‘এখানে অনেক সুধীজন ও মুক্তিযোদ্ধা আছেন। দয়া করে ‘প্রসিদ্ধ রাজাকার’কে কারও কথায় মুক্তিযোদ্ধা বানানের চেষ্টা করবেন না। তাহলে ভবিষ্যতে আপনাদের মানুষ ধিক্কার দিবে। আপনাদের সন্তানদের মানুষ ধিক্কার দিবে। আপনি মরে যাবেন কিন্তু আপনাদের সন্তানদের মানুষ বেঈমানের বাচ্চা বলবে। এই কাজটা অত্যন্ত নিজের সন্তানের জন্য হলেও কইরেন না।’
এভাবেই নারায়ণগঞ্জের কুখ্যাত রাজাকার গোরাম রাব্বানী খান কে সম্প্রতিক সময়ে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর চেষ্টা করার ঘটনায় কঠোর সমালোচনা করে সতর্ক বার্তা দিয়েছেন নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী।
তিনি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও সুধীজনকে এই বিষয়ে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে কুখ্যাত রাজাকার গোলাম রাব্বানী খান কে ঘিরে এমন মন্তভ্য করেন ।
শনিবার (২ এপ্রিল) বিকেলে নগরীর ৮ নম্বর ওয়ার্ডে গোদনাইল ক্যানেলপাড় এলাকায় গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এইসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে টানা তৃতীয়বারের মতো নাসিক মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় ডা. আইভীকে এলাকাবাসী গণসংবর্ধনা প্রদান করেন।
এই সময় আইভী আরও বলেন, ‘বীরত্বের সাথে লড়াই করে এই দেশ স্বাধীন করেছেন। নারায়ণগঞ্জে জুজুর ভয় কইরেন না। মরতে যখন হবেই তাহলে এত ভয় কেন! ভয় পাইয়েন না দয়া করে। সত্য কথা বলেন।’
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মিয়াকে উদ্দেশ্য করে সিটি মেয়র বলেন, ‘এখানে মজিবুর কাকা ও ইয়াছিন কাকা একসাথে এসেছেন। তারা আওয়ামী লীগের পক্ষে আছেন বলে জানালেন। তারা আসায় অনেকদিন পর ভালো লাগলো। আগে মনে হতো আমি যেন অন্য কোনো দল করি। মনে হতো, একজনই যেন আওয়ামী লীগের সম্পত্তি, আমরা যেন ভেসে এসেছি। আমরা ভেসে আসি নাই। আমার বাবা আলী আহাম্মদ চুনকা মাটি ও মানুষের নেতা ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সময় ১৯৭৪ সালে পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি একাধারে আওয়ামী লীগের মহানগর ও জেলার সভাপতি ছিলেন। এখন যারা আওয়ামী লীগ করেন তারা আলী আহাম্মদ চুনকার সাথে রাজনীতি করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সূতিকাগার নারায়ণগঞ্জে আলী আহাম্মদ চুনকা, প্রয়াত নেতা শামসুজ্জোহার হাত ধরে রাজনীতি করেছেন সকলে। জোহা কাকা আমার বাবার বড় ছিলেন কিন্তু আমার বাবা তার সাথে নির্বাচন করে শহর ও জেলায় সভাপতি হয়েছিলেন। আরও অনেকেই আছেন যেমন আনসার আলী কাকা, মফিজ সাহেব, নাজমা রহমানকে ভুলতে বসেছি। আমরা মুক্তিযোদ্ধাকে রাজাকার আর রাজাকারকে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে ইতিহাসকে বিকৃত করছি। যারা গায়ের রক্ত পানি করে, জীবন বাজি রেখে আওয়ামী লীগ করেছে, পঁচাত্তরের পট-পরিবর্তনের পর দলকে সংগঠিত করেছে তাদেরকে আমরা অবমূল্যায়ন করি। তাদের কথা সাহস করে বলি না। জুজুর ভয়ে মন খুলে কথা বলতে পারি না। যারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দল করেন তারা সবকিছু থেকে বেরিয়ে এসে জনগণের সাথে মেশেন। মানুষের কথা শোনেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু আমরা কোন্দলে আর দল-উপদলে জর্জরিত হচ্ছি। একজনে আরেকজনের পেছনে লেগে থাকছি।’
আইভী বলেন, ‘গত ১৯ বছরে কখনও কোন কাউন্সিলরের পেছনে আরেকজনকে দাঁড় করিনি, আরেকজন নেতা তৈরির চেষ্টা করি নাই। দল থেকে যার কথা আসবে সেই নেতৃত্ব দেবে। কিন্তু এ ধরনের কাজগুলো কীভাবে হচ্ছে, কে করছে তা আপনারা জানেন। সিদ্ধিরগঞ্জে সবচেয়ে বেশি গ্রুপিং, সবচেয়ে বেশি দলাদলি। কাউন্সিলররা মন খুলে কথা বলতে পারেন না। ভয়ভীতি ঝেড়ে ফেলে দেন। আমাকে অনেক সময় প্রতিবাদ করতে হয়, সত্য কথা বলতে হয়। বিবেকের তাড়নায় বলতে হয় এই জন্য বলি। আমার চাঁদাবাজি করার অভাস্যও নাই সন্ত্রাসীও করি না। আমার সারাদিনের কাজ হলো মানুষের সেবা করা। এবং মানুষকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা।’
নাসিকের ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মিয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা এহসান কবির রমজান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবুর রহমান সাউদ, নাসিকের ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইফতেখায়রুল খোকন, ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান খান, ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিএম সাদরিল, ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুর উদ্দিন মিয়া, ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মাকসুদা মোজাফফর, ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম, ১০, ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মিনোয়ারা বেগমসহ স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা, সমাজসেবক ও বিশিষ্টজন উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশের রাজনীতিতে ব্যাপকভাবে আলোচিত সমালোচিত বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এবং মুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার মোহাম্মদ আলী ২৪ মার্চ বৃহস্পতিবার বিকালে জেলা প্রশাসনের দপ্তরে একটি প্রত্যায়ন পত্র দাখিল করেন । যে প্রত্যায়ণ পত্রে উল্লেখ ছিলো, “মুক্তিযুদ্ধকালীন চিহ্নিত রাজাকার গোলাম রব্বানী খান শান্তি কমিটির কেউ নয়, রাজাকার ছিলেন না।”
সাম্প্রতিক সময়ে নারায়ণগঞ্জের রাজনতিতে এমন ঘটনায় তোলপাড়ের সৃস্টি হয় সর্বত্র ।
মোহাম্মদ আলীর এমন কান্ডে নগরীর অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, নানা অপকর্মের হোতা রাইফেল ক্লাব ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বার এন্ড কমার্স নেতা খালেদ হায়দার খান কাজল কে রাজাকার পুত্রের তকমা থেকে রক্ষা করতে একটি প্রভাবশালী পরিবারের সদস্যদের জোড়ালো তদ্বির ও আকার ঈঙ্গিতে নানাবাবে হুমকির কারণেই এমন প্রত্যায়ণপত্র দিতে বাধ্য হয়েছেন মোহাম্মদ আলী ।








Discussion about this post