। আমাদের কথা বলার ভাষা নেই । একজন রাজাকার পুত্র যখন প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা শীর্ষক সভায় মধ্যমনি করা হয় তাহলে এই লজ্জা আমরা রাখি কোথায় ? আমরা কথা বলতে পারি না । আমাদের মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে । এই কাজলকে নাকি প্রশাসনের দপ্তরে দপ্তরে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে পরিচয় করে দেয়া হয় । লজ্জা – লজ্জা – লজ্জা , এই লজ্জা রাখি কোথায় আমরা ।”
৬ মিনিট ২৮ সেকেন্ডের মুঠোফোনের এই ক্ষোভের বিষয়টি এই মুক্তিযোদ্ধার সম্মতিতে রেকর্ড করে রাখা হয়েছে নিউজ নারায়ণগঞ্জ আপডেট এর দপ্তরে ।
এমন ঘটনা ছাড়াও দীর্ঘদিন যাবৎ প্রাপ্ত তথ্য থেকে আরো জানা যায়, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে, স্থানীয় অনেক অনুষ্ঠানেও প্রথম সারিতে রাখা হয় খালেদা হায়দার খান কাজলকে। বছরের পর বছর এই কাজলকেই করা হচ্ছে চাষাড়া রাইফেল ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক। দীর্ঘদিন ধরে চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি !
ব্যাপক অভিযোগ এবং প্রকাশিত সংবাদ থেকে আরো জানা যায়, প্রভাবশালী একটি পরিবারের আশীর্বাদে তিনি প্রতিটি স্থানেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। ওই পরিবারের আশীর্বাদ থাকার কারণে রাইফেল ক্লাবের মত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠানের সাধারণ সম্পাদক তিনি। অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, যার বাবা গোলাম রাব্বানী খান ছিলেন একজন ‘রাজাকার’, সেই ব্যক্তি কী করে রাইফেল ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হয়! কেননা, পদাধিকার বলে জেলা প্রশাসক এই ক্লাবের সভাপতি। সে হিসেবে কোনোভাবেই একজন ‘রাজাকারপুত্র’ এই ক্লাবের সেক্রেটারি হতে পারেন না।
অন্যদিকে চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি হিসেবে বেশ কয়েক বছর ধরেই আছেন খালেদ হায়দার খান কাজ । ওই একই পরিবারের আশীর্বাদে তিনি এই পদে রয়েছেন বলে শোনা যায়। এখানে বসেই তিনি নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করেন ।
শুধু ওই দুটি প্রতিষ্ঠানই নয়, রাষ্ট্রীয় অনেক অনুষ্ঠানেও খালেদ হায়দার খান কাজলকে দেখা যায় সামনের সারিতে। কখনও কখনও মুক্তিযোদ্ধাদের অনুষ্ঠানেও তাকে দেখা যায় অন্যরক ভূমিকায়। এ নিয়ে নানা সময়ে নানা জনে নানা সমালোচনাও করেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন, একজন ‘রাজাকারপুত্র’ কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলিতে আসে !
জানা গেছে, খালেদ হায়দার খান কাজলের পিতা গোলাম রাব্বানী খান ছিলেন স্বাধীনতা বিরোধী। তিনি শান্তি কমিটির চাষাড়া ইউসি কমান্ড ছিলেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে ছিল গোলাম রাব্বানী খানের অবস্থান। তিনি ছিলেন পাকিস্তান পন্থী। স্বাধীনতার বিরোধীতা করে করা শান্তি কমিটির নেতা ছিলেন তিনি। ইতিহাসবীদ মুনতাসির মামুনের ‘শান্তি কমিটি ৭১’ বইয়ে গোলাম রাব্বানী খানকে রাজাকার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। রিতা ভৌমিকের বইয়েও এ তথ্য পাওয়া যায়।
সূত্র বলছে, পারিবারিক শিক্ষা থেকেই মনেপ্রাণে খালেদ হায়দার খান কাজলও ছিলেন অনেকটা পিতার আদর্শে আদর্শিক। যার কারণে তিনি মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত না হয়ে বিএনপির রাজনীতর সাথে যুক্ত ছিলেন। তোলারাম কলেজে ছাত্রছাত্রী সংসদ নির্বাচনে তিনি ছাত্রদলের প্যানেল থেকে নির্বাচনও করেছিলেন। পরে অবশ্য তিনি সুবিধাপ্রাপ্তির আশায় নাসিম ওসমান যখন এমপি হন তখন তার বলয়ে ভিড়ে যান। অনেকে তাকে সেসময় নাসিম ওসমানের কর্মচারী ই বলতেন। পরবর্তীতে তিনি সেলিম ওসমানের মালিকানাধীন উইজডম এ্যাটায়ার্স নামক ফ্যাক্টরীতে চাকরি নেন।
নগরীতে ব্যাপক চাউর রয়েছে, এই কারখানাতেই তিনি অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ধরাও খেয়েছিলেন। সেসময় তিনি মারপিটের শিকার হন এবং উইজডম থেকে তাকে বিতাড়িতও করা হয়েছিল নগ্নভাবে।
১৯৮৯ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত ওসমান পরিবারের আশীর্বাদ নিয়ে চলাফেরা করা খালেদ হায়দার খান কাজলের ভাগ্যাকাশ সুপ্রসন্ন হতে থাকে ২০০৮ সালে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি ওই পরিবারের অত্যন্ত কাছে মানুষ হয়ে উঠেন। তার নিয়ন্ত্রণে চলে যায় নারায়ণগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগসহ বেশ কয়েকটি সেক্টর।
অনেকে বলে থাকেন, খালেদ হায়দার খান কাজল নানা সময়ে নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে জন্ম দিলেও ওসমান পরিবার তাকে দূরে ঠেলে দেননি। বরং তাকেই বোগলদাবা করে চলে এই পরিবার। এই পরিবারের হয়ে অনেক কিছুর সিদ্ধান্তও তিনি দিয়ে থাকেন বলে শোনা যায়। এসব কারণে অনেকেই বলে থাকেন, এক কাজল তিন এমপির ক্ষমতা রাখেন। তিনজন এমপি নাকি তার পরামর্শেই চলেন, বলেন।
নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর সচেতন মহলের অনেকেই বলেন, খালেদ হায়দার খান কাজল ‘রাজাকারপুত্র’ এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাকে পাশে রাখার কারণে ওসমান ভ্রতৃদ্বয় প্রায় সময় সমালোচনার মুখে পড়েন। অনেকে প্রশ্নও তুলেছেন, তাদের পাশে ‘রাজাকারপুত্র’ কীভাবে ঠাঁই পায় ! ‘রাজাকারপুত্র’ কাজলে কী এমন মধু আছে যে, তাকে ওসমান ভ্রতৃদ্বয় ছাড়তে পারেন না!
সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য থেকে আরো জানা যায়, সদ্য সমাপ্ত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে খালেদ হায়দার খান কাজল পর্দার আড়াল থেকে জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিরুদ্ধাচারণ করেছেন। অর্থাৎ তিনি নৌকার বিপক্ষে গিয়ে হাতি প্রতীকের হয়ে কাজ করেছিলেন। ২০২১ সালে জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভোটগ্রহণের দিন একাধিক আইনজীবী খালেদ হায়দার খান কাজলের কাছে লাঞ্ছিত হয়েছিলেন। তিনি একজন বহিরাগত হয়ে আইনজীবীদের মারধরও করেছিলেন। এই চিত্র ধারণ করতে গেলে এবং খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে চারজন সাংবাদিকও লাঞ্ছিত হয়েছিলেন খালেদ হায়দার খান কাজলের হাতে।









Discussion about this post